হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আবদুল আউয়াল ঠাকুর : পবিত্র কোরআন বলা হয়েছে, মানুষের দুর্ভোগ তার দুই হাতে অর্জিত। মানুষ যখন বিপদে-আপদে পড়ে তখন সঙ্গত বিবেচনা থেকেই আল্লাহকে স্মরণ করে। আবার অনেকে তার বিপরীত কাজও করে। যে যাই বলুক, বিপদের শিকার যারা হয়, তারাই বুঝতে পারে অসময় কতটা প্রলম্বিত এবং কতটা অসহনীয়। নিউটনের সূত্র অনুযায়ী অসময় দীর্ঘ মনে হয় সুসময় স্বল্পমেয়াদি। বিপদ কখনো বলে কয়ে আসে না। সেই সাথে প্রবাদ হচ্ছে, বিপদ কখনো একা আসে না। কথা বলছিলাম বাংলাদেশের হাওরাঞ্চল নিয়ে। যেখানে আসছে রমজান-ঈদকে কেন্দ্র করে হাওরবাসী নতুন ফসলের স্বপ্নে বিভোর ছিল, মাত্র কদিনের বানের পানির টানে তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে যারা সহায়ক ভূমিকা পালন করে সেই তারাই এখন দয়ার-দানের ভিখারিতে পরিণত হয়েছে। এলাকাজুড়ে চলছে দুর্ভিক্ষাবস্থা। অবস্থা এমন যে, সেখানকার মানুষেরা এখন ভিড় জমাতে শুরু করেছে শহরের দিকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহায়তা না পেলে সেখানকার বিদ্যালয়গুলোতে ঝরে পড়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চরম খাদ্য সংকটে দিন কাটছে ৭ জেলার হাওরাঞ্চলের কৃষক পরিবারগুলোর। ফসল হারিয়ে দিশাহারা হাওরবাসীর সামনে এখন নতুন শঙ্কা। সময়টা অনেক দীর্ঘ। আগামী প্রায় এক বছর তাদের কাটাতে হবে এভাবে। তার ওপর মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হলেও অনেকে তা পাননি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ত্রাণ পাচ্ছে না। অন্যদিকে তালিকা প্রণয়ন করা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে শঙ্কা। একদিকে খাদ্য সংকট অন্যদিকে তাদের হাতে কাজ নেই। সামনের সময় কীভাবে কাটবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তাদের চোখে-মুখে। গরিব অসহায় মানুষজন দিনভর দাঁড়িয়ে থেকে অল্প চাল পেলেও মধ্যবিত্তরা পড়েছে বিপাকে। আত্মসম্মানের কথা ভেবে ওএমএসের চালও নিতে পারছে না। এদিকে ওএমএসের চাল বিতরণে অনিয়ম ও অপর্যাপ্ততা সম্পর্কে বলা হয়েছে, মূল সংকট হচ্ছে সরবরাহে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তারা ওএমএসের চাল বা আটা পাচ্ছে না। কেন তারা পাচ্ছে না সে ব্যাপারে একজন ওএমএস ডিলার মনে করে, অনেকেই বঞ্চিত হয়েছে। কারণ সরবরাহের অপ্রতুলতা। একটি কেন্দ্র ছাড়া সব কেন্দ্রে একটন চাল ও একটন আটার সরবরাহ করা হচ্ছে। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই দিনে ২০০ পরিবারের বেশি আওতায় আনা সম্ভব নয় অথচ শত শত পরিবার প্রতিদিন অপেক্ষা করছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে হাওরের ৯০ লাখ মানুষ। এদিকে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তিনি ইতোমধ্যেই পরিস্থিতির ব্যাপকতা ও গভীরতার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে আরো অধিক কেন্দ্র খোলা ও খাদ্য বরাদ্দের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
উজানে ভারত থেকে আসা বানের পানিতে ভেসে গেছে হাওর। পানির তোড়ে পাকনার হাওর ডুবে যাওয়ার ফলে ১৪২টি ফসলি হাওরের সবকটির ফসল ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে দেড় লাখ হেক্টর জমির বোরো ফসল। এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ধানের (চালের) লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছে, আবাদ করা ধানের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, হাওর এলাকায় বোরো ধানের ক্ষতি হওয়ায় সাড়ে চার লাখ টনের মতো চাল নষ্ট হবে। কৃষি বিভাগ সূত্রে বলা হয়েছে, চলতি মৌসুমে হাওর এলাকার জেলায় মোট ৮ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল, যা সারা দেশে মোট আবাদের ১৭ দশমিক ১৯ ভাগ। কৃষি বিভাগ আশা করেছিল আলোচ্য জমি থেকে প্রায় ১৫-১৬ লাখ টন চাল উৎপন্ন হবে। চৈত্রের বোরো ফসলের ডুবিতে সবই বিনষ্ট হয়। এখানেই শেষ নয় চলন বিলও হুমকির মুখে পড়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে হাওরাঞ্চলে বোরো ফসল তোলার সময় কৃষক ছাড়াও প্রান্তিক শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হয়। নতুন ফসলকে ঘিরে চাঙ্গা হয়ে ওঠে ওই এলাকার অর্থনীতি। এদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রকৃতি অস্বাভাবিক আচরণ করছে। পরিস্থিতি আরো আশঙ্কাজনক ও উদ্বেগের। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই প্রকৃতি এ অস্বাভাবিক আচরণ করছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই বন্যাই শেষ বন্যা নয়, বর্ষা শুরুর আগে আরো বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চলতি মাসে ইতোমধ্যেই ত্রিশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বছরে এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ১১৯.৭ শতাংশ বেশি হয়েছে। গত বছরের চিত্র ছিল একবারে উল্টো। গত বছর ছিল বৃষ্টিহীনতা। অত্যধিক গরম। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট পরিবেশবিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত মনে করেন, এখনকার অতি বৃষ্টি ও এর আগের বছরের গরম বৃদ্ধি পাওয়া- দুটোই আশঙ্কাজনক। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে এ অস্বাভাবিতা দেখা দিয়েছে। এর জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই প্রচন্ড বর্ষণের পর এখন শুরু হয়েছে তাপ প্রবাহ। এরপর কী হবে সেটা আল্লাহই ভালো জানেন।
দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে হাওরের অবদান ৬ শতাংশ। সেই হাওর এখন বিরানভ‚মি। কৃষকের ধান এখন পানির নিচে। মরছে মাছ, হাঁস। খামারের হাঁস-গবাদিপশুও বিক্রি হচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি গো খাবারেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, পানি দূষণে ৪১ কোটি টাকার ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ মারা গেছে। ৩ হাজার ৮৪৪টি হাঁস মারা গেছে। ৬টি উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের ১৮ হাজার ২০৫টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বলা হচ্ছে এগুলো কেতাবি হিসাব। বাস্তব অবস্থা আরো ভয়াবহ। আর্থিকভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। হাওর নিয়ে কাজ করা ৩৫টি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ওই সংস্থাটি বলছে, মূলত সরকার উৎস থেকে নেয়া তথ্যদিয়ে তারা হিসাব তৈরি করেছেন। ইতোমধ্যেই সরকারি হিসাব ও বেসরকারি হিসাবের মধ্যে গরমিল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তেমনি মাছ ও হাঁসের মরকের কারণ নিয়েও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পওয়া যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে এই বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে বর্তমানে পরিচিত অনেক বিশেষজ্ঞ মুখ খুলছেন না। টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করছেন না। এ বাস্তবতায় হাওর এলাকাকে জাতীয় দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকার নেতা সুলতানা কামাল। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের রক্ষায় দ্রæত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। হাওরের উন্নয়ন ও গবেষণা নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, এই ক্ষতির প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, হাওরের ফসলহানির কারণে ইতোমধ্যেই দেশের অভ্যন্তরে চালের সরবরাহে সংকট দেখা দেয়ায় চালের চাম বাড়তে শুরু করেছে। এর সাথে দেশের মৎস্য সম্পদের যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার নানা মাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে। হাওরাঞ্চলে বান-বন্যা নতুন কিছু নয়, তবে এবার যেটি হয়েছে তার মধ্যে মারাত্মক অস্বাভাবিকতা রয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছে, আর সাতটা দিন সময় পাওয়া গেলেও অন্তত অনেক ফসল ঘরে তোলা যেত। এ অসময় বন্যার কারণ নিয়েই মূল আলোচনা।
পরিবেশবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রণমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের উপ-নির্বাহী পরিচালক মমিনুল হকের অভিমত হচ্ছে, এই অতিবৃষ্টি আর অনাবৃষ্টি অস্বাভাবিক। প্রকৃতির এই অস্বাভাবিক আচরণ জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্যগুলোর দিকেই নির্দেশ করে। ড.আইনুন নিশাদ মনে করেন, শরৎ ও হেমন্ত হারিয়ে এক হয়ে গেছে। শীত কমে গেছে। দেখা যাচ্ছে ষড়ঋতুর দেশে গ্রীষ্ম, বসন্ত ও হেমন্ত প্রকৃতি থেকে হারিয়ে গেছে। এ সবকিছুই জলবায়ু পরিবর্তনের একেকটি নির্দেশক। মূলত প্রতিবেশীর বৈরী পানিনীতির কারণে অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশ বিরূপ আবহাওয়ার শিকার হয়ে আসছিল। এ কথা বহুবার বহুভাবে বলা হয়েছে যে, পানির ন্যায্য হিস্যা না পেলে বাংলাদেশ টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়তে পারে। পানির অভাবে মরুকরণ প্রক্রিয়ার বিষয়টিও অনেক আগে থেকেই বলা হয়ে আসছে। নদ-নদীর উজানে ভারতীয় বাঁধের কারণে বাংলাদেশে যা ঘটছে তাকে অমানবিক মনে না করার কোনো কারণ নেই। শুষ্ক মৌসুমে চলছে পানির অভাব আর বর্ষায় হচ্ছে বন্যা। যখন খুশি ভারত পানি ছেড়ে দেবে যখন খুশি আটক রাখবে এই স্বেচ্ছাচারিতারই মাশুল দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। হাওরাঞ্চলের মানবিক বিপর্যয়ের কারণে গোটা দেশের অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তা ভার বইতে হবে দেশের মানুষের। বাস্তবত পরিস্থিতিকে কেবল আপৎকালীন মনে করার কোনো কারণ নেই। এ অবস্থা অনেকটা যেন লেগেই রয়েছে। যতক্ষণ পানি সমস্যার কার্যকর সমাধান করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ সমস্যারও কোনো কার্যকর সমাধান করা সম্ভব নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্যি যে, সরকারের সংশ্লিষ্টরা প্রতিবেশীর থেকে পানি আনা অথবা পানি সমস্যার সমাধানে এ পর্যন্ত কোনো সফলতা দেখাতে পারেননি। অন্যদিকে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়েও এ পর্যন্ত যত আলোচনা হয়েছে তাতেও কোনো সফলতা আসেনি। সব মিলে সংকট কেটে যাবে সে রকম কোনা আলামত এখনো স্পষ্ট নয়। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন সময়ক্ষেপণের আর বিন্দুমাত্র সময় নেই। এখনই মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রস্তুতি বলতে সাধারণত মনে করা হয় দুর্গত মানুষদের সহায়তা, ত্রাণ সরবরাহ এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি। প্রকৃত প্রস্তাবে এসব করার অর্থ হচ্ছে এ ধরনের কৃত্রিক প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মেনে নেয়া। এর অর্থ এই নয় যে, দুর্গত মানবতার পাশে দাঁড়ানোর অন্য কোনো বিকল্প আছে। এ কথা বোধকরি নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো প্রয়োজন নেই যে, আমাদের নদ-নদীগুলো পানি বহনের সক্ষমতা হারিয়ে না ফেললে হয়তো এ অবস্থা হতো না। প্রতিবার বর্ষা মৌসুমেও দেখা যায় সামান্য পানিতে দেশ সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। এ কথাও বহুবার বহুভাবে বলা হয়েছে, শুষ্ক মৌসুমের পানিহীনতা নদ-নদীগুলোকে প্রাণহীন করে দিচ্ছে। ফলে বর্ষার পলিবহনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। যার পরিণতিতে বন্যা। অনেক দিন থেকে আলোচনা হয়ে এলেও পরিবেশবিজ্ঞানীরা এবার খুব স্পষ্ট করে বলছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া পাল্টে যাচ্ছে। এই পাল্টে যাওয়াকে স্বাভাবিক মনে করার কোনো কারণ নেই। এটি কৃত্রিম। কারণ পানির অভাবেই এটা হচ্ছে। আমাদের কৃষিবিজ্ঞানীরা কৃষিতে পানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে নানা ধরনের গবেষণা করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়ে গেলে তার মাশুল কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে? ভাববার রয়েছে আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে সামগ্রিক পরিবর্তনইবা সামাল দেয়া যাবে কোন প্রক্রিয়ায়? আবহাওয়ার পরিবর্তন কেবলমাত্র কৃষিকেই প্রভাবিত করবে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই বরং এর প্রভাব পড়বে নানামাত্রিক। মাত্র সেদিন উষ্ণায়ন থেকে আত্মরক্ষার জন্য যে উদ্বেগ আয়োজন শোনা গিয়েছিল দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের আবহাওয়া কেবল উষ্ণায়নের হুমকির মুখে নয় বরং প্রতিবেশীর বৈরী পানিনীতির আগ্রাসনের মুখে পড়েছে। আর সে কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ, কৃষি। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি। মানুষ বাঁচাতে পরিবেশ বাঁচাতে জীবনযাপনে পানির কোনো বিকল্প নেই। দিন দিন পানি শূন্য হয়ে যাচ্ছে দেশ। সুতরাং পানি পেতে হবে। পানি পাওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে অকাল বন্যা বা এ ধরনের কথিত প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে আলাদা করে ভাববার কোনো প্রয়োজন হবে না। এবারের হাওরের বিপর্যয় নিয়ে সরকারের অনেক মহল অনেকটা মশকারা করছেন। যে কোনো ঘটনায় তারা বিরোধী রাজনীতিকদের দায়ী করাকেই পছন্দ করছেন। বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে দেখতে হবে। সমস্যাকে কেবল হাওরের মনে করার কোনো কারণ নেই; বরং সমস্যা দেখতে হবে গোটা দেশের ক্যানভাসে। বুঝতে হবে, প্রাণান্ত চেষ্টা করে হাওরবাসী তাদের স্বপ্নের ফসল রক্ষা করতে পারেনি। যে দোষে তারা দোষী নয় অথচ সে কারণেই তাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। নীতিনির্ধারকগণ অনেক কথা বলেন। বাস্তবত দেখা যাচ্ছে, পানির মতো মৌলিক সমস্যার দিকে নজর না দেয়ার ফলে গোটা দেশই এখন হুমকির মুখে। প্রতিবেশীর সাথে বন্ধুত্ব যখন তুঙ্গে বলে নানাভাবে বলা হচ্ছে তখন প্রতিবেশীর স্বেচ্ছাচারিতায় দেশের মানুষের আশা যখন ভেঙে যাচ্ছে। তখন এ নিয়ে কেন তারা বলছেন না, যে বন্ধুত্ব দেশের মানুষকে পানিতে, ভাতে মারতে ইন্ধন জোগাতে সহায়ক হয় সে বন্ধুত্ব কতটা জাতীয় স্বার্থের অনুবর্তী সেটা অবশ্যই ভাববার রয়েছে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।