Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাল বৈশাখী ঝড় হানা দিয়েছে আম লিচুর বাম্পার ফলনে

| প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহী অঞ্চলে দু’দিনের (রোব-সোম) কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়া সব লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। গাছে গাছে থোকায় থোকায় ডাঁসা ডাসা আম লিচু কলা পেপের সর্বনাশ ঘটিয়েছে। আর মাস খানেকের মধ্যেই এরা রসনা মেটাতে বাজারে চলে আসতো। এবার অনুকুল আবহাওয়ার কারনে শুরু থেকে আম লিচুর ভাল ফলনের স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছিল। দুদিন আগেও থোকায় থোকায় আমের দুলনি ছিল। সেখানে এখন অনেকটাই ফাঁকা। আমের ফাঁকা ডগাগুলি শেলের মত বিঁধছে আম চাষীদের বুকে। আম গাছগুলোর তলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব আম কুড়নোর মত লোক ছিলনা। পরদিন মে দিবসের কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় এসব আম বাজারে পাঠানো যায়নি। রাজশাহীর প্রধান বাজার সাহেব বাজারে আশপাশ থেকে যা এসেছিল তার ক্রেতার অভাব ছিল। কাঁচা মালের ব্যপারী সাগর জানান তিনি কাঁচা মালের সাথে আম বিক্রির জন্য একশো কেজি আম কিনেছেন ষাট টাকা দিয়ে। আর আকার ভেদে বিক্রি করেছেন পাঁচ সাত টাকা কেজি দরে। গ্রামের বাজারগুলোয় এসব আমের ক্রেতা ছিলনা। শহরের বাজার গুলোয় যা দাম তাতে আম নিয়ে যাবার পরিবহন খরচ উঠছেনা। অনেকে হাটে ঝরে পড়া আম নিয়ে এলেও ক্রেতার অভাবে তা ফেলে রেখে যান। নগরীতে পাড়া মহল্লায় সকাল থেকে ভ্যান ও সাইকেলে নিয়ে ফেরী করছে ফেরীওয়ালারা। কাঁচা আম দিয়ে ডাল রান্না, টক, ছোট মাছ ও শোল মাছ দিয়ে রসনা মেটাচ্ছে ভোজন রসিকরা। ফজলী আম কাঁচাও খাওয়া চলছে। গৃহীনিরা আচার বানানো জন্য কিনছেন। কিন্তু আচার বানানো প্রধান উপকরন সরিষার তেল ও আখের গুড়ের দামের কারনে খুব বেশী বানাতে সাহস করছেনা। ঝড়ে পড়া আম কিছুটা বিক্রি  হলেও লিচু কোন কাজেই আসছেনা। ঝড়ের কারনে কাঁচা পেপে কলা সজনে ডাটা এখন বেশ কিছুটা কমদামে বিক্রি হচ্ছে। তবে সামনে এর প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে রমজানে। পাকা পেপে কলায় টান পড়বে। বাঙ্গি ফুটি তরমুজের ক্ষতিও কম হয়নি। শসার মাচা ভেঙ্গেছে। কৃষি দপ্তর সুত্র জানায়, রাজশাহীতে সাড়ে ষোল হাজার হেক্টর জমিতে আমা বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে দশটন আম উৎপানের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল তারা। ঝড়ের আগ পর্যন্ত এমনটি হিসেব নিকেশ ছিল। তবে এখন কিছুটা বদলেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগ সুত্র জানায়, চলতি বছর ছাব্বিশ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও হানা দিয়েছে ঝড়। শেষ দিকে এসে বৈরী আবহাওয়া কিছুটা ভাবনায় ফেলেছে। আর এমন ঝড়ো হাওয়া না হলে আমের উৎপাদন ভালই হবে। ঝড়ের পরে তারা বাগান ঘুরে পাওয়া চিত্র তুলে ধরে বলেন, চার শতাংশের মত আম ঝরে পড়েছে। তাছাড়া বিরুপ আবহাওয়াকে মোকাবেলা করে আম উৎপাদন হয়। প্রতিবছরই ঝড়ো হাওয়ায় অনেক কাঁচা ও অপরিপক্ক আম ঝরে পড়ে। সেগুলো যথাযথ ভাবে সংরক্ষন করে আমের কিছু বানানো যায় কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। এসব আম মধ্যবিত্ত মানুষ আচার আমচুর তৈরীসহ বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করে। আর অব্যবহৃত বিশাল অংশই নষ্ট হয়। ফলের জ্যাম, জেলী, জুস তৈরী প্রতিষ্ঠান গুলো এনিয়ে এগিয়ে এলে এসব কাঁচা আমের বাজার তৈরী হবে। নগরীর উপকন্ঠে চুয়ান্নটি গাছ নিয়ে একটি বাগান লিজ নিয়েছিলেন তুহিন। গত দু’দিনের ঝড়ে তার আশি মনের বেশী আম ঝড়ে পড়ে গেছে বলে জানান। আম গাছির শরিফ উদ্দিন জানান, এবার যেমন গাছ ভরে মুকুল এসেছে। তেমনি প্রকৃতিও বিরুপ আচরন শুরু করেছে। ফলে আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাচ্ছে। মওসুমের শুরু থেকে ভারী বৃষ্টি আর ঝড় হচ্ছে। রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হওয়া শীতকালীন দেশের রসালো ফল ষ্ট্রবেরী ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করলেও এবার তাতে ছেদ পড়েছে। এবার উৎপাদিত ষ্ট্রবেরীর আকার ও স্বাদেও দিক দিয়ে ভাল ছিলনা। যার ফলে ষ্ট্রবেরী আবাদকারীরা মার খেয়েছে। আবাদের সংখ্যা কমেছে। পুরস্কার প্রাপ্ত চাষী মনিরুল ষ্ট্রবেরীর বদলে পেয়ারা বরই কুলের বাগান করছেন। তাছাড়া এটি শীতকালীন ফল কিন্তু আমাদের শীতকালীন সময়টা কমেছে। যার প্রভাবও পড়েছে ষ্ট্রবেরী আবাদের উপর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ