Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হালদার পাড়ে ডিম থেকে রেণু ফোটানোর উৎসব চলছে

মৎস্য ও হ্যাচারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী : এশিয়ার বিখ্যাত প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর পাড়ে রেণু ফোটানোর উৎসব চলছে। গত শুক্রবার রাতে নদী থেকে ডিম আহরণের পর সরকারি হ্যাচারি ও সনাতনী পদ্ধতির মাটি কুয়ায় ডিম ফোটানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ডিম আহরণকারীরা। হালদা নদীর হাটহাজারী এলাকায় মদুনাঘাট হ্যাচারি, শাহ্ মাদারী হ্যাচারি ও মাছুয়া ঘোনা তিনটি সরকারি হ্যাচারি ও সরকারি গড়দুয়ারা হ্যাচারি এবং মাদার্শা আমতুয়া, অঙ্কুরীঘোনা, কান্তার আলী হাট, নতুনহাট, সিপাইর ঘাট, রামদাশ মুন্সীরহাট, বাড়ীয়াঘোনাসহ এসব এলাকায় ডিম ফোটানোর উৎসব চলছে।
এদিকে ডিম সংগ্রহকারীরা মৎস্য ও হ্যাচারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ডিম থেকে রেণু ফোটানোর শাহ-মাদারী হ্যাচারির পাকা ক‚য়াগুলো অযতেœ-অবহেলায় ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রেণু ফোটানোর ক‚য়াগুলোতে এক ক‚য়া থেকে অন্য ক‚য়াতে পানি চলাচল করে। তাছাড়া নদী থেকে পানি উত্তোলনের মেশিনটি চালানোর জনবল না থাকায় নষ্ট হয়ে যায়। তাই হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য চরম বিপাকে পড়েছে। উত্তর মার্দাসার ইউপি মেম্বার নেছার মাহামুদের সহযোগিতায় হ্যাচারিতে ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কাজে ব্যবহৃত পানি তোলার মেশিনটি কোনোরকম চালু করেন। গত ১০ বছর পূর্বে এই হ্যাচারি প্রতিষ্ঠত হলেও হালদার ডিম দেয়া নিয়ে এলাকায় ও জনমনে আগাম জানিয়ে দেয়া হয়। এরপরও এ হ্যচারিগুলো অব্যস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণা না করেই রেখে দেয় মৎস্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।এতে করে ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কাজে ডিম সংগ্রহকারীদের ব্যাপক হিমসিম খেতে হচ্ছে। উক্ত এলাকার ডিম সংগ্রহকারী মৃদুল জনদাশ এই প্রতিবেদককে জানান, এই হ্যাচারিটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজে হাত দেয়নি কর্তৃপক্ষ। মৌসুমের ৫-৬ দিন এই হ্যাচারি ডিম সংগ্রহকারীরা ব্যবহার করলেও আমরা পরবর্তী মৌসুম পর্যন্ত ৯-১০ মাস এই হ্যাচারি ব্যবহার করি না। শুধু মাত্র ডিম সংগ্রহ করে রেণু ফোটানোর কাজে কয়েকদিন ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সরকার আমাদের কাছ থেকে ৫% হারে টাকা নিয়ে থাকে। এরপরও এই হ্যাচারিটির কোনো উন্নয়ন হয়নি।
জানা যায়, এবার আনুমানিক পানিসহ দেড়হাজার-দুইহাজার কেজি ডিম আহরণ করা হয়েছে। এসব ডিম থেকে প্রায় পাঁচশত কেজি রেণু উদপাদিত হতে পারে। গত বছর ২০১৪ সালে ৫মে হালদা নদীতে প্রথম ধাপে ৪ হাজার ২ শ’ ৫০ কেজি ডিম পাওয়া যায়। তবে ২০১৬-১৬ সালে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম পাওয়া যায়নি। এসব ডিম থেকে উদপাদিত রেণুর পরিমাণ ছিল ২ শ’ ৫৮ কেজি। এবারো হালদা নদীতে মা মাছের দ্বিতীয় দফায় ডিম ছাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। যদি আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুক‚ল এবং আগামী ২৫ এপ্রিল অমাবস্যা পূর্ণিমাতিথিতে মুসলধারে বৃষ্টি, মেঘের গর্জন, পাহাড়ি ঢলের স্রোত ঠিক থাকে, তবে আরেক দফা ডিম ছাড়তে পারে।
এদিকে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে রেণু বিক্রি করা হবে বলে ডিম সংগ্রহকারী হরিলাল দাশ জানান। প্রতি কেজি রেণুর মূল্য আনুমানিক এবার ১লক্ষ টাকার উপর বিক্রি করা হবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা হতে রেণু ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। হালদার পাড়ে ক্রেতা বিক্রেতারা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। হালদার রেণু খুব তাড়াতাড়ি বড় হয় বলে এই রেণুর চাহিদাও বেশি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা টাকা নিয়ে রেণু ক্রয় করার জন্য আসলে হালদার পাড়ে রেণু বিক্রয়ের টাকা লেনদেন হতে পারে। সেই আশঙ্কায় রেণু ক্রেতা-বিক্রেতারা স্থানীয় প্রসাশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এদিকে ভেজাল রেণুর ব্যবসাও শুরু করেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবী। দীর্ঘ ১২ঘণ্টা পর হালদা নদী থেকে আহরিত ডিম হতে রেণুর চোখ ফোটে এই রেণু ফোটানোর কাজে ডিম সংগ্রহকারীরা দিন-রাত পরিশ্রম করেছে। আগামী পূর্ণিমাতিথিতে পুনরায় মা মাছ ডিম দেয়ার প্রহর গুণছে ডিম সংগ্রহকারীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হালদা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ