Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চট্টগ্রাম বিএনপির

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


ঘর গোছানোর প্রক্রিয়ায় মির্জা ফখরুলকে কাছে চায় তৃণমূল
রফিকুল ইসলাম সেলিম : ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে চট্টগ্রাম বিএনপি। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি আদায় আর আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘর গোছানোর কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। একের পর পর বিপর্যয়, হামলা, মামলা আর হুলিয়ায় কাহিল বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবুও নিজেদের ‘ঘাঁটি’ পুনরুদ্ধারে এখন মরিয়া তারা। দলকে সংগঠিত করার এ প্রক্রিয়ায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কাছে চায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
ওয়ান ইলেভেন পরবর্তি রাজনৈতিক সিডর কাটিয়ে উঠার আগে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত পরাজয়। তার পর নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে মামলা, হামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিএনপি। জেল-জুলুম হুলিয়া কাঁধে হাজার হাজার নেতাকর্মী ঘর বাড়িছাড়া হয়। প্রাণ হারায় অনেকে, জীবনের তরে পঙ্গু হয় অনেক নেতাকর্মী। এত কিছুর পরও স্থানীয় সরকারের প্রায় সব নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ভাল ফলও করে। তবে এরপর থেকে সব নির্বাচনে চলে দখলের উৎসব। আর এ কারণে পেছনে পড়ে যায় বিএনপি
দলের নেতারা বলছেন তারা সরকারের জুলুম নির্যাতনে ঘর-বাড়ি ছাড়া হলেও রাজপথ ছেড়ে যাননি। পুলিশের নানা বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে রাজপথে সক্রিয় থাকার চেষ্টা অব্যাহত আছে। চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা কিছুটা বিরোধ থাকলেও মহানগরীতে বিএনপি এখন সুসংগঠিত। বাধা-নিশেষ উপক্ষো করে কেন্দ্রীয় সব কর্মসূচি পালিত হচ্ছে মহানগরে। বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে সরব রয়েছে নগর বিএনপি। পুরো চট্টগ্রামে এখন চলছে দলকে সুসংগঠিত করার কাজ। এ প্রক্রিয়া কলহ বিরোধ কিছুটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও লক্ষ্য অর্জনের পথে তা বড় বাধা নয় বলে মনে করেন দলের নেতারা।
স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ থেকে শুরু করে ২০০১সাল পর্যন্ত সবকটি জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রামে বেশির ভাগ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। আর এ কারণে চট্টগ্রামকে নিজেদের ঘাঁটি মনে করে দলটি। আগামী নির্বাচনে সে ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করতে চায় তারা। এই লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে যাবতীয় প্রস্তুতি। দলের জাতীয় কাউন্সিলে এবারও চট্টগ্রাম থেকে দলের বিপুল সংখ্যক নেতা কেন্দ্রে পদ পেয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই সাবেক মন্ত্রী এমপি।
সরকারী দল আওয়ামী লীগ তাদের জাতীয় কাউন্সিলের পরপর নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছানো কাজ শুরু করে। দায়িত্ব পেয়েই চট্টগ্রামে ছুটে আসেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রায়ই তিনি চট্টগ্রামে দলীয় কর্মসূচিতে শরিক হচ্ছেন। বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও তাদের মহাসচিবকে কাছে পেতে চান। তারা মনে করেন মহাসচিবকে কাছে পেলে তৃণমূলে আরও বেশি প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।
তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ঘুরে গেছেন। তার উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে নগর বিএনপির বিশাল কর্মী সমাবেশ হয়। তার আগে পর পর দুইদিন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ও উত্তর জেলার কর্মী সমাবেশে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কর্মী সমাবেশ পন্ড হয় দলের ভাইস চেয়াম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জেলা কমিটির আহবায়ক কারাবন্দি আসলাম চৌধুরীর অনুসারীদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে।
এই দুই নেতার বিরোধে জেলার পাশপাশি প্রায় প্রতিটি উপজেলায় বিভক্ত বিএনপি। গিয়াস উদ্দিন কাদেরকে সভাপতি আর আসলাম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের পর থেকে দুই নেতার মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত। বিগত ২০১৫ সালে জেলা কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। আসলাম চৌধুরীকে আহবায়ক আর গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে ৭৭ সদস্যের আহবায়ক কমিটি করা হয়। জাতীয় কাউন্সিলে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ভাইস চেয়ারম্যান এবং আসলাম চৌধুরীকে দলের যুগ্মমহাসচিবের দায়িত্বও দেওয়া হয়। এরপর  চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় দুই নেতার বিরোধ কমেনি।
বুধবার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে রক্তাক্ত সংঘাতের ঘটনা ঘটে। পটিয়া কেন্দ্রিক বিএনপির গাজী শাহজাহান জুয়েল গ্রæপ ও এনামুল হক এনাম গ্রæপের কর্মীদের সংর্ঘষে পন্ড হয় কর্মী সমাবেশ। তবে পটিয়ার বাইরে জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে বিএনপি সাংগঠনিক অবস্থা তেমন মজবুত না হলেও কলহ কোন্দল নেই। জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। খুবশিগগির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলায়ও ঢাকা থেকে নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান দলের নেতারা।
এদিকে দুই জেলায় গৃহবিবাদ থাকলে মহানগর বিএনপিতে কলহ বিরোধ নেই। গত কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ পাওয়া আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নগর বিএনপির সভাপতি থাকাকালে সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথে কিছুটা দূরত্ব ছিলো। এর নেতিবাচক প্রভাবও পড়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে। ডা. শাহাদাত হোসেন এখন নগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। তরুন এ দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক ভাল এবং তারা দুজনেই মহানগর বিএনপিকে সুসংগঠিত করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।
ইতোমধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় মহানগর ও থানা কমিটি গঠন করা হবে। মহানগর মহিলা দলের সম্মেলনে মধ্যদিয়ে নতুন কমিটি হয়েছে। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সহযোগি অন্য সংগঠনেও নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। দলের নেতারা জানান, খুব শিগগির বৃহত্তর চট্টগ্রামে তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছানোর কাজ শেষ করা হবে।
এদিকে ঘরগোছানোর পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে। চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে সবকটিতে বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশি রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা। প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি একঝাক তরুন নেতাও মাঠে। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী এসব নেতারা নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের সাথে তারা নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। এতে করে তৃণমুলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে  আসছে। দলের নেতাদের অভিমত-জনমত বিএনপির পক্ষে, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্টা করা গেলে কিংবা মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে তারা ফের বিএনপিকেই বেছে নেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ