Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাডার ক্রয় দুর্নীতি মামলায় এরশাদসহ সবাই খালাস

| প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কোর্ট রিপোর্টার : বিমানের রাডার ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ তিন আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল বিকেলে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা রায় ঘোষণা করে এ আদেশ দেন। খালাস পাওয়া অপর দুই আসামি হলেনÑ বিমানবাহিনীর সাবেক দুই প্রধান সুলতান মাহমুদ ও মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া মামলার অপর আসামি ইউনাইটেড ট্রেডার্সের পরিচালক এ কে এম মুসা মামলার বিচার চলাকালে পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন।
আদালতের পরিবেশ : সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গতকাল বিকেল ৩টা ৪২ মিনিটে আদালতে এসেছিলেন কালো সাফারি পরে। এ সময় এরশাদের ভাই জি এম কাদের, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এবং পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙাকে সঙ্গে নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। এরআগে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং কাজী ফিরোজ রশীদ আগ থেকেই আদালত কক্ষে হাজির ছিলেন। আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর এরশাদকে আসামির কাঠগড়ার পাশে একটি চেয়ারে বসতে দেয়া হয়। রায় ঘোষণার শুরুতে তিনি নির্বিকার ছিলেন। রায়ের পরও তিনি কোনো কথা বলেননি। রায় ঘোষণার পর ৪টা ২০ মিনিটের সময় আদালত অঙ্গন ত্যাগ করেন। এরআগে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল দুপুর থেকেই জতীয় পর্টির নেতাকর্মীরা আদালত এলাকায় আসতে শুরু করেন। এ সময় নেতাকর্মীরা পুরান ঢাকার নর্থসাউথ রোড থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এরশাদের সমর্থনে দলের নেতাকর্মীরা রাস্তায় মিছিল করে। তারা মুহুর্মুহু সেøাগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন। এসময় রায় সাহেববাজার মোড়সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যান চলাচল কিছু সময় বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে আদালত এলাকায় সকাল থেকেই পুলিশ কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা জোরদার করে। মোতায়েন করা হয় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিপুলসংখ্যক সাদা পোশাকের অতিরিক্ত পুলিশ।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এরশাদের আইনজীবী শেখ মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আজ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ মামলায় এরশাদ সুবিচার পেয়েছেন। রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে এরশাদ নির্দোষ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পরে তা পর্যালোচনা করার পর দুদক এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
রায়ের আদেশে বলা হয়েছে : প্রেসিডেন্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে কথিত রাডার ক্রয়ের বিষয়ে অর্থ আত্মসাৎ বা কাহাকেও অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করিয়া দেয়ার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করিতে সক্ষম হয়নি। ফলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাছাড়া মামলার অপর দুই আসামি বিমানবাহিনীর সাবেক দুই প্রধান সুলতান মাহমুদ ও মমতাজ উদ্দিন আহমেদ আলোচ্য রাডার ক্রয়ের বিষয়ে কোনো অর্থ আত্মসাৎ করিয়াছেন বা অপর কাহাকেও সহায়তা করার বিষয়টিও সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হয় নাই। তাছাড়া সাক্ষ্য-প্রমাণ দৃষ্টে যেহেতু ইহা প্রতীয়মান হইয়াছে যে, উল্লিখিত রাডার ক্রয়ের বিষয়ে মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনের আলোকে প্রতিরক্ষা সচিব সুপারিশসহ উপস্থাপিত সার-সংক্ষেপ মোতাবেক সাবেক প্রেসিডেন্ট শুধু ফরমাল অনুমোদন প্রদান করিয়াছেন সেহেতু সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষমতার কোনোরুপ অপব্যবহার করা হইয়াছে বলিয়া প্রতীয়মান হয়নি। যেহেতু বিষয়টি প্রেসিডেন্টের অনুমোদিত হইয়াছে সেহেতু উক্ত বিষয়ে অপর দুই আসামি আর কোনো দায় দায়িত্ব বর্তায় না। তাই রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে এরশাদসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে মামলার দায় থেকে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হলো। রায়ে আরো বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি দুদক। রাডার ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির প্রস্তাব শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে এরশাদ অনুমোদন দেন।
মামলা সমাচার : সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদসহ চার জনের বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালের ৪ মে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো এ মামলা দায়ের করে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ফ্রান্সের থমসন সিএসএফ কোম্পানির ‘অত্যাধুনিক’ রাডার না কিনে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ওয়েস্টিন হাউজের রাডার কিনে আসামিরা রাষ্ট্রের ৬৪ কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯১৮ টাকা আর্থিক ক্ষতি করেছে। পরে ঘটনার তদন্ত করে ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়। পরে এ মামলার আসামি ইউনাইটেড ট্রেডার্সের পরিচালক শাহজাদ আলীকে অব্যাহতি দিয়ে ১৯৯৫ সালের ১২ আগস্ট এরশাদসহ চার আসামির বিচার শুরু করে আদালত। পরে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের আদেশে স্থগিত থাকে। আইনি বাধা কাটলে ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। পরে ২০১৪ সালের ১৫ মে এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে লিখিত বক্তব্য দেন বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ। সেদিন অন্য দুই আসামি বিমানবাহিনীর সাবেক দুই শীর্ষ কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও সুলতান মাহমুদও নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বক্তব্য দেন।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২০ এপ্রিল, ২০১৭, ৩:৪৮ এএম says : 0
    প্রক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ তার বিরুদ্ধে আনিত মামলার একটি থেকে নির্দোষ প্রমানিত হয়ে আপাতত খালাশ পেয়েছেন। কিন্তু আবার এই মামলা যদি আপীল হয় তাহলে আবার তিনি ঝুলে যাবেন। তবে রায়ের যে বিবরণ তাতে এটা পুনরায় আপীল করাটা দুদুকের জন্য সঠিক হবে না আমার মনে হয়। এরপর আরো যে কয়েকটা মামলা তার নামে ঝুলছে সেগুলো যদি আলোর মুখ দেখে এবং একই ভাবে এরশাদ চাচা নির্দোষ প্রমানিত হন তাহলে বিএনপির খবর আছে এটা আমার কেন যেন মনে হচ্ছে। দেখা যাক কি হয়, সময় বলে দিবে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল। আল্লাহ্‌ সর্বশ্রেষ্ট বিচারক এতে কোনই সন্দেহ নেই। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ