মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : গত মঙ্গলবার হয়ে গেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অন্যতম জমজমাট ইভেন্ট সুপার টুইসডে। ১২টি অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত প্রাইমারিতে এদিন রিপাবলিকান ও ডেমোক্রাট দলের সমর্থকরা নির্ধারণ করলো আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রার্থী কে হবেন। মার্কিন রাজনীতির ভবিষ্যত গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে মঙ্গলবারের এই সুপার টুইস ডের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে এদিনই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ঠিক কাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় রিপাবলিকান ও ডেমোক্রাট এই দুই শিবিরে বিভক্ত মার্কিন ভোটাররা। আর গত মঙ্গলবারের এই মহারণে পরিষ্কার ব্যবধানেই দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেললেন ডেমোক্র্যাট হেভিওয়েট হিলারি ক্লিনটন এবং রিপাবলিকান ফ্রন্ট রানার মার্কিন রিয়েল স্টেট মোগল ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প আর হিলারির মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মূল লড়াই চলবে এমন আভাস এখন অনেকটা সুস্পষ্ট।
মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে ১১টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সাতটিতেই বিপুল ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্সকে পেছনে ফেলেন হিলারি। অপরদিকে সমান সংখ্যক রিপাবলিকান প্রাইমারিতে জেতেন ট্রাম্পও। এদিন ট্রাম্পের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় রক্ষণশীল রিপাবলিকান হিসেবে পরিচিত টেড ক্রুজের সঙ্গে। কিন্তু মঙ্গলবার ট্রাম্পের জয়জয়কারে যেন ঢাকা পড়ে যান টেড ক্রুজ। ১১টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে নিজের ঘরের রাজ্য টেক্সাস এবং আলাস্কা ও ওকলাহোমা ছাড়া কোথাও জিততে পারেননি তিনি। অথচ মনোনয়নের ইঁদুর দৌড়ের প্রাক্কালে তাকেই ধরা হচ্ছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে। রিপাবলিকান দলীয় হোমড়া চোমড়াদেরও সমর্থন পেয়েছিলেন তিনিই। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধরা হয়েছিল জেব বুশ কিংবা মার্কো রুবিওকে। অথচ আকস্মিকভাবে রঙ্গমঞ্চে ট্রাম্পের আবির্ভাবে পাল্টে যায় সব হিসাব নিকাশ।
মূল ধারার রিপাবলিকানরা ট্রাম্পকে সমর্থন না করলেও ডেমোক্রাটদের পরপর দুই মেয়াদের শাসনামলে অসন্তুষ্ট সাধারণ শ্বেতাঙ্গরা দলে দলে ভিড়ছেন ট্রাম্পের পতাকাতলে। চটকদার ও উস্কানিমূলক বিভিন্ন কথাবার্তা বলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকা ও কাউন্টি অঞ্চলে বসবাসকারী রক্ষণশীল শ্বেতাঙ্গদের খুব সহজেই কব্জা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন ট্রাম্প।
তবে সুপার টুইস ডেতে সবচেয়ে হতাশ করেছেন রিপাবলিকান দলের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মার্কো রুবিও। শুধু মিনেসোটায় জয় পেয়েছেন তিনি। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কো রুবিওর সব সম্ভাবনাই প্রায় শেষ হয়ে গেল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন তার শেষ ভরসা নিজ অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডা। কিন্তু ১৫ মার্চ অনুষ্ঠেয় ওই প্রাইমারিতেও জনমত জরিপে এগিয়ে সেই ট্রাম্পই।
ট্রাম্পের মতই ডেমোক্রাট দলে অপ্রতিরোধ্য হিলারি ক্লিনটন। ১১টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সাতটিতেই জিতে মনোনয়ন লাভের দৌড়ে এই মুহূর্তে হিলারিই এগিয়ে। বার্নি স্যান্ডার্স, যাকে হিলারির শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছিল, মঙ্গলবার নিজ অঙ্গরাজ্য ওকলাহোমা ছাড়া তিনি শুধু জিতেছেন ভারমন্ট, কলোরাডো এবং মিনেসোটায়। ডেমোক্রাট মহলে সোস্যাল ডেমোক্রাট হিসেবে পরিচিত বার্নি স্যান্ডার্সের জনপ্রিয়তা তরুণ ও যুবকদের মধ্যে বেশি হলেও প্রথাগত ডেমোক্রাট সমর্থক আফ্রিকান আমেরিকানরা ঝুঁকে আছে হিলারির দিকেই। ফলে কঠিন হয়ে গেছে স্যান্ডার্সের সমীকরণ। এছাড়া সুপার টুইস ডেতে যে হিলারি আর ট্রাম্পই জিতবেন সে ব্যাপারে পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল সর্বশেষ জনমত জরিপগুলোতেও। গত সোমবার ভোটাভুটি শুরুর প্রাক্কালে সিএনএনের সর্বশেষ জরিপে বার্নি স্যান্ডার্সের তুলনায় ১৭ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন হিলারি। ১১টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে মঙ্গলবার হিলারি অন্তত আটটিতে জয় পাবেন বলেও জনমত জরিপে আভাস দেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে এই মুহূর্তে ৪৯ শতাংশ রিপাবলিকান সমর্থক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করছে বলে জানানো হয় একই জরিপে।
সব মিলিয়ে সুপার টুইস ডের পর মনোনয়নের সুবাতাস পেতে শুরু করেছেন হিলারি আর ট্রাম্প। এতদিন প্রচারণা ও বক্তৃতায় নিজেদের দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণ করে কথা বলে আসলেও গত মঙ্গলবার একে অপরকে তীব্র বাক্যবানে বিদ্ধ করলেন ট্রাম্প ও হিলারি। বিপাবলিকান ভোটারদের বেশিরভাগই ট্রাম্পের কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী অবস্থানকে সমর্থন করছে বলে উঠে এসেছে জনমত জরিপগুলোতে। কোনো বহিরাগত মুসলমানকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বহীন সকল মুসলমানকে সেদেশ থেকে বের করে দেয়ার দাবি তুলেছিলেন ট্রাম্প। বিশ্বব্যাপী ট্রাম্পের এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা হলেও জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ রিপাবলিকান ভোটারই ট্রাম্পের এই দাবিকে সমর্থন করছে।
রিপাবলিকান নেতৃত্ব যে তার পরিবর্তে একজন বিকল্প প্রার্থী খুঁজছেন, এ কথা ট্রাম্পের অজানা নয়। সে কথা মাথায় রেখে মিয়ামিতে নিজের প্রচারণা কমিটির সদর দফতরে বিজয় ভাষণ দিতে গিয়ে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো রিপাবলিকান নেতৃত্বের প্রতি নরম মেজাজে বক্তব্য দেন। নিজেকে একজন সাধারণ বুদ্ধির রক্ষণশীল হিসেবে বর্ণনা করে ট্রাম্প বলেন, সাধারণ নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনের যোগ্যতা একমাত্র তার রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, আমি রিপাবলিকান দলের ভিত্তি সম্প্রসারিত করতে পেরেছি। আমি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম, সবাই যদি আমার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে নভেম্বরে আমাদের বিজয় অনিবার্য। এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।