Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোন ঈদের পর বিএনপির আন্দোলন

জানতে চান জাফরুল্লাহ চৌধুরী

| প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পুতুপুতু করে কাজ হবে না-বিএনপিকে কঠোর হতে নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার পর গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীবিএনপিকে মাঠে নামার তাগিদ দিয়েছেন। কোন ঈদের পর বিএনপির ঘোষিত আন্দোলন জানতে চেয়ে তিনি বলেন, ভালো ভালো কথা শেষ। এখন কাজ করতে কবে মাঠে নামবেন? না এবারও বলবেন ঈদের পর? আপনারা আর কত অজুহাত দেবেন?
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনায় ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ভিশন-২০৩০ নিয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি দলটির কাছে এ প্রশ্ন রাখেন। খালেদা জিয়ার তার অনেক বক্তব্যে র‌্যাব বিলুপ্তির কথা বললেও বিএনপির ভিশন-২০৩০তে এ বিষয়ে কোনো কথা না থাকারও সমালোচনা করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এছাড়াও, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও বিএনপির ভিশনে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই বলে জানান তিনি।
জাফরুল্লাহ বলেন, ভিশনে একইভাবে ভারতীয় আগ্রাসন, অত্যাচার, নির্যাতন, বিশেষ করে দেশে ‘র’য়ের কর্মকান্ডের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেবেন সে বিষয়েও কিছু বলেননি। বিএনপির ভিশন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পরীক্ষার হলে নকল ছাড়া সব নকল করা ভালো। আপনারা বলছেন, বিএনপি অনুকরণ করেছে। খারাপ কিছু অনুকরণ না করা ভালো, ভালোর অনুকরণ করলে দোষের কিছু নেই। বিএনপির ভিশন-২০৩০ নিয়ে রাউন্ড টেবিল আলোচনায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দলটিতে নারীদের আরও বেশি করে নেতৃত্বে আনার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান কিংবা বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমানকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য করার জন্য চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি পরামর্শ দেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে উনি (খালেদা জিয়া) ছাড়া আর কোন নারী নাই। ‘ভিশন- ২০৩০’ এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু এ বিষয়টি পরিবর্তন হতে হবে। কারণ বিএনপিতে মহিলা আনতে না পারলে আগামী নির্বাচনে জেতার আশা নেই।
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন ২০৩০ কাগজে লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে আরও অনুশীলন করতে হবে। সম্ভব হলে সারাদেশে বিএনপির কর্মীদের মাধ্যমে বৃহত্তম জনগণের মধ্যে এই ভিশন লেখাটি তুলে ধরতে হবে। আর যদি সেই ইচ্ছা,  ধৈর্য্য, মানসিকতা এবং দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকে সেক্ষেত্রে বিএনপির ঘোষিত ভিশন বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ মাধ্যমে যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপূরক। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশে মত প্রকাশের সুযোগ দিনে দিনে সংকুচিত হয়ে আসছে। গণতন্ত্র নাই। দেশে গণতন্ত্র অত্যন্ত প্রয়োজন। দেশের জনগণের মধ্যে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা রয়েছে। তিনি বলেন, সময় এসেছে আমাদের সবাইকে এখন জাতি হিসেবে সুসংগঠিত হবার। আর সেক্ষেত্রে প্রথম প্রয়োজন হবে দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন।
বিএনপিকে মাহমুদর রহমান মান্নার জিজ্ঞাসা জামায়াত কি জোটে থাকবেই
স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েই বিএনপি চলবে কি না তা জানতে চেয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ এ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ থাকা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে রাষ্ট্রপরিচালনায় বিএনপি ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ভিশন-২০৩০ নিয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন। সেন্টার ফর ন্যাশনাল অ্যান্ড রিজিওনাল রিসার্চ স্টাডিজ নামে একটি সংগঠন এই আলোচনার আয়োজন করে।
আলোচনায় মান্না বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভিশন- ২০৩০ ঘোষণায় বলেছেন- বিএনপি আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনায় গেলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কর্মকান্ডকে যথাযথভাবে সম্মান ও গুরুত্ব দেয়া হবে। প্রশ্ন থেকে যায়-যদি বিএনপি আগামী দিনে নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কী হবে? রাজনৈতিক জোটে থাকা জামায়াত ইসলাম তো থাকবেই।
তিনি বলেন, যাদের (জামায়াতে ইসলামী) এখন যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে বিচার করা হচ্ছে। তিনি (খালেদা জিয়া) এ বিষয়টি স্পষ্ট করেননি।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রেখে মান্না বলেন, যদি ভিশনের কথা বলেন, আমি এই প্রশ্ন করতে পারি যে, ৮ বছর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর শাসন দেখবার পরে, তার বিগ্রহ দেখবার পরে আপনারা বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করতে হবে। কিন্তু তিন বার প্রধানমন্ত্রী তো আপনিও ছিলেন। এই ক্ষমতা আপনিও এক্সারসাইজ করেছেন। তখন বুঝতে পারেন নাই যে, এটা আপনাকে স্বৈরশাসক বানিয়ে দিতে পারে। তখন তো পরিবর্তন করা হয়নি।
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব প্রসঙ্গে মান্না বলেন, আপনি ভিশনে ভালো কথা বলেছেন। সংখ্যানুপাতিক একটা প্রতিনিধিত্ব চান। কিন্তু উচ্চকক্ষ বলবার পরেও কেনো বললেন উচ্চ কক্ষ নিয়ে আরো চিন্তাভাবনা করা হবে। এতোদিন ধরে আলাপ আলোচনা করবার পরেও এটা স্থগিত কেনো? এ্যানি প্রোবেøম উইথ দি স্ট্রাকচার? ভিশন যখন বলেন, তখন অন্তত আপনি আগামী বছর চিন্তা করেই তো দিয়েছেন। আমি প্রস্তাব করবো এটা রাখবার পক্ষে। যখন আপনি ভিশন দেবেন, ভিশনারী হবেন, সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইবেন। তখন আপনাকে দৃঢ়চিত্ত হতে হবে। দোদুল্যমান মানুষগুলোকে বুঝিয়ে সঙ্গে আনতে হবে। অথবা দোদুল্যমান মানুষগুলোকে বলতে হবে তুমি পথ ছেড়ে দাও, আমি এগিয়ে যাই। নানা সমালোচনা করলেও এরকম একটা পরিকল্পনা দেয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদও জানান মান্না।
নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক বলেন, আওয়ামী লীগ ২০২১ সালকে টার্গেট করে ভিশন ঘোষণা করে ছিল তখন বলেছিলাম ভালো হয়েছে। স¤প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে ২০৩০ টার্গেট করে ভিশন  ঘোষণা করা হয়েছে। এটা ভালো দিক অন্তত এই মর্মে যে, দেশের প্রধান দুটো বড় রাজনৈতিক দল নিজ থেকে জবাবদিহিতার ক্ষেত্র তৈরি করছে। ‘ভিশন ঘোষণা করায় খালেদা জিয়াকে ভিশনারী  নেতা বলতে পারবো কি না তা বিবেচনা করতে হবে’ বলেও মন্তব্যও করেন মান্না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ