পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : কাল বৈশাখি ঝড়-বৃষ্টিতে রাজধানীতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। সড়কের অবস্থাও বেহাল। রাস্তায় নেমেই নগরবাসীকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। বিশেষ করে রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ ও মৌচাক এলাকার রাস্তার অবস্থা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না, কি করুণ অবস্থা হয়ে আছে। ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের ধীরগতির জন্য এ রাস্তা দিয়ে এখন জনসাধারণের চলাচল একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবুও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ভেসে গেছে রাজধানীর অলিগলি ও রাজপথ। আর এতে নগরবাসী পড়েছে পানিবদ্ধতাসহ যানজটের ভোগান্তিতে। গতকাল সোমবার স্কুলে যাওয়া শিশুরা, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া ছাত্রছাত্রী, অফিস আদালতসহ নানা প্রয়োজনে মানুষ রাস্তায় নেমেই পড়েছে দুর্ভোগে। কোথায়ও যানজট আবার কোথায়ও যানবাহনের সঙ্কট। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে কোথায়ও হাঁটুপানি আবার কোথায়ও কাঁদাপানি মিলে একাকার অবস্থা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, যেখানে সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি আর অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাÐের কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ যেন বেড়েই চলছে। তবে এ দুর্ভোগ লাঘবে সংশিষ্টদের কোনো তৎপরতাও চোখে পড়ে না। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার কাজ হচ্ছে না। আবার কোনো কোনো এলাকায় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নেই। যে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই পানিতে ডুবে যায়। রাজধানীর ডিএনডি বাঁধসহ বহু এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে যায়। এতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। হাঁটু পানিতেই চলাচল করতে হয় ওইসব এলাকার মানুষকে। পুরান ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা সবচেয়ে অপ্রতুল। হালকা বৃষ্টি হলেই ড্রেন ভরে রাস্তায় জমে যায় পানি। দুর্গন্ধযুক্ত ও পচা পানিতেই চলতে হয়ে পুরান ঢাকাবাসীকে। একই অবস্থা রাজধানীর অন্যান্য এলাকারও।
২০০১ সালের পর আবহাওয়ার এমন বিরূপ চেহারা নাকি দেখেননি আবহাওয়াবিদরাও। ভারী জলীয়বাষ্পের আধিক্য মেঘকে নামিয়ে আনছে সমতলে। এর সঙ্গে টানা বর্ষণ আর দমকা হাওয়া। প্রকৃতির এই বেখেয়ালিপনা নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বহুগুন। তার ওপর মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ রাজধানীর যে এলাকায় চলছে, তাদের কাছে এ দুর্ভোগ অনেকটা দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।
রোববার বিকেল থেকেই শুরু হয় ভোগান্তি। কুয়াশার মতো ভারী জলীয় বাষ্পসমেত হালকা মেঘ যখন সমতলে নেমে আসে, তখন আতঙ্ক দেখা দেয় অনেকের মধ্যে। তবে রাতে যখন শুরু হয় কালবৈশাখী সমেত শিলাবৃষ্টি ও বিদ্যুৎ চমকানো (বজ্রপাত), তখন সে আতঙ্ক বাড়ে বহুগুন। এ অবস্থান গত দুইদিন ধরে নগরবাসীকে কর্মস্থলে যাওয়া-আসা করতে হয়েছে অনেককেই কাক ভেজা হয়ে।
এমনিতে রাজধানীতে দুর্ভোগের শেষ নেই। সেই সঙ্গে রাতভর টানাবৃষ্টি যখন সকালগড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তখন গোটা রাজধানীতে দুর্ভোগের মাত্রা যে বহুগুন বেড়ে যাবে সে কথা আর কারো অজানা থাকার কথা নয়। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অফিসগামী নগরবাসী, রিকশা চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সবজিওয়ালা, হকার, বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল দুর্ভোগ সবাইকেই এক কাতারে দাঁড় করায়। শুধু তাই নয়, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়া মধ্যবিত্ত বা দামি গাড়িতে চলা উচ্চবিত্তও বাদ পড়েননি দুর্ভোগের করাতে কাটা পড়তে। রাজপথের পানিজটে গাড়ি বন্ধ হওয়ায়, হাঁটুজলে নেমে তাদেরও গাড়ি ঠেলতে হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল থেকেই পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে পুরান ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায়। এছাড়াও পোস্তগোলা, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী, মানিকনগর, মুগদা, মান্ডা, বাসাবো, মাদারটেক, নন্দিপাড়া, গোড়ান, সিপাইবাগ, মেরাদিয়া, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিবাগ, গুলবাগ, রাজারবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, মগবাজার, রমনা, খিলগাঁও, তালতলা, মিরপুর, পল্লবী, শ্যমলি, কল্যাণপুর, শ্যাওড়াপাড়া, মণিপুর, কাজীপাড়া, জিগাতলা, আগারগাঁওয়ের নিচু এলাকা ও গলিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন- মিরপুর, পল্লবী, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, রামপুরা, মৌচাক, সিদ্ধেশ্বরী, শান্তিনগর, রাজারবাগ ও মগবাজার এলাকার মানুষেরা। মেট্রোরেল প্রকল্প চলমান থাকা ও ফ্লাইওভারের কাজ শেষ না হওয়ায় এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে এই অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত।
শাহজাহান পুর আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে কথা হয় শিরিন সুলতানার সাথে। তিনি বলেন, বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলে রেডি করে বসেছিলাম, বৃষ্টিও থামে না, রিকশাও মেলে না। হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই। রাস্তায় হাঁটু পানি। ওদিকে স্কুলে বাচ্চার পরীক্ষা। অবশেষে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আসতে হলো।
অসবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা থাকেন টিকাটুলির অভয় দাস লেনে। বাজারের জন্য গোপিবাগ বাজারে রওয়ানা হয়ে ভিজে আবার বাসায় ফেরত যান। কারণ, পানিজটে রিকশারও আকাল।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বাংলাদেশে এ বছরের এপ্রিলে গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে সমতলে মেঘ নেমে আসার ঘটনা ঘটল ১৬ বছর পর। আবার এবারই প্রথম মার্চের শেষ চারদিনে সিলেট অঞ্চলে গড়ে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তাদের ভাষায়, স্বাভাবিকের তুলনায় ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১১৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। মাসের বাকি সময়টা আর বৃষ্টি না হলেও স্বাভাবিকের তুলনায় এ মাসে ৬৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি থাকবে।
বাংলাদেশে এপ্রিলের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে। সেটি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৬ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশে এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫,২৮৬ মিলিমিটার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।