ফারুক হোসাইন : দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসাথে কোন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কত ভর্তি ফি নিতে পারবে সেটিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফি’র বাইরে কোনভাবেই অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না। একইভাবে ভর্তির জন্য কোন বাছাই বা ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারবেনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। কেবল শিক্ষার্থীদের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই ভর্তি করতে হবে। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে নীতিমালার কোনরূপ ব্যতয় হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি বাতিল ও এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ৯ মে থেকে সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই থেকে।
বিগত কয়েক বছরের মত এবারও মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়ম রেখে গতকাল (রোববার) নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে, যাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ি, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। অনলাইনের (www.xiclassadmission.gov.bd) পাশাপাশি টেলিটক মোবাইল থেকে এসএমএস করেও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করা যাবে। অনলাইনে ১৫০ টাকা ফি জমা দিয়ে সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে পছন্দক্রমের ভিত্তিতে আবেদন করা যাবে। অনলাইনে কীভাবে আবেদন করা যাবে সে বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড নির্দেশনা জারি করবে। আর এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করতে প্রতিটি কলেজের জন্য ১২০ টাকা ফি দিয়ে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন করা যাবে। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবে তার মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর মেধা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি মাত্র কলেজে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।
ভর্তি প্রক্রিয়ার সূচি: অনলাইনে এবং এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন গ্রহণ ৯ মে থেকে শুরু হয়ে চলবে ২৬ মে পর্যন্ত। যারা ফল পুনঃনিরীক্ষণার আবেদন করেছে, তাদেরকেও এই সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে। ২৭ থেকে ২৯ মে শিক্ষার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে। পুনঃনিরীক্ষণে যাদের ফল পরিবর্তন হবে তারা ৩০ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে। প্রথম পর্যায়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ৫ জুন। প্রথম তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ৬ থেকে ৮ জুন সিলেকশন নিশ্চিত (যে কলেজের তালিকায় নাম আসবে ওই কলেজেই যে শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন- তা এসএমএসে নিশ্চিত করা) করতে হবে। মাইগ্রেশনের আবেদন (অপশন প্রদান) এবং নতুন আবেদন করা যাবে ৯ থেকে ১০ জুন। দ্বিতীয় পর্যায়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১৩ জুন এবং তাদের সিলেকশন নিশ্চিত করতে হবে ১৪ থেকে ১৫ জুন। দ্বিতীয় পর্যায়ের পর পুনরায় মাইগ্রেশনের আবেদন ও নতুন আবেদন গ্রহণ করা হবে ১৬ থেকে ১৭ জুন। তৃতীয় পর্যায়ের ফল প্রকাশ করা হবে ১৮ জুন এবং সিলেকশন নিশ্চিত করতে হবে ১৯ জুন। সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চিত (পছন্দের কলেজ নির্ধারণ) হওয়ার পর দুই দফায় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রথম পর্যায়ে ২০ জুন থেকে ২২ জুন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৮ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত। ভর্তি কার্যক্রমের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই থেকে।
ভর্তি প্রক্রিয়া: এবছর সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য চলতি বছর মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ২০১৫ ও ২০১৬ সালেও মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিভাগীয় সদরের কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজের ৮৯ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অবশিষ্ট ১১ শতাংশ আসনের মধ্যে ৩ শতাংশ সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সদরের বাইরের এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য, ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্ত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্দের সদস্যদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এছাড়া এবার থেকে প্রবাসীদের সন্তান এবং বিকেএসপির শিক্ষার্থীদের জন্য শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাছাই প্রক্রিয়া: সমান জিপিএ প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে গ্রেড পয়েন্ট ও প্রাপ্ত নম্বর সমতুল্য করে হিসাব করতে হবে। বিজ্ঞান শাখা থেকে উত্তীর্ণরা যে কোনো বিভাগে ভর্তি হতে পারবে। মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণরা মানবিকের পাশাপাশি ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি হতে পারবে। ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ভর্তি হতে পারবে। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের মেধাক্রম সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত অথবা জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় আনা হবে। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের ভর্তির ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলায় অর্জিত গ্রেড পয়েন্ট বিবেচনা করা হবে। এক বিভাগের প্রার্থী অন্য বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট গ্রেড পয়েন্ট একই হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে অর্জিত পয়েন্ট বিবেচনায় নেওয়া হবে।
ভর্তি ফি নির্ধারিত: মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশনচার্জসহ সর্বসাকুল্যে এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা এবং ঢাকা ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি ফি নেওয়া যাবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তিতে পাঁচ হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও এমপিও বর্হিভূত শিক্ষকদের বেতনভাতা দেওয়ার জন্য ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি বাবদ বাংলা মাধ্যমে নয় হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ি, উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না। দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ফি যতদূর সম্ভব মওকুফ করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনুমোদিত সকল ফি যথাযথ রশিদ প্রদানের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনুমোদিত ফি’র বেশি নেওয়া যাবে না উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ফি নিলে পাঠদানের অনুমতি, অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ এমপিও বাতিল করে ওই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।