পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উবায়দুর রহমান খান নদভী : দুর্বোধ্য পরিস্থিতি। অকল্পনীয় আবহাওয়া। অপরিচিত ঝড়ো হাওয়া, বর্ষণ, রোদতাপ। কোনোদিন কেউ শোনেনি এমন কিছু ঘটনা। সামুদ্রিক নিম্নচাপে প্রবল বর্ষণ। পানিবন্দী বন্দরনগরী। রাজধানীতে জলজট। কিন্তু জানালা খুলতেই গরমের ঝাপটা। দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে, মোজাইক, টাইলস, পাটাতন সব ঘেমে একসা। বারবার মোছামুছি করেও বিন্দু বিন্দু ঘাম। স্যাঁতস্যাঁতে পিচ্ছিল ঘিনঘিনে ভাব। এমন কি কেউ কোনোদিন সহসা দেখেছে। দেশের হাওরাঞ্চলে নজিরবিহীন ধ্বংসলীলা। অতীতে সেখানে ২০ ভাগ, ৩০ ভাগ ফসলহানি ঘটেছে। কৃষক তা খেয়ে না খেয়ে কাটিয়ে উঠেছে। গরু, ঘরের টিন বা জমি বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর এ বছর দেশের ৬ জেলার হাওরবাসী প্রায় ২ কোটি মানুষ শতভাগ ফসল অকাল পানিতে শেষ হয়ে যাওয়ায় দুঃখের সায়রে পড়ে গেছে। ‘সায়র’ শব্দটিই ভাটির আঞ্চলিক উচ্চারণে হয়েছে ‘হাওর’। হাওরের লোকেরা বিগত ৫০ বছরের মধ্যে এত বড় ক্ষতির সম্মুখীন আর কোনো দিন হয়নি। সরকার ও সামর্থ্যবান নাগরিকদের উচিত এসব মানুষের মধ্যে যারা প্রকৃতই অসহায় তাদের এক বছরের খাদ্য, ওষুধ, শিক্ষা ও কৃষির ব্যয়টুকু বহন করা। কারণ এরাই বর্তমানে বেশি বিপদগ্রস্ত। দেশের মোট খাদ্য উৎপাদনের ৬ ভাগের একভাগ আসে এই হাওর অঞ্চল থেকে। দুঃখের বিষয় হলো, এবার ধানের পাশাপাশি মাছ ও হাঁসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক।
একই ধরনের ঘটনা চলনবিলেও দেখা গেছে। উজানের পানি সময়ের আগে অধিক মাত্রায় বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে, বাঁধ উপচে এবং ভেঙে। সাথে বয়ে এনেছে ক্ষতিকর রসায়ন ও বর্জ্য। রংপুর অঞ্চলে অকালে ধান পঁচছে। চিটা হচ্ছে অর্ধেক। দেশের মানুষ বাঁচবে কেমনে, ভাবছে। ভয় ও শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ছে ভুক্তভোগীদের মনে।
অযৌক্তিকভাবে চালের দাম গত ক’মাস ধরেই বাড়ছিল। বাণিজ্য ও খাদ্য বিভাগ বলতেও পারছিল না কারা কোন উদ্দেশ্যে সিন্ডিকেট বানিয়ে বাড়াচ্ছিল ধান-চাল ও অন্য কিছু নিত্যপণ্যের দাম। এখন তো অকাল পানি ও ফসলহানির কারণ যোগ হয়েছে। দেশের অন্য বহু ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে অসম্ভব দীর্ঘসূত্রতা। বারবার ব্যয় বৃদ্ধি। ক’দিন আগে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী একটি কথা বলেছেন বড়ই হতাশা ও খেদ নিয়ে। বলেছেন, দেশে উন্নয়নের জন্য এত বাজেট দেয়া হয়, বড় বড় প্রকল্প গৃহীত হয় কিন্তু কোনো কাজেই যেন বরকত হয় না। মন্ত্রী আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু সাহেব ‘বরকত’ শব্দটি বলায় আমার বেশ ভালো লেগেছে। আসলে বড় বড় কাজ, লক্ষ কোটি টাকা, অসংখ্য প্রকল্প, অগণিত কর্মযজ্ঞ সবকিছুর পরও পরিবেশ যেন বদলাচ্ছেই না। এর কারণ তিনি ধরতে পেরেছেন। বলেছেন, বরকত হচ্ছে না।
দেশের শতকরা ৯৩ ভাগ মানুষ ইসলামে বিশ্বাসী। গোনাহ, অন্যায়, দুর্নীতি, জুলুম যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন মানুষের অনুকূল পরিবেশ বিরূপ আকার ধারণ করে। পাপাচার ও অনৈতিক বিষয় যখন বুক ফুলিয়ে চলে তখন আল্লাহর গজব নাজিল হয়। দেখতে শুনতে কাজের অভাব না হলেও সে কাজে বরকত থাকে না। সেদিন রাজধানীর এক নামী-দামি হোটেলে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আলোচকরা বলেছেন, উন্নয়ন অনেক হচ্ছে তবে দুর্নীতি অনিয়মের তো কোনো শেষ নেই। বড় বড় কেলেঙ্কারির কোনো প্রতিবিধান হলো না। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়া হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরি হয়ে গেল। বিদেশে পাচার হয়ে গেল লাখো কোটি টাকা। অবিশ্বাস্য রেটে রাস্তাঘাট, ব্রিজ হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে টাকা-পয়সার হরিলুট হলেও বিদ্যুৎ এখন অনেকাংশেই বিদেশনির্ভর। এসব কে দেখবে?
সর্বশেষ গত পরশু প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে বড় যে সতর্ক বার্তাটি দলীয় এমপিদের দিয়েছেন সেটি খুবই প্রণিধানযোগ্য। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে তিনি কারো দায় নেবেন না। এমপিদের নিজ জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে জনগণের ভোটে সংসদে আসতে হবে। এর আগে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, ক্ষমতায় যেতে না পারলে অর্জিত টাকা-পয়সা নিয়ে দেশে বসবাস করা যাবে না। নেতাদের বিদেশে পালাতে হবে। এসব সতর্কবাণী থেকে সংশ্লিষ্টদের অনেক কিছুই বুঝে নিতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, মানুষ হিসেবে আমাদের ভুলত্রæটি হতেই পারে। এ জন্যই গজব আসে। বরকত চলে যায়। মজলুম মানুষের হাহাকার, সুখ, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বিনাশ করে। শাসক ও জনগণ সকলেরই উচিত তওবা করা। তওবা অর্থ ভুল সংশোধন করে আল্লাহর আনুগত্যের পথে ফিরে যাওয়া। সংশ্লিষ্টদের অধিকার তাদের ফিরিয়ে দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয়া। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এ কথাটিই বলেছেন, পৃথিবী ও সমুদ্রে যত বিপর্যয় দেখা যায় সবই মানুষের কৃতকর্মের ফল। তাদের অন্যায় ও পাপের কিছু সাজা আমি তাদের দিয়ে থাকি যাতে তারা আমার দিকে প্রত্যাবর্তন করে, আর তওবা-ইস্তেগফার করে। নবী করিম (সা:)-এর হাদিসে এ মর্মে বলা হয়েছে, তোমাদের ওপর আপতিত গজব থেকে রক্ষার জন্য তোমরা বেশি বেশি ইস্তেগফার করো। ধ্বংস, বিপর্যয়, বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য তোমরা অসহায় বিপন্নদের সহায়তা করো। কেননা, অভুক্তদের খানা খাওয়ানো, অসহায়দের ত্রাণ ও দান-সদকা বালা-মুসিবত রোধ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।