Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অক্সিডেন্টাল কর্তৃপক্ষ শেয়ার হোল্ডারদের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে

জলবায়ু ইস্যুতে অক্সিডেন্টাল শেয়ার হোল্ডারদের প্রস্তাব পাস

| প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির ব্যবসায় জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিরূপণের প্রস্তাব দিয়েছেন। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে তারা এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস করেন। যুক্তরাষ্ট্রের তেল-গ্যাস খাতের কোনো বড় কোম্পানিতে প্রথমবারের মতো এ ধরনের কোনো প্রস্তাব পাস হলো। অক্সিডেন্টাল কর্তৃপক্ষ শেয়ারহোল্ডারদের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। শেয়ারহোল্ডাররা ২০১৮ সাল থেকে অক্সিডেন্টালের বার্ষিক প্রতিবেদনে পরিবেশ-সংক্রান্ত দৃশ্যপট সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে  বৈশ্বিক উষ্ণতা সীমিত রাখতে গৃহীত প্রয়াসগুলো অক্সিডেন্টালের ব্যবসায় যে সম্ভাব্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, তা নিরূপণ করতে হবে। নতুন প্রস্তাবের পক্ষে কত শতাংশ শেয়ারহোল্ডার ভোট দিয়েছেন, অক্সিডেন্টাল এখনো সে তথ্য জানায়নি। তবে এ প্রস্তাবের পক্ষে ব্যাপক সমর্থনের কথা কোম্পানি স্বীকার করেছে। অক্সিডেন্টাল বলেছে, চার কার্যদিবসের মধ্যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি) শেয়ারহোল্ডারদের সমর্থন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবে। অক্সিডেন্টালের চেয়ারম্যান ইউজিন এল. ব্যাচহেল্ডার বলেছেন, আমরা এ ইস্যুতে শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় অব্যাহত রাখব। জলবায়ু-সংক্রান্ত ঝুঁকি ও সুযোগের বিষয়ে কোম্পানির ভাবনা ও পরিকল্পনার আরো তথ্য প্রকাশ করা হবে। শেয়ারহোল্ডারদের পাসকৃত প্রস্তাবটি অক্সিডেন্টাল মানতে বাধ্য নয়। ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ও পূর্বাভাসে জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য পরিবেশগত ঝুঁকি উল্লেখ করতে যুক্তরাষ্ট্রের তেল ও গ্যাস উত্পাদক কোম্পানিগুলোর ওপর শেয়ারহোল্ডারদের চাপ ক্রমে বাড়ছে। যে কোম্পানিগুলোকে সবচেয়ে বেশি চাপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, অক্সিডেন্টাল তার একটি। ওয়েস্ট টেক্সাস ও নিউ মেক্সিকোর পারমিয়ান অববাহিকায় তেল উত্তোলন করছে অক্সিডেন্টাল। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কলম্বিয়া, ওমান ও কাতারসহ কয়েকটি দেশে খননকাজ করছে কোম্পানিটি। অক্সিডেন্টাল শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে নতুন প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল নাথান কামিংস ফাউন্ডেশন ও ওয়েজপাথ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট। নাথান কামিংস ফাউন্ডেশন বলেছে, গত শুক্রবারের ভোট তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে যে, বিনিয়োগকারীরা জলবায়ু ইস্যুগুলোকে বেশ গভীরভাবে দেখছে। নাথান কামিংস ফাউন্ডেশনের পরিচালক (করপোরেট অ্যান্ড পলিটিক্যাল অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি) লরা ক্যাম্পোস অক্সিডেন্টাল শেয়ারহোল্ডারদের ভোটাভুটিকে ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরো বলেন, এটা প্রথম ভোট। কিন্তু এটাই শেষ হচ্ছে না। অক্সিডেন্টাল পরোক্ষভাবে এ ভোটের বিপক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিল। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিতে শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি আহŸান জানায় কোম্পানিটি। প্রচারণায় বলা হয়, অক্সিডেন্টাল এরই মধ্যে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় জলবায়ু-সংক্রান্ত ইস্যুগুলোর আপেক্ষিকতা সম্পর্কে আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ তথ্য প্রকাশের এবং জলবায়ু-সংক্রান্ত ঝুঁকি ও সুযোগকে কোম্পানির দৃশ্যপট-পরিকল্পনা প্রণয়নে খোলাখুলিভাবে সংযোজনের বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক ব্ল্যাকরক ইনকরপোরেশন জলবায়ু-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এতে আভাস মিলছে, আর্থিক ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে নতুন করে ভাবছে। কারণ এবারই প্রথমবারের মতো ব্ল্যাকরক জলবায়ু ইস্যুতে শেয়ারহোল্ডারদের এমন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে, যেখানে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট প্রস্তাবের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। সেরেসের কার্বন অ্যাসেট রিস্ক বিভাগের পরিচালক শানা ক্লিভল্যান্ড অক্সিডেন্টাল শেয়ারহোল্ডারদের প্রস্তাব পাসের ঘটনাকে বড় ধরনের জয় বলে অভিহিত করেছেন। বোস্টনভিত্তিক অলাভজনক সংগঠন সেরেস টেকসই ব্যবসা সংস্কৃতির পক্ষে কাজ করছে। সেরেস বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে দেয়া প্রস্তাবের একটি ডাটাবেজ সংকলন করেছে। প্রথম দিকে শেয়ারহোল্ডারদের এ ধরনের প্রস্তাব খুব বেশি সমর্থন পায়নি। ২০১১ সালে অক্সিডেন্টাল শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির পর্ষদে একজন স্বতন্ত্র পরিবেশ বিশেষজ্ঞকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন। মাত্র ৫ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল ওই প্রস্তাব। গত বছর শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষ থেকে জীবাশ্ম সম্পদের ঝুঁকি সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সামান্য ব্যবধানে হেরে গেলেও প্রস্তাবটি ৪৯ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারের সমর্থন পেয়েছিল। শানা ক্লিভল্যান্ড বলেন, অক্সিডেন্টালের ভোটে যে বার্তা মিলছে তা হলো, রাজ নৈতিক পালাবদলের পাশাপাশি বাজারসংশ্লিষ্ট শক্তিগুলোও জ্বালানি রূপান্তরের পথে হাঁটছে। এক্সন মবিল, রয়্যাল ডাচ শেলসহ বড় কয়েকটি তেল কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের সামনে জলবায়ু-সংক্রান্ত ঝুঁকি গবেষণার তথ্য তুলে ধরছে। অবশ্য এসব কোম্পানি গবেষণার সব তথ্য প্রকাশ করছে না। কিছু ক্ষেত্রে পরিবেশকর্মীরা এসব করপোরেট গবেষণার উপসংহার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কোনো কোনো গবেষণায় এমনও বলা হয়েছে যে, ভবিষ্যতে কার্বন নিঃসরণ নাটকীয়ভাবে হ্রাসের উদ্যোগ নিলেও কোম্পানিগুলোর ব্যবসা তেমন ঝুঁকিতে পড়বে না। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে শেয়ারহোল্ডারদের অব্যাহত চাপের মুখে রয়েছে এক্সনসহ কয়েকটি কোম্পানি। চলতি মাসের শেষ দিকে এক্সন ও শেভরনের বার্ষিক সভায় শেয়ারহোল্ডাররা কয়েকটি প্রস্তাবে ভোট দেবেন। একটি প্রস্তাবে এক্সনকে নতুন প্রযুক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক আইন কোম্পানির সম্পদে কী প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। শেভরন শেয়ারহোল্ডারদের একটি প্রস্তাবে কোম্পানিকে লো-কার্বন ইকোনমিতে রূপান্তরের কৌশল প্রণয়নের কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। অক্সিডেন্টালের মতো এক্সন ও শেভরনও শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়ার আহŸান জানিয়েছে। দুই কোম্পানি দাবি করেছে, তারা সতর্কভাবে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে এবং এরই মধ্যে এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তথ্য প্রকাশ করেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ