Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধভাবে কোম্পানি খুলে অর্থ বিদেশে পাচার করছে সংঘবদ্ধ চক্র

সংসদীয় কমিটির অভিযোগ উত্থাপিত

| প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে কোম্পানি খুলে তার মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিচয় গোপনে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। অবৈধভাবে উপাজিত অর্থ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচারের সময় দু’জন হাতেনাতে ধরা পড়লেও প্রকৃত আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। তারা বিদেশে বসেই দেশের মাটিতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করতে সেখানকার নাগরিক হিসেবে একাধিক কোম্পানিও খুলে বসেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির সভাপতির কাছে মেহেদী হাসান বুলবুলের লেখা অভিযোগে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে মামলা হলেও বিচার এখনো শেষ হয়নি। সিআইডির তদন্তে অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আর দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ বিদেশে পাচার চলছে। তাই বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধে সংসদীয় কমিটির হস্তক্ষেপ জরুরি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জন্ম নেয়া মুন্সি বদিউজ্জামান ওরফে সিঙ্গাপুরী জামান এখন স্বপরিবারে সিঙ্গাপুরে বসবাস করেন। সেখানকার নাগরিকও তিনি। তার সিঙ্গাপুরী পাসপোর্ট নম্বর- ই ৫৬৬৭৭২৯ এন ও আইডি নম্বর- ই ২১৩১৭৭৬ বি। সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই। বাংলাদেশে নাগরিকত্বকে বিসর্জন দিয়েই তাকে ওই দেশের নাগরিকত্ব নিতে হয়েছে। তারপরও তিনি সেটা গোপন করে বাংলাদেশে ব্যবসা করছেন। মুন্সি আব্দুল মোতালেব হোসেনের ছেলে বদিউজ্জামান বাংলাদেশে এডভান্স হোমস প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি খুলে সেই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এই কোম্পানিতে পরিচালক হিসেবে আছেন বদিউজ্জামানের প্রথম স্ত্রী নাসরিন জামান এবং দুই ছেলে এহসানুজ্জামান রাজিব ও নাফিউজ্জামান। যারা সিঙ্গাপুরের নাগরিক। সিঙ্গাপুরের ১৪ কোল্ড স্ট্রিম এভিনিউয়ে তারা বসবাস করেন। আর দেশে এই ব্যবসা দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী তৌহিদা সুলতানাকে। যিনি ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সংশ্লিষ্ট অভিযোগে আরো বলা হয়, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মের দপ্তরে ওই কোম্পানির সব সদস্যকেই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ এই কোম্পানির ৮০ শতাংশ শেয়ারই বিদেশি নাগরিকদের নামে। একমাত্র বদিউজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রীর ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ফলে একদিকে এই কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে আইন লংঘন করা হয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানির সকল আয় পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। এ ছাড়া মুন্সি বদিউজ্জামান পরিচয় গোপন করে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিনিয়োগ বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফাঁকি দিয়ে ফিনিক্স ইনসিওরেন্স কোম্পানি ও এনআরবি ব্যাংক পাবলিক লিমিটেডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, প্রচলতি আইনে বিদেশি কোনো নাগরিককে সিআইপি পদমর্যদা দেয়ার বিধান না থাকলেও মুন্সি বদিউজ্জামান ২০০৯ সালে ও ২০১১ সালে সিআইপি পদমর্যদা লাভ করেন। অথচ তার নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অর্থ পাচার করছে। অবৈধভাবে অর্থ পাচারকালে মতিঝিল স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক থেকে দুইজন হাতেনাতে ধরাও পড়ে। এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনাটি তদন্ত শেষে সিআইডি পরিদর্শক কামাল উদ্দিন ২০০৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মুন্সি বদিউজ্জামানসহ ১৮ জনকে আসামি করে নিয়মিত মামলার জন্য এজাহার দাখিল করেন। ওই এজাহারেও মুন্সি বদিউজ্জামানের সিঙ্গাপুরের ঠিকানা উল্লেখ করেন তদন্তকারী সিআইডি কর্মকর্তা।
সিআইডি কর্মকর্তার এজাহারে বলা হয়, আসামি সন্তোষ বিশ্বাস ১৯৯৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ইউসিবিএল ইসলামপুর শাখার একখানা পে-অর্ডার (নং-৯৯৭৫৮৪/১২৪৫) সাবেক আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক, বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে অবৈধাবে জমা দিতে গেলে পে-অর্ডারসহ ধরা পড়ে। তাকে পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে একইভাবে ১৯৯৯ সালের ২৮ জুন থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১০টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে পাঁচ কোটি ২৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা জমা করেছে। আসামি সন্তোষ বিশ্বাস ও একইসঙ্গে ধরা পড়া বিশ্বজিৎ সাহা ওরফে মিঠু দু’জনের মোবাইল ফোনের কললিস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা সিঙ্গাপুরে বদিউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করেই টাকা জমা করত। মুন্সি বদিউজ্জামান সিঙ্গাপুরের লানিয়া ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড ও এবিজেড এক্সচেঞ্জ প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক। সে হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার নির্দেশেই ওই পে-অর্ডারগুলো জমা হয়। এ ছাড়া আসামিরা বদিউজ্জামানের কর্মচারী হিসেবে বিভিন্ন স্থানে কোটি কোটি আদান-প্রদান করেছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৯৯ অনুযায়ী বিদেশি কোনো নাগরিকের বাংলাদেশের স্থাবর সম্পত্তির মালিক হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও অথচ এডভান্স হোমসের নামে মুন্সি বদিউজ্জামান ক্রয়-বিক্রয় করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ময়মনসিংহের ভালুকা থাকায় এডভান্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের নামে ১৪৮ বিঘা জমি ক্রয় করা হয়। যা নির্মাণাধীন স্থাপনাসহ ২০১৩ সালে লাবিব গ্রæপের কাছে ৬০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। জোয়ার সাহারা মৌজায় জগন্নাথপুরে ১১ কাঠা জমিতে এডভান্স নেইনবো নামের আবাসিক ভবনে এক হাজার ২০০ বর্গফুটের ২২ ফ্ল্যাট ও জোয়ার সাহারা এলাকায় এডভান্স প্যারাডাইস নামের আবাসিক ভবনে এক হাজার ৪২৬ বর্গফুটের আটটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অন্যান্য সম্পত্তি রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কোম্পানির নামে বদিউজ্জামান প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও ক্রেতারা সেই প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারেনি। আবার সরকারও এখান থেকে রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে। আর অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সঠিক তদন্ত হলে এ বিষয়ে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে বলে অভিযোগকারীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। কমিটির পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাচার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ