নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশেষ সংবাদদাতা : গতির লড়াইয়ে রুবেলের সঙ্গে পাল্লাটা ছিল তাসকিনের বেশ কিছুদিন ধরেই। ক্যানবেরায় রুবেলের গতি ছাড়িয়ে গেছে তাসকিনকে। তবে রুবেলের অনুপস্থিতিতে এশিয়া কাপের চলমান আসরে সবচেয়ে গতির ডেলিভারীটি দিয়েছেন তাসকিন। স্পিডগানে ১৪৮ কিলোমিটার গতি। বলের সীমটা ভালই ব্যবহার করতে পারেন বলে নুতন বলে শুরুটা তাসকিনকে দিয়েই, তাসকিনের অভিষেক থেকেই এটাই যেনো নিয়ম হয়ে গেছে। টি-২০ ক্রিকেটে যখন চার ছক্কার ফুলঝুরি দেখতে আসে দর্শক, সেখানে বিকল্প ধারণাটাও দিয়েছেন পুরোনো ঢাকার এই ছেলেটি। এশিয়া কাপের চলমান আসরে সফল বোলারদের শীর্ষে উঠে এসেছেন আল আমিন (৪ ম্যাচে ১০ উইকেট)। তবে ৪ ম্যাচে তিন উইকেট পেয়েও আলোচনায় তাসকিন। প্রতিপক্ষকে শুরুতে গতি দিয়ে পিলে চমকে দেয়ার কাজটা প্রতিনিয়ত করছেন, দিচ্ছেন জোর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে। সর্বশেষ ম্যাচটি ছাড়া অবশিস্ট তিনটিতে ভাগ্যাহত তাসকিন। প্রথম ম্যাচে ব্যক্তিগত ২১ রানের মাথায় ভারতের রোহিত শর্মার ক্যাচ পয়েন্টে ফেলে দিয়ে সাকিব খলনায়ক, সিনিয়রের ওই ড্রপে কপাল চাপড়ানো ছাড়া কিইবা করার ছিল তাসকিনের। ২১ রানে বেঁচে যাওয়া রোহিত শর্মার ৮৩ রানে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলেছে ভারত। পরের ম্যাচে তাসকিনকে বঞ্চিত করেছেন সেকেন্ড সিøপের ফিল্ডার সৌম্য সরকার! তার বলে ক্যাচ ছেড়েছেন মাহামুদুল্লাহও।
টুয়েন্টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবার আগে ম্যাচের সেঞ্চুরি পূর্ণ করা পাকিস্তানকে গত পরশু হতভম্ব করতে পেরেছে বাংলাদেশ শুরুতেই। তা বোলিং দিয়েই এবং তার পুরো কৃতিত্ব তাসকিনেরই। প্রথম স্পেলটি তার ২-১-১-০, ১২ বলের মধ্যে ডট ১১টি! ভাবুন তো। দ্বিতীয় স্পেলে সেখানে ১-০-১-১! তার এমন বোলিংয়েই প্রথম ১০ ওভারে ৩৪’র বেশি নিতে পারেনি পাকিস্তান। ওখানেই পাকিস্তানকে ব্যাকফুটে নামিয়ে এনেছেন তাসকিন। ৫ উইকেটে জিতে তাই তাসকিন স্তুতি অধিনায়ক মাশরাফির- ‘তাসকিন সেটআপ করে দিয়েছে আমাদর। ছেলেটা পুরো টুর্নামেন্টে দুর্ভাগা ছিলো। ওর বলে অনেকগুলো ক্যাচ ড্রপ হয়েছে। ও মানসিকভাবে শক্ত, এটা ভাল দিক। সে ইতিবাচক ছিলো বলে ফল পেয়েছে। বার বার দুর্ভাগা হওয়ায় তার উপর অনেক বড় চ্যালেঞ্জিং ছিলো। ছেলেটা সেই চাপ নিতে পেরেছে।’
গত বছর বিশ্বকাপে নিজেকে মেলে ধরা এই পেসার ইনজুরিতে পড়ে হোমে ৭টি ওয়ানডে ম্যাচ করেছেন মিস। মিস করেছেন ৪টি টি-২০। ইনজুরি থেকে পুরোপুরি ফিট হওয়ার আগে বিপিএল থ্রিতে খেলাটা তার সুখকর হয়নি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-২০ সিরিজেও একটির বেশি ম্যাচ খেলানোর ঝুঁকি নেয়নি টীম ম্যানেজমেন্ট। এশিয়া কাপে সেই তাসকিনে একটার পর একটা ম্যাচে হাসছে বাংলাদেশ দল। ২০১৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সর্বশেষ এশিয়া কাপ দেখেছেন মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে, এবার এশিয়া কাপে তিনি বাংলাদেশ বোলিংয়ের প্রাণ ভোমরা।
গতিতে রিদম পাওয়া তাসকিন নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে পারার কারণ হিসেবে খুলনা এবং চট্টগ্রামের অনুশীলনকে উপকৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছেনÑ ‘খুলনা এবং চট্টগ্রামে যে ট্রেনিং হয়েছে, তাতে উপকৃত হয়েছিল। বাড়তি প্র্যাকটিস করেছি। কোচ, সিনিয়র ক্রিকেটাররা হেল্প করেছেন।’ ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ভারতের বিপক্ষে, অভিষেকেই বাজিমাত (৫/২৮)। ওয়ানডে ক্রিকেটে ভারতের বিপক্ষে তার রেকর্ডটা দারুণ, ৫ ম্যাচে ১২ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে নিজের অতীত রেকর্ড ভাল বলেই ফাইনালে নিজের সবটুকু উজাড় করে খেলার সংকল্প তাসকিনেরÑ ‘এশিয়া কাপ টি-২০তে বড় দুই দলের বিপক্ষে জিতেছি, এটা আমার অনেক বড় পাওয়া। দেশের হয়ে যখন খেলি, তখন ১০০ পার্সেন্ট এমনিতেই চলে আসে। ক্যারিয়ারে এটাই আমার প্রথম এশিয়া কাপ, আর এই আসরেই ফাইনাল খেলছি। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এখন লক্ষ্য একটাই, সেরাটা খেলা।’
গতিটা তার চোখ ধাধানো, বিপিএলএ ‘টু’ তে সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসেবে তাসকিনকে হাজির করিয়েছিলেন চিটাগাং কিংসের হেড কোচ খালেদ মেহমুদ সুজন। বিপিএলএ নিজের অভিষেকেই করেছেন বাজিমাত। প্রথম ম্যাচেই ১৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি গতি, দূরন্ত রাজশাহীর বিপক্ষে ৪ উইকেট। এমন শুরুর পর জাতীয় দলে ঢোকা যার সময়ের ব্যাপার মাত্র ছিল, তখনই ইনজুরি নিয়েছে পিছু। ইনজুরি থেকে সেরে উঠে ১৫ মাস পর ওয়ানডে অভিষেকে প্রথম বাংলাদেশী বোলার হিসেবে ৫ উইকেট (৫/২৮), তাও আবার ভারতের বিপক্ষে। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বাধিক উইকেট শিকারী বোলার তিনিই (৯ উইকেট)। এখন এশিয়া কাপে নিজের প্রথম আসরকে স্মরণীয় করে রাখার অঙ্গীকার তাসকিনের। গতকাল যে টি-শার্টটি পরে মিডিয়াকে দিয়েছেন সাক্ষাতকার, তাতে ইংরেজীতে বড় করে লেখাÑ ‘বেস্ট ইজ ইয়েট টু কাম।’ সেরাটার অপেক্ষাই আছে এখন বাংলাদেশের ক্রীড়াপাগল মানুষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।