Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সাতক্ষীরার অজ্ঞাত রোগে চিংড়ি মাছ মরে সয়লাব পাঁচ শতাধিক কোটি টাকার ক্ষতি

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে : অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরার রপ্তানিজাত চিংড়ি ঘেরগুলোতে মাছ মরে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। জেলার ৫০ হাজার চিংড়ি ঘেরের মধ্যে কমপক্ষে ৮০ ভাগ ঘেরে এই অজ্ঞাত রোগ দেখা দিয়েছে। চাষিরা বলছে, ঘেরে গ্রেড হওয়ার উপযোগী ৯০ শতাংশ চিংড়ি মরে গেছে। এতে করে হাজার হাজার চিংড়ি চাষি সর্বস্বান্ত হতে চলেছে। বিশেষ করে ঋণ-দেনা করে যারা ঘেরে বিনিয়োগ করেছেন, তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি মাছে হঠাৎ মোড়ক লাগার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, ইতোমধ্যে চিংড়ির রোগ নির্ণয় করার জন্য বাগেরহাট মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিনিধি দল সাতক্ষীরায় এসে আক্রান্ত চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। রিপোর্ট এলে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হবে।
বাংলাদেশ চিংড়ি চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরার বিশিষ্ট চিংড়ি উৎপাদনকারী আলহাজ ডাক্তার আবুল কালাম বাবলা জানান, তার ৪০০ বিঘার একটি চিংড়ি ঘেরের প্রায় ৯৫ শতাংশ মাছ মরে গেছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে এসব মাছ গ্রেড হতো। কিন্তু কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ ঘেরেই প্রায় সমস্ত মাছ মরে গেছে। এতে তার দেড় থেকে ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে । তিনি বলেন, আক্রান্ত মাছের গায়ে তেমন কোনো ক্ষত চিহ্ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আবার জেলা মৎস্য বিভাগও বলতে পারছে না এটি কি রোগ?। অথচ দুই থেকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিটি ঘেরের ৯৫ শতাংশ মাছ মরে যাচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলার চিংড়ি মাছ চাষিরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন এই মোড়ক দেখা দেয়ায়। এতে করে জেলায় অন্তত পাঁচ শতাধিক কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
একই কথা বললেন, জেলার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের চিংড়ি চাষি গোলাম ফারুক বাবু, এনছান আলীসহ অনেকেই। তারা বললেন, চলতি মৌসুমে কয়েকশ’ বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করছেন। গত কয়েকদিনে ঘেরের প্রায় ৮০ শতাংশ চিংড়ি মরে সাফ হয়ে গেছে। এতে করে তাদের কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়ে গেছে। তারা আরো বলেন, এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘেরে একই অবস্থা।
বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে একটি সম্ভাবনাময় উপজেলা এই দেবহাটা। বছরে বিপুল পরিমাণ বাগদা চিংড়ি রপ্তানি করা হয়ে থাকে এখান থেকে। কিন্তু চলতি মৌসুমে উৎপাদন শুরুর পূর্ব মুহূর্তে উপজেলার অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরে দেখা দিয়েছে অজ্ঞাত মোড়ক। উপজেলার ৯০ শতাংশ ঘেরের চিংড়ি মরে গেছে।
দেবহাটা উপজেলার চিংড়ি চাষি নজরুল ইসলাম, আরিফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান, খোকন সরদার জানায়, গত কয়েক দিনের ব্যবধানে তাদের ঘেরের অধিকাংশ চিংড়ি মরে গেছে। তারা বলেন, এ সব মাছ আগামী ২০/২২ দিনের মধ্যে গ্রেড হতো। কিন্তু হঠাৎ করে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত ঘেরের মাছ মরে সয়লাব হয়ে গেছে ।
এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার ৬টি উপজেলাতে চলতি মৌসুম ৪৯ হাজার ১৬৩টি ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলাতে ২ হাজার ১০৫টি, তালায় ১ হাজার ২৯৫টি, দেবহাটায় ২ হাজার ৮২৯টি, আশাশুনিতে ১৩ হাজার ২১৭টি, কালিগঞ্জে ১৪ হাজার ৫৫৯টি ও শ্যামনগরে ১৫ হাজার ১৫৮টি। সূত্র আরো জানায়, ৬টি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ চাষি চলতি মৌসুমে ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার মো ঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে কি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিংড়ি মরে যাচ্ছে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে রোগ নির্ণয় করার জন্য কয়েকদিন আগে বাগেরহাট মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিনিধি দল সাতক্ষীরায় এসে আক্রান্ত চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। তাদের ওই রিপোর্ট পেলে তখই জানা যাবে কি রোগে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। এরপর চাষিদের পরামর্শ দেয়া যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাতক্ষীরা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ