পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজিজুল ইসলাম চৌধুরী, সুনামগঞ্জ থেকে : কয়েকদিন আগেও হাওরগুলোতে ছিল সবুজের সমারোহ। আশায় ছিল কৃষকরা ধান গোলায় তুলবে। কিন্তু এক এক করে সব হাওর ডুবে গেল । এখন জেলার সকল হাওরে অথই পানি। যে দিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। সাগরের মত হাওরে ঢেউ খেলছে। চৈত্র মাসেই হাওর ডুবে গেল। ফসল ডুবে এ অঞ্চলের মানুষের সর্বনাশ হয়েছে। অসহায় হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জের মানুষ। এখনও হাওর পাড়ের মানুষ ত্রাণ সাহায্য পাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট দুর্যোগকে দায়ী করছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকসহ সর্বস্থরের মানুষ। সময়মত টেকসই হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করলে বাঁধ মজবুত হত । বাঁধ ভেঙে ফসলের এতটা বিপর্যয় হতো না। পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সম্প্রতি বলেছেন পানি ওভার ফ্লো করায় বাঁধ ডুবে গিয়ে হাওরে প্রবেশ করেছে। মন্ত্রীর এ অভিমতের সাথে দ্বিমত পোষণ করছেন এ এলাকার মানুষ । সুনামগঞ্জ -১ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন পানি সম্পদ মন্ত্রীর এ বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে বলেন ১৮ টি বাঁধে কোন কাজই করা হয়নি। সেখানে ওভার ফ্লো করে পানি প্রবেশ করার প্রশ্ন আসে কেন। এই সংসদ সদস্যের সাথে একমত পোষণ করে এলাকার ক্ষতিগ্রস্থরা বলছেন কোন কোন বাঁধে কাজই করা হয়নি। ওভার ফ্লো হয়েছে বলার সুযোগ নেই। তাদের মতে যে বাঁধগুলো ভেঙেছে এবং হাওর তলিয়েছে তার কারণ হলো হাওররক্ষা বাঁধ ঠিকমত হয়নি। এদিকে কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে হাওরের পানি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলার সব বড় বড় হাওর এখন পানির নিচে। ছোট ছোট হাওরতো রয়েছেই। হাওর এলাকায় এমনিতেই বর্ষা মৌসুমে মানুষের কোন কাজ থাকে না। অনেকটা অলস সময় পার করতে হয়। এর মধ্যে ফসলের বিপর্যয়। কোন কাজ নেই। কিভাবে বাঁচবেন, সে টেনশনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন হাওর পাড়ের মানুষ। সরকার যতই বলুক হাওরাঞ্চলের বিপর্যস্থ মানুষের পাশে আছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা দেবে। কিন্তু তারা আশ্বস্থ হতে পারছেন না কি পরিমাণ ত্রাণ গরীবের জন্য আসবে এবং অভাবগ্রস্থরা সরকারি সাহায্য ঠিকমতে পাবে কিনা। তাদের অভিজ্ঞতায় বলে বেড়ায় ধান খায়। সাহায্য সহযোগিতা প্রভাশালীদের পকেটে চলে যায়। হাওর এলাকার অনেক মানুষের অভিযোগ এখনও হাওর পাড়ের মানুষ ত্রাণ সাহায্য পাচ্ছে না। ১০ টাকা কেজির এবং ১৫ টাকা কেজির চাল কেনার কোন সুযোগ পাচ্ছেন না তারা। তাদের দাবি হাওর পাড়ের মানুষকে বাঁচাতে হলে প্রতি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে এ চাল পৌছাতে হবে। নতুবা হাওর এলাকার মানুষকে বাঁচানো দায়। তাছাড়া ১০ টাকা এবং ১৫ টাকার চাল কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে অনেকেই। তাই দ্রæত বিনা মূল্যে চাল আগামী ফসল না ওটা পর্যন্ত দেওয়ার দাবি করছেন এলাকার মানুষ।
হাওর এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ সফিউল আলম জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশে হাওর এলাকার মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছবাব মিয়া ইনকিলাবকে বলেন হাওর এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা জোরদারের জন্য প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন তাতে হাওরাঞ্চলের মানুষের মনে বেশ উৎসাহ জেগেছে। বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে মানুষ। তবে এখনও হাওর এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌছেনি। ছবাব মিয়া পানি সম্পদমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেন হাওর রক্ষা বাঁধে ঠিকাদার ও পি আইসির সদস্যরা ঠিকমত কাজ করেনি ।যেখানে তারা ঠিকমত কাজ করে নাই এবং এ বাঁধই ভেঙ্গেছে , সেখানে ওভার ফ্লো বলা যায় কিভাবে । তবে তিনি একটি আশার কথা বলছেন, দুর্নীতির বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে । আমরা মন্ত্রীর এ কথায় আশা রাখতে চাই । ছবাব মিয়া বলেন বাঁধ নির্মানকারীরা তাদের পকেট ভারী করার জন্য কৃষক তথা এ এলাকার মানুষের সর্বনাশ করেছে । অনেক ঠিকাদার ও পি আইসির সদস্যরা নামকা ওয়াস্তে কাজ করেছে । তাই শুরু থেকেই বাঁধ নিয়ে দুনীর্তি অনিয়মের অভিযোগ করে আসছিলেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা । কিন্তু তাদের কথা কেউ তখন শুনেনি । সাবেক এ চেয়ারম্যন বলেন বাঁধ নির্মান নিয়ে প্রতি বছর অভিযোগ ওঠে দুর্নীতি ও অনিয়মের । কিন্তু এদের কিছুই হয়না । তবে এবার দুর্নীতিবাজদের একটা বিচার দেখতে চাই । তিনি আরো বলেন এখন মানুষের ঘরে ভাত নেই । মানুষ ভীষন কষ্টে আছে । এমন এক অবস্থা বিরাজ করছে যা বলে বুঝানো দায় । তিনি বলেন আমার ১ হাল জমি আঙ্গারুলি হাওরে ছিল । সব ডুবে গেছে । শুধু আমার নয় এ এলাকার অনেকের ফসল ডুবেছে । বাদাঘাটে খোলাবাজারে চাল বিজক্রির পরিমান নিতান্তই কম । কেউ পায় কেউ না । কৃষকদের তালিকা করে এবং সুষ্ট ুতদারকির মাধ্যমে সরকারী সকল সাহায্য সহযোগীতা না দিলে এলাকার মানুষ বাঁচবে না , বরং দেখা দিবে মহা বিপর্যয় । দুর্গাপুর গ্রামের নজরুল, আব্দুর রহমান, জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুছ চোবহান, আবুল বাশার, আবুল হোসেন ,আব্বাস উদ্দিন জানান ফসল হারিয়ে সব শেষ। কোন সম্বল নাই বেঁচে থাকার মত। সরকারি সাহায্য না পেলে মরা ছাড়া কোন পথ নেই। এখন আমরা পথের ফকির। জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওর ডুবে এলাকায় নেমেছে বিষাদের ছায়া। গত দু‘দিন আগে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমির পাকনার হাওর ডুবেছে। ফেনারবাকের কৃষক সাজ্জাত, আলমগীর বলেন এক ফুংগাও ধান কাটতে পারলাম না। সব ডুবে গেছে। হঠাৎ হাওরের বাঁধ ভেঙে ডুবে গেল। একই গ্রামের কৃষক শামসুদ্দোহা, খাইরুল বলেন ধান কাঁটতে পারলাম না। পরিবারে লোক বেশি কি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করবো ভেবে পাচ্ছিনা। এ গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, গরু বিক্রি করেছি। তাও পানির দামে। গরু বাঁচানোর কোন উপায় নেই। ধান নেই, খরও নেই। ফেনারবাক গ্রামের গৃহস্থ আবুল মাজন তালুকদার বলেন, ফসল হারিয়ে মহাবিপদে আছি। আমাদের পরিবার গরু-বাছুর নিয়ে আরো মহাসমস্যায়। গরু বাঁচানো যাবে না এবার। ধান তলিয়ে যাওয়ায় গো- খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে ৩টি গরু পানির দামে বিক্রি করতে হলো। তিনি বলেন এলাকায় এখনও ত্রাণ পৌঁছায়নি। ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি রেশনিং চালু করা দরকার। তাহিরপুর বরদল গ্রামের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গফফার বলেন, আমার ৬ হাল জমি মাটিয়াইন হাওরে তল হইগেছে। শধু আমার নয় এলাকার সবার জমি তল হইছে (ডুবছে)। তিনি বিমর্ষ স্বরে বলেন এলাকায় কি বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করানো দায়। মানুষদের দেখলে মনে হয় তাদের মুখে অনিশ্চয়তার চাপ। অনেকের ঘরে এক ছটাক চাল, ধান নেই। ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার খরচ নাই। হাত শূন্য। সরকারের ত্রাণ সামগ্রী এক ছটাকও আমাদের এলাকায় এখনও পৌঁছেনি। ১০ টাকার ১৫ টাকার চাল কেনার কি সামর্থ্য আছে এ এলাকার মানুষজনের। খোলা বাজারের চাল কি দিয়ে কিনবে মানুষ। ভাটির এ জনপদের মানুষকে বাঁচাতে হলে খয়রাতি চাল ও খাদ্যসামগ্রী জরুরি ভিত্তিতে দেয়া দরকার। সুনামগঞ্জে এবার ধান ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি মাছেরও ক্ষতি হয়েছে। মাছ মড়কে এ জেলার ৫০ মেট্রিক টন মাছ ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শংকর রঞ্জন দাস জানান এ ক্ষয়ক্ষতি কাঠিয়ে ওটার জন্য মৎস্য বিভাগ মাছ উৎপাদনের উদ্য্যোগ নিয়েছে। সূত্র জানায় দিরাই উপজেলায় নদী ও হাওরে ৫ দশমিক ৫ মেট্রিক টন মাছ মরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার মূল্য দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে এবার দিরাই উপজেলায় ২৮ হাজার হেক্টর জমি আবাদ হয়েছিল। প্রায় সব টুকু ডুবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দিরাই উপজেলায় ২শ’ ৯৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এটি একটি উপজেলার চিত্র। অন্যন্য উপজেলার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে। একটি সূত্রে জানা গেছে ৯ এপ্রিলের জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভার সিদ্বান্ত মোতাবেক সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙে হাওর ডুবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আহŸায়ক করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করার কথা। জেলা ত্রাণ ও পুনবাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে ১১টি উপজেলায় বিতরণের জন্য ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ১ হাজার মেট্রিক টন চাল দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ছাতক তাহিরপুর, ধর্শপাশা উপজেলায় ১শ’ ৫৫ বান ঢেউটিন দেয়া হয়েছে। জেলা কৃষি অধিদপ্তরের সূত্র মতে সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছিল। যার উৎপাদন লক্ষ্য মাত্র ধরা হয়েছিল সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন ধান। বাজার মূল্য ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু এবার হাওর ডুবে ৯০ ভাগ ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের হিসাব মতে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কৃষি বিভাগের এ হিসাবের চেয়ে আরো অধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।