বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম : বর্ষা শুরু হতে না হতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার নদের তীরবর্তী মানুষজন। ইতোমধ্যে ভাঙ্গনের শিকার প্রায় সহস্রাধিক পরিবার ঘর-বাড়ি ভিটে-মাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি বেসরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ এ পরিবার গুলোর।
সরেজমিন রাজিবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজিবপুরের মোহনগঞ্জ ইউনিয়নসহ পার্শ¦বর্তী ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়িসহ ফসলী জমি। হুমকির মুখে পড়েছে মোহনগঞ্জ বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নানা স্থাপনা। এ অবস্থায় ভাঙ্গনরোধে দ্রæত সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
গত মাস মাস ধরে রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের মোহনগঞ্জ বাজার, নয়ারচর, নেওয়াজি, শঙ্করপুর, হাজিপাড়া, ফকিরপাড়া ও ব্যাপারীপাড়াসহ প্রায় ২৫টি গ্রামের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ১৫ দিনে নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি ও শতশত একর ফসলী জমি।
ভাঙ্গন ঠেকাতে ইউনিয়নবাসী মানব বন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও তা নজরেই আসছে না কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করলেও মিলছে না কোনো সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা। এ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে পরিবার গুলোর।
এদিকে ভিটে-মাটিসহ ফসলি জমি হারানোর আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে ভাঙ্গনের হুমকিতে থাকা পরিবার গুলোর। মোহনগঞ্জ গ্রামের জামাল উদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত ৪ বার বাড়ি ভেঙ্গেছি। আবারও ঘর-বাড়ি নদীর কিনারে পড়েছে। দু-একদিনের মধ্যে না সরালে নদের গর্ভে চলে যাবে। আমরা সরকারের নিকট আবেদন জানাই সরকার যেন নদী ভাঙ্গনটা বন্ধ করে দেয়।
ভাঙ্গনের শিকার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের মৃত ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী জোহরা বেগম বলেন, ১০ দিন হয় ভাঙ্গনের মুখে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নদের নিকটবর্তী অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। এখনও ঘর তুলতে পারি নাই। টাকা নাই। মেম্বার চেয়ারম্যানরাও কোনো সাহায্য দেয় না। এ অবস্থায় কোথাও যাওয়ারও কোনো উপায় নাই। দিনে একবেলা খাবার জোটে আর বাকি দুই বেলা উপোস থাকতে হয়।
একই এলাকার ভাঙ্গনের শিকার সোবহান মিয়া বলেন, মানুষের জায়গার উপর ঘর রেখেছি। ভিটে-মাটি, আবাদি জমি সবই নদীতে গেছে। কোথাও ঘর উঠাব সে জায়গাও নাই। বউ-বাচ্চা নিয়া বিপদে আছি।
মোহনগঞ্জ দ্বি-মুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালমা খাতুন জানান, আমাদের স্কুল নদের কিনারে পড়েছে। স্কুল ভেঙ্গে গেলে আমাদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্ষা শুরু হতে না হতে তার ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র ভয়াল রুপধারণ করেছে। তার ইউনিয়নেই প্রায় দেড় হাজার পরিবার ভাঙ্গনের শিকার হয়ে নিস্ব হয়ে পড়েছে। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীকে নিয়ে অনেকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করেছি। কোনো কাজ হচ্ছে না। শুধু বলে বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানাই অতিদ্রæত যেন বরাদ্দ দিয়ে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
রাজিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল আলম জানান, ভাঙ্গন ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন চলছে। আমরা এ দুইটি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ এবং প্রায় ২০ কিলোমিটার ড্রেজিংসহ একটি প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছি যেটা প্রক্রিয়াধীন আছে। মোহনগঞ্জ বাজার এলাকায় ভাঙ্গনরোধে গত বছর কিছু কাজ করেছি। এ বছরও ৩৩০ মিটার কাজের অনুমোদন পেয়েছি। অতিশীঘ্রই সেখানে কাজ শুরু হবে। এছাড়া প্রবল ভাঙ্গন কবলিত এলাকা গুলোতে জরুরি কাজ করার জন্য বোর্ডে বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।
দ্রæত কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়ে ভাঙ্গন ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের অসহায় মানুষেরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।