Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

উদ্বোধনের অপেক্ষায় ২য় ভৈরব ও তিতাস রেলসেতু

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ভ্রমণে সময় কমবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


নূরুল ইসলাম : নির্মাণ কাজ শেষ। লিঙ্ক লাইনের কাজও প্রায় শেষ। চলছে পেইটিংয়ে কাজ। উদ্বোধনের অপেক্ষায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস রেলওয়ে সেতু। গত বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় ধাপে মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ দুটি সেতু চালু হলে কমে যাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচলের সময়। ডাবল লাইনে ক্রসিং ছাড়াই চলবে ট্রেন। বাড়বে ট্রেনের সংখ্যাও। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে এখন যে সময় লাগে তার চেয়ে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সময় কমে আসবে সেতু দুটি চালু হলে। রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক নির্মাণাধীন সেতু দুটি পরিদর্শনকালে বলেছিলেন, পণ্য পরিবহনে সময় কম লাগবে বলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে সেতু দুটি। গত ১ মার্চ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথসহ সারাদেশে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছার সময় সর্বনি¤œ ৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ মিনিট কমিয়ে এনে সময়সূচি সংশোধন করা হয়েছে। সেতু দুটি চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আন্তঃনগর ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছার সময় আরও কমিয়ে আনা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে মেঘনা নদীর ওপর ১৯৩৭ সালে নির্মিত হয় ভৈরব রেল সেতু। দীর্ঘ ৭৯ বছর ধরে ওই সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। পুরনো সেতুটি মেরামত ও সংস্কার করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী রয়েছে। ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর পুরাতন এই সেতুর পাশাপাশি আরেকটি নতুন রেল সেতু নির্মাণের প্রস্তাব জাতীয় অথনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের ওই সভা শেষে জানানো হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইন হবে। এ লক্ষ্যে রেলওয়ে অ্যাপ্রোচসহ দ্বিতীয় ভৈরব এবং দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, সেতু দুটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। পেইন্টিংয়ের কাজসহ ফিনিশিংয়ের কিছু কাজ বাকী আছে। বৃষ্টির কারণে পেইন্টিংয়ের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সামনের ক’দিন বৃষ্টি না হলে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে আর সময় লাগবে না।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ে এপ্রোচসহ ৯৫৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতু দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ১৩৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে। বাকী ৮২৬ কোটি ২০ লক্ষ টাকা অর্থায়ন করেছে ভারতীয় ঋণ সহায়তা (এলওসি)।
দীর্ঘ ৮০ বছর পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ডাবল লাইন নির্মাণের সুফল তুলতে দ্বিতীয় ভৈরব সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। দ্বিতীয় ভৈরব সেতু চালু হওয়ার পরে পুরাতন সেতুটিও চালু থাকবে। তখন দুই সেতু দিয়েই ট্রেন চলাচল করবে। একটি দিয়ে চলবে আপ ট্রেন এবং অপরটি দিয়ে চলবে ডাউন ট্রেন। রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন জানান, দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস সেতু যাতে ডুয়েল গেজ হিসেবে ব্যবহার করা যায় এজন্য দুটি সেতুর উপর ডুয়েল রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। ১২টি পিলার ও নয়টি স্প্যান দিয়ে তৈরী দ্বিতীয় ভৈরব সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৭ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা। এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৮৪ মিটার এবং প্রস্থ সাত মিটার। ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন-এফকন জেভি’র সাথে ভৈরব সেতু নির্মাণে চুক্তি হয়। একই বছরের ২৫ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথম দফায় গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় ধাপে মেয়াদ বাড়ানো হয়। একইভাবে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিতাস সেতু নির্মাণের চুক্তি হয় নিয়োজিত ঠিকাদার গ্যানন-এফএলসিএলের সাথে। ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ১৯১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে তিতাস সেতুটি।  
জানা গেছে, ঢাকা-চট্ট্রগাম রেলপথে টঙ্গী থেকে ভৈরববাজার স্টশন পর্যন্ত ডাবল রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয় গত বছরের ফেব্রæয়ারী থেকে। এই ডাবল লাইন চালুর ফলে এই অংশে এখন প্রতিদিন ৪৬টির বদলে ৮৪টি ট্রেন চলাচল করছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটসহ পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথে বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রার সময় ৫ থেকে ৬৫ মিনিট কমিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার (জিওবি) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের জন্য খরচ হয়েছে দুই হাজার ২১২ দশমিক ৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিবি এক হাজার ৮২৩ দশমিক ৯ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ৩৮৯ দশমিক ৫২ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে। রেল সূত্র জানায়, এখন বাকী লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন। এটি বাস্তবায়নে আরও দুবছর সময় লাগবে। এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, আমাদের কাজ হলো মানুষকে সেবা দেয়া। লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইনের কাজ যতো তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে ততোই ভালো। আমরা চেষ্টা করছি এই কাজ দ্রæত শেষ করে জনগণকে সেবা দিতে। এর সাথে তিতাস রেলসেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করে আখাউড়ায় দ্বিতীয় রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী  বলেন, এই দুই সেতু চালু হলে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় পর্যটন অঞ্চল তেল-গ্যাস খনিজ সমৃদ্ধ সিলেটের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজতর হবে।



 

Show all comments
  • ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৮:৫২ পিএম says : 0
    ভৈরবের মেঘনা ২য় রেল সেতু জিলু রহমানের নামে হউক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ