Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভোগান্তির নাম মালিবাগ-রামপুরা সড়ক

খানাখন্দে ভরা রাস্তা চলাচল অনুপযোগী : যানজটে আটকে থাকে যানবাহন

| প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : মৌচাক থেকে রামপুরা। ফ্লাইওভার, আন্ডরগ্রাউন্ড বৈদ্যুতিক লাইন ও ওয়াসার ড্রেনেজ লাইনের কাজে রাস্তার বেহাল অবস্থা। কোথাও ধূলায় অন্ধকার, কোথাও আটকে আছে পানি, কোথাওবা ড্রেনের উপচে পরা নোংরা পানিতে সয়লাব। ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। চলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। ভুক্তভোগিদের মতে, সমন্বয়হীন কাজের যাঁতাকলে সরু হয়ে গেছে রাস্তা। চলতে গিয়ে বাধার সম্মুখিন হচ্ছে সব ধরনের যানবাহন। ফলাফল সকাল-বিকাল ভয়াবহ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে গাড়ি। তাতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছে নগরবাসী। মালিবাগ- রামপুরা রাস্তা ছাড়াও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নতুন বাজার, বাড্ডা থেকে রামপুরা পর্যন্ত রাস্তার বেহাল অবস্থায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নগরবাসী।
২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি শুরু হয় মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। চুক্তি অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের নকশা সংশোধনের জন্য নির্মাণ কাজের সময়সীমা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ভোগান্তির শুরু সেই ২০১৩ সাল থেকেই। শুরুতে রাস্তা বন্ধ করে মাটি খোঁড়ার কারণে সড়ক বন্ধ। মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন সেই সব দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, তারপরেও আমরা দুই বছরের জন্য সব ধরনের কষ্টকে স্বীকার করে নিয়েছিলাম। কিন্তু দুই বছর বেড়ে তিন বছর হলো। এখন চার বছর চলছে। শুধু আমরা নই, পুরো নগরবাসীকেই এই ফ্লাইওভার নির্মাণের খেসারত দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বছরের পর বছর কাকরাইল থেকে মালিবাগ হয়ে রামপুরা পর্যন্ত রাস্তাটি অকেজো করে রাখা হয়েছে। ফ্লাইওভার নির্মাণ ছাড়াও অন্য অজুহাতে রাস্তাগুলোকে সরু করে রাখা হয়েছে। তাতে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।    
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তত্ত¡াবধানে মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও নাভানার যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান সিমপ্লেক্স নাভানা জেভি এবং চীনা প্রতিষ্ঠান দ্য নাম্বার ফোর মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি (এমসিসিসি) ও তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। রামপুরা থেকে শান্তিনগর (প্যাকেজ-৫) অংশের ঠিকাদার তমা কনস্ট্রাকশন। অনিয়ম ও ভোগান্তির সিংহভাগ এই অংশেই।  
সরেজমিনে দেখা গেছে,  মালিবাগ থেকে মৌচাক পর্যন্ত সড়কে খানাখন্দে ভরা। সুয়ারেজের লাইন ভেঙে রাস্তার সাথে ময়লা পানি একাকার হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি। সব মিলিয়ে পানি-কাদায় এ রাস্তাটি এখনও যান চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। মালিবাগ রেলগেইট থেকে রামপুরা পর্যন্ত রাস্তাটি যান চলাচলের একেবারে অনুপযোগি। একদিকে, ফ্লাইওভারের নির্মাণ সামগ্রী রাস্তা ও পার্শ্ববর্তী ফুটপাতে রাখার কারণে সরু হয়ে গেছে রাস্তা। রড, ভিম, ঢালাই বোর্ড, লোহার এঙ্গেল, খুঁটি রাখার কারণে রাস্তার একপাশ থেকে আরেক পাশে পথচারীরা চলাফেরা করতে পারে না। তার উপর রামপুরার কাছে রাস্তার উপরে রাখা আছে ড্রেনেজের বড় আকারের পাইপ। সরু রাস্তার কারণে মালিবাগ থেকে রামপুরা পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকে যানজট। নোংরা পানি-কাদার কারণে পায়ে হাঁটা পথচারীরা এমনকি রিকশা, প্রাইভেট কার, অটোরিকশা চলাচল করতে পারছে না। ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। যাতায়াতকারীরা আতঙ্কিত থাকছেন সার্বক্ষণিক। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, যানবাহন চলাচলের এরকম অসুবিধা না করে কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি বন্ধ করে দিলেই পারে। মানুষ তো না জেনে এই রাস্তায় চলতে গিয়ে বিপদে পড়ছে। মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ফ্লাইওভার তৈরির কারণে এখানকার ময়লা পানি যাওয়ার যে ড্রেন ছিল সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহুদিন ধরে ময়লা পানি জমে আছে। পানি সরানোর কোনো ব্যবস্থা কেউ নেয়নি। এই পানিই রাস্তায় জমে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সেই গর্তে পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে প্রাইভেটকার, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী। রামপুরা রুটে চলাচলকারী ফাল্গুন পরিবহনের চালক ইব্রাহীম বলেন, এই রাস্তার যে অবস্থা তাতে বাসের যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। কেউ কেউ পথিমধ্যেই নেমে যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর যে যানজটের সৃষ্টি হয় তাতে সবাইকেই সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। ওই বাসের একজন যাত্রী বলেন, এই রাস্তা দিয়ে ভিআইপিদের যাতায়াত কারানো উচিত। তাহলেই আমাদের দুর্ভোগের বিষয়টি উনারা বুঝতে পারতেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, মালিবাগ রেল গেইটের এপাড়ে (মৌচাকের দিকে) দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কোনো কাজ হচ্ছে না। এই অংশে ফ্লাইওভারের কাজ হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে মালিবাগ-রামপুরা রাস্তা থেকে ফ্লাইওভারের সরঞ্জামসহ সব ধরনের মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন ওয়াসার ড্রেনেজের পাইপ ছাড়া তেমন কোনো জঞ্জাল নেই। ওই কর্মকর্তা রাস্তার দুরাবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়ে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্লাইওভার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ