Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঝিনাইদহে ধানী জমি বিল দেখিয়ে খাস ও জলমাহল ঘোষণা ভূমিহীন সেজে দখল চেষ্টার প্রতিবাদ জানালেন ৭ গ্রামের কৃষক

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঝিনাইদহ থেকে মোস্তফা মাজেদ : ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় ২২৪ বিঘা ব্যক্তি মালিকানাধীন ধানী জমি বিল দেখিয়ে জবর দখলের চেষ্টা করছে প্রভাবশালী মহল। এ নিয়ে কৃষি জমি হারানোর আশঙ্কায় জমির মালিকরা সাংবাদিক সম্মেলন ও জমির উপর মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। সোমবার দুপুরে মহেশপুর উপজেলার শ্রীপুর বাঙ্গালীনি মৌজার জমিতে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভৈরবা গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন। এ সময় ওই মাঠে মহেশপুরের ভৈরবা, গাড়াপোতা, ভাষানপোতা, শ্রীপুর, কুল্লোপাড়া, আমিননগর ও ভবদিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় শাতাধিক জমির মালিক ও কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মহেশপুর উপজেলার শ্রীপুর বাঙ্গালীনি মৌজার ১৪৭৬ নং দাগে সর্বমোট ২৩৯ বিঘা জমি ছিল। এর মধ্যে সরকারী জমির ১৫ বিঘা বিল রয়েছে। সরকারী বিল ইজারা দেয়া আছে। অথচ বিল ইজারা গ্রহিতারা ধানী জমি বিল দেখিয়ে খাস শ্রেণীভুক্ত করার পাঁয়তারা করছে। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে মহেশপুর উপজেলার ভাষানপোতা গ্রামের ইসলাম মন্ডলের ছেলে আব্দুল ওহাব, একই গ্রামের আছির উদ্দীনের ছেলে লুৎফর রহমান, ইজ্জত আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান ও মোহাম্মদ আলীর ছেলে আব্দুল হালিম কৃষকদের এই জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন বলে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয় উল্লেখিত ব্যক্তিরা সবাই সম্পদশালী ও দলান ঘরের মলিক অথচ তারা ভূমিহীন সমিতির সদস্য পরিচয় দিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিখাস বানিয়ে জবর দখলের চেষ্টা করছে। গ্রামবাসির ভাষ্যমতে, আব্দুল ওহাব ও জিয়া নামে দুই ব্যক্তি মালিকানাধীন ধানী জমি বিল দেখিয়ে খাস করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে এলাকার মানুষের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আব্দুল ওহাব ও জিয়া সম্পদশালী হয়েও নিজেরা ভূমিহীন সমিতি গঠন করে এই দমি দখলের চেষ্টা করছেন। ভৈরবা গ্রামের কাবের আলী অভিযোগ করেন, ১৯৬২ সালের আগেই জমির মালিক চ্যাটল্যংগিয়ার স্টেটের মালিকানা স্বত্ত লাভ করে জমি বন্দোবস্ত দিয়ে যান। তার আগে এই স্টেট কুমারী দেবী বিক্রি করে দেন চ্যাটল্যংগিয়ারের মা জয়কালী দেবীর কাছে। জমির মালিকরা অভিযোগ করেন, সরেজমিন তদন্ত না করেই ২০১১ সালে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিখাস করা হবে বলে নোটিশ দেন। নোটিশ পেয়ে জমির মালিকরা জোট বদ্ধ হয়ে হাইকোর্টে রিট করেন, যার নং ৫৮০০/১১। রিটের পর মাহাম্য হাইকোর্ট এই জমির উপর হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার জন্য ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও মহেশপুরের এসিল্যান্ডের প্রতি আদেশ দেন। এরপর বিভিন্ন সময় রেকর্ড সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ১৩টি দেওয়ানী মামলা করেন জমির মালিকরা। এ সব মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মহেশপুরের সরকারী দলের সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ সম্প্রতি মহেশপুরের ভাষানপোতা গ্রামের মাদ্রাসা মাঠের এক জনসভায় ভাগড়ির বিলের জমিতে পুকুর কেটে ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টনের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। স্থানীয় কুল্লোপাড়া গ্রামের সোহরাব হোসেন জানান, স্থানীয় এমপিকে ভুল বুঝিয়ে এরকম ঘোষণা দিয়ে তার দলের কিছু লোকজন রাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে। ওই প্রভাবশালী মহলটি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সাধারণ কৃষকদের ধানী জমি বিল দেখিয়ে জবর দখলের চেষ্টা করছেন বলে সোহরাব অভিযোগ করেন। এই জমি বেখল হলে শতাধিক হতদরিদ্র কৃষক পথে বসবে এবং চরম সামাজিক অশান্তির সৃষ্টি হবে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলার ভাষানপোতা গ্রামের আব্দুল ওহাব জানান, এমপি সাহেব এমন কোন ঘোষণা দেননি। আর তিনিও কারো কাছ থেকে জমি দেয়ার নামে টাকা তোলেননি। ধানী জমি বিল দেখিয়ে দখল চেষ্টার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে বলেন, আমি একটি ব্যাংকের মধ্যে আছি, পরে কথা বলবো। বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর-কোটচাঁদপুর নির্বাচনী এলাকার সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজের বক্তব্য নিয়ে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে এসিল্যান্ডের দায়িত্বে থাকা মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশাফুর রহমান জানান, ভাগড়ির বিল নিয়ে আইনগত জটিলতা আছে। তিনি জানান, এই জমি বিল শ্রেণীর হওয়ায় আগেই সরকারীভাবে খাস ও জলমহাল করার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষরা মামলা করায় আমরা যথাযথভাবে আইনগত প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এই জমি বন্দোবস্ত করিয়ে দেয়ার নামে কেউ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ