Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

পাশে থাকুন, সুন্দর ঢাকা পাবেন

দুই বছরপূর্তি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল হক

প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪১ পিএম, ১৬ মে, ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার : মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে দাবি করে ভিন্ন ঢাকা দেখতে সবাইকে পাশে চেয়েছেন মেয়র আনিসুল হক। গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মেয়র বলেন, আমি বলব, থাকুন আমাদের সঙ্গে। ভিন্ন ঢাকা আপনারা দেখতে পাবেন। প্রতি মাসেই বদলে যাবে ঢাকা। অনুষ্ঠানের শুরুতে গত দুই বছরে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন আনিসুল হক। স্বাগত বক্তব্য মেয়র জানান, ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য এটা তিনি মানতে চান না। অনেকে বলে ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য। আমি এর সঙ্গে একমত নই। কারণ ঢাকা শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯২ হাজার লোক বাস করে। এত লোককে ম্যানেজ করা কঠিন। ঢাকা একটি ভিন্ন ধরনের শহর। এক সময় জীবনমানে নিচের দিক থেকে প্রথম সারিতে ছিল, এখন একটু উন্নতি হয়েছে। ২০১৫ সালের ৬ মে ঢাকা উত্তরের মেয়র হিসেবে শপথ নেন আনিসুল হক। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব বুঝে নেন ১৪ মে। দুই বছরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বলে জানান মেয়র। আনিসুল হক বলেন, রাজধানীতে বিলবোর্ড ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে অনেক মাস্তান ছিল, তাদের তাড়িয়েছি। যাদের কারণে আমাদের বিলবোর্ডে হাত দেয়া যেত না। ঢাকার সড়কে ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানোর কারণে অনেক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এ পর্যন্ত ২০ হাজার বিলবোর্ড ও ১ লাখ ৭৫ হাজার ব্যানার এবং ফেস্টুন অপসারণ করেছি। মেয়র বলেন, আমরা দুই বছরে অনেক কাজ করেছি তা বলছি না, তবে একটা পরিকল্পনায় পৌঁছেছি। এই দুই বছরে আমি আমার পরিবার (ডিএনসিসি) চিনেছি, কাউন্সিলর-কর্মকর্তাদের চিনেছি। ঢাকা একটি ভিন্ন ধরনের শহর। বিশ্বের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ঢাকা শহর আসলে কত বড়? সিঙ্গাপুরের আয়তন ৭১৮ বর্গফুট, টোকিওর আয়তন ২ হাজার ১৮৮ বর্গকিলোমিটার। যেখানে বাস করছেন ১ কোটি ২২ হাজার মানুষ। ক্যানবোলার আয়তন ৮১৪ বর্গকিলোমিটার। বাস করছেন ৩ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ। মস্কোর আয়তন ২ হাজার ১৮৩ বর্গকিলোমিটার। লোক সংখ্যা ১ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার। সেখানে ডিএনসিসি’র আয়তন মাত্র ৮৩ বর্গকিলোমিটার। এতে বাস করেন ৯০ লাখ মানুষ। আনিসুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত মোট ৫৪টি স্থায়ী স্থাপনা, ৪৫০টি স্থায়ী অবকাঠামো, ২ হাজার ৭৬৭ অস্থায়ী অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হয়েছে। জমি, ফুটপাত ও ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার বর্গফুট। আমরা বুঝে না বুঝেই কিছু সাহসী কাজ করে ফেলেছি। ১০টি স্থানে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করেছি। বিভিন্ন দূতাবাসের দখলে থাকা ফুটপাত উদ্ধার করছি। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সমিতি আমাদের জন্য অসাধারণ কাজ করছে। কোনো কোনো স্থানে আমরা যা না করেছি, তারা তার চেয়ে বেশি করেছে। ডিএনসিসি এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। মেয়র বলেন, আমরা ৫০টির মতো এসটিএস নির্মাণ করেছি। যাতে বড় ময়লাগুলো এখান থেকে ল্যান্ড ফিলে নিয়ে যায়। কয়েকটি ওয়ার্ডে বেসরকারিভাবে দেয়া হয়েছে। তারা পরিষ্কার করছে। ভেহিকল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করেছি। ফলে একটি যানবাহন সিটি কর্পোরেশনের বাইরে গেলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা সে সিস্টেম করে দিয়েছি। প্রশাসনিকভাবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি। ফুটপাত বেদখল বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, এ দেশে গরিব হকারদের পাশাপাশি বড়লোক হকারও আছেন। যারা বছরের পর বছর জনগণের জায়গা দখল করে রেখেছিলেন। আমরা অনেক জমি ও ফুটপাত উদ্ধার করেছি। আমরা ফাইভস্টার হোটেলের মতো ১২টি বাথরুম তৈরি করেছি। ডিএনসিসির নগর অ্যাপ প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, আমরা একটি নগর অ্যাপ করেছি। এখানে সব কিছু রয়েছে। আপনি চাইলে কোথায় কী আছে তা সহজেই জানতে পারবেন। এর সঙ্গে পুলিশের একটা সংযোগ থাকবে। চাইলে ওয়াইফাইর মাধ্যমে আপনাকে ট্রাক করতে পারবে। আনিসুল হক বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ১১টি ইউলুপ স্থাপন ও আরও এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩০০ রাস্তার উন্নয়ন কাজ করা হবে। এছাড়া রাজধানীতে ৪ হাজার আধুনিক বাস নামানো হবে। ঢাকায় ২৬৪টি ভেজালবিরোধী অভিযানে ৭৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায়সহ এক হাজার সিসিটিভি লাগানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে মশা নিধন করতে গিয়ে বেশি বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। এই ব্যাপারটি নিয়ে মেয়র বলেন, মেয়রের বাড়িতেও মশা আক্রমণ করে। মশক নিধনের জন্য আমরা তৎপরতা আরও বাড়িয়েছি। এবার বাজেটে ২৫ কোটি টাকা রেখেছি মশক নিধনের জন্য। মতবিনিময় সভায় দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মনজুরুল আহসান বুলবুল, চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, দৈনিক ইনকিলাবের প্রধান প্রতিবেদক রফিক মুহাম্মদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে মেয়র কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলে তিনি হাস্যরস করে বলেন, মাননীয় মেয়র আপনার পেছনে দুটো শক্তি আছে। আপনি এগিয়ে যান। এ সময় সভায় উপস্থিত অনেকেই হেসে উঠেন। জবাবে আনিসুল হক বলেন, আমার দুটো শক্তি। এক, আমি যেহেতু রাজনৈতিক ম্যান্ডেড নিয়ে নির্বাচিত হয়েছি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে চলতে হয় সেহেতু রাজনীতি আমার একটা শক্তি। অন্য শক্তি হচ্ছে, আমার জনগণ এবং আপনারা। আপনারাই আমার দ্বিতীয় শক্তি। এর বাইরে আমার কোনো শক্তি নেই। উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও সংস্কৃতিগত তেমন উন্নয়ন হচ্ছে না বলে জানান বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, মানসিক উন্নয়নের জন্য যে অবকাঠামো দরকার তা দেখছি না। আমি মনে করি, অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সংস্কৃতি, নতুন প্রজন্মের মানসিক বিকাশের জন্য কয়টি মাঠ, পাঠাগার, ব্যায়ামাগার হবে, মানসিক উন্নয়নের জন্য কি কি কাজ করবেন গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম। তবে খালগুলো ক্লিন থাকবে কি না তা মেয়রের কাছে জানতে চান তিনি। ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত অভিযোগ করেন, সাতরাস্তা এলাকায় প্রধান সড়ক থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড সরালেও পাশের সড়কগুলো ট্রাকের দখলে চলে গেছে। তেজগাঁও এলাকার প্রায় সব সড়ক যানবাহনের দখলে চলে গেছে। কারওয়ানবাজার ঠিক সময়ে সরানো সম্ভব হবে কি না জানতে চান তিনি। এসব প্রশ্নে মেয়র এ বছরের মধ্যেই কারওয়ানবাজার থেকে কাঁচাবাজার সরিয়ে নেওয়া হবে জানিয়ে বলেন, কারওয়ানবাজার ৫০ বছরের বিষফোঁড়া। এটা সরিয়ে নিতে গত এক বছর ধরে আলোচনা চলছে। কারওয়ানবাজারের ৭০ ভাগ এলাকা খালি হয়ে যাবে। রাস্তাঘাট, ড্রেন তৈরির চাপ অনেক বেশি থাকায় এখনও সাংস্কৃতিক খাতে সেভাবে নজর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান আনিসুল হক। তবে রাজাবাজারে একটি পাঠাগার করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, মিরপুরের শাহআলী এলাকায় আরেকটি পাঠাগার করা হবে। ঢাকার খালগুলো দখলমুক্ত রাখার বিষয়ে মেয়র বলেন, খালগুলো দেখার কাজ সিটি কর্পোরেশনের নয়। ওয়াসা এবং জেলা প্রশাসনের। এ কাজের জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে চাপ তৈরি করা হচ্ছে। খাল দখল মোটামুটিভাবে বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।



 

Show all comments
  • Rari Akber ১৬ মে, ২০১৭, ৪:১৭ এএম says : 0
    ১৯৭১এর পরে যত মেয়র এসেছেন তাদের ভিতর এখন কার দুই মেয়র অন্যতম। তবে মেয়র সাহেব যে আই ওয়াস দিয়েছেন এগুল নাকি সব শেখ হাছিনার অবদান। দেশটা তো কার ও একার নয় ? পরিকল্পনা বিহীন উন্নয়ন উন্নতি নয় । ঢাকার উন্নয়নের জন্য উন্নতশীল দেশের পরামর্ষ নেওয়া উচিত । উয়রোপ অনেক পুরাতন দেশ আর ভারত, যে দেশের ৫০ ভাগ লোক টয়লেট করে আদিম জুগের মত। আধুনিক দেশের পরিকল্পনা অর্জন করাটাই উন্নয়ন বলে আমি মনে করি। ঢাকার সমষ্টিগত সমস্যা সমাধানের জন্য টোকিও শহরের সাহায্য নিন মেয়র আনিসুল হক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংবাদ সম্মেলন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ