Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুতের লুকোচুরি জনগণ অতিষ্ঠ

ওজোপাডিকোর ২১ জেলায় গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে

প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক/আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : আসন্ন গ্রীষ্মে সরবরাহ বৃদ্ধি ও নিরাপদ সঞ্চালনে পদ্মার এপারের ২১ জেলায় লাখ লাখ গ্রাহকের ভোগান্তি লাঘবে কোনো কার্যক্রমই শুরু করেনি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো)। ফলে বসন্তের দমকা হাওয়া বইলে বা বর্ষার সম্ভাবনা দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। পুরনো উপ-সঞ্চালন লাইন উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যেমন সামান্য বাতাসেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, তেমনি ব্যবস্থাগত ত্রুটির কারণে সিস্টেম লসের কবলে পড়ছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। ফলে গত ৭ বছরে নয়বার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হলেও ভোগান্তি ক্রমাগত বাড়ছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্রমতে, পদ্মার এপারের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, বরগুনা, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরাসহ ২১ জেলার বিদ্যুৎ বিভাগ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) অধীনে রয়েছে। এসব এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর নিরাপদ বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য এ বছর গ্রীষ্মের পূর্বপ্রস্তুতি এখনো গ্রহণ করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্র জানিয়েছেন। পূর্বে গ্রীষ্মের শুরুতেই বিদ্যুৎ লাইনের আশপাশের গাছপালার বর্ধিত অংশ কেটে-ছেঁটে দেয়া হতো। প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হতো সঞ্চালন লাইনের পুরনো তার ও মিটারসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি। রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবস্থাগত যন্ত্রাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হতো সর্বোত্তমভাবে। কিন্তু চলতি বছরে ওজোপাডিকো এখনো এসব কার্যক্রম শুরুই করেনি বলে সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে যাওয়া দীর্ঘদিনের পুরনো লাইনের অধিকাংশ টাওয়ার জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে এসব টাওয়ারের অ্যাঙ্গেল, নাটবল্টু চুরি হয়ে যায়। এমনকি বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ থাকা অবস্থায় তার চুরির ঘটনাও ঘটে। এছাড়া ঝড়-বৃষ্টি হলে গাছ বা গাছের ডাল, সুপারি-নারিকেল গাছের ডগা পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিকালে বা সন্ধ্যার পর এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। গ্রাম, চিংড়ি ঘের, বাগান ইত্যাদি দুর্গম স্থানে দুর্ঘটনার স্পট খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছেন বিদ্যুৎ কর্মীরা।
একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, অনেকগুলো রুটিন ওয়ার্ক ঠিকমতো করা হচ্ছে না। গ্রীষ্মকালীন কিছু জরুরি কাজ থাকে সেগুলো তো এখনো শুরুই করা হয়নি। গ্রাহকদের সরাসরি টোপের মুখে পড়ার কারণে অনুরূপ অভিযোগ বিদ্যুৎকর্মীদেরও।
ওজোপাডিকো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সূত্র জানায়, অফপিক আওয়ারে ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মোট চাহিদা থাকছে ৫৩১ দশমিক ৪ মেগাওয়াট এবং সরবরাহ হয় সমপরিমাণ বিদ্যুৎ। একইভাবে পিক আওয়ারে ৯৩৯ দশমিক ৮ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতেও সমপরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় তখনও কোনো  লোডশেডিং ছিল না। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। যদিও সবে গরম শুরু হলেও বৃষ্টির কারণে সেটি আঁচ করতে পারেনি জনসাধারণ।
অপর একটি সূত্র জানায়, পদ্মার এপারের ২১ জেলায় পিক আওয়ারে ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু ছিল। ঐতিহ্যবাহী খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১১০ ও ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র যথারীতি বন্ধই ছিল। পিক আওয়ারে কেপিসিএল-১এ ১০৫, কেপিসিএল-২এ ১১৫, কুইক রেন্টালে ৫৬, ফরিদপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩৪, খুলনা নর্থ ওয়েস্ট কোম্পানিতে ৮০, বরিশাল গ্যাস টারবাইন-২এ ১৫, ভোলা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮৭, ভোলা রেন্টালে ৬, নওয়াপাড়া-২এ ৪০, গোপালগঞ্জে ৯০, ভেড়ামারা-১ এ ১৬ এবং ভেড়ামারা-৩ এ ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। সকালেও চালু ছিল ৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ সময় ভারত-বাংলাদেশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেয়া হয় ৪৫৯ মেগাওয়াট। আগের দিনও পদ্মার এপারের ২১ জেলায় ছিল না কোনো লোডশেডিং। কিন্তু বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা থেকে রেহাই পায়নি জনগণ। গ্রীষ্মকালীন চালিদা আরো বাড়বে। সে জন্য এখনই উৎপাদন বৃদ্ধি না করা হলে গরমে গ্রাহকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বয়ং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারাই।
লোডশেডিং না থাকলেও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে ওজোপাডিকোর শীর্ষস্থানীয় এক কর্তা বলেন, ট্রান্সফরমার বিকল হওয়া, কারিগরি ত্রুটি আর গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এমনটি হচ্ছে। কখনও কখনও গাছপালা পড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।
একাধিকবার ফোন করা হলেও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল)-এর নির্দিষ্ট মোবাইল রিসিভ করেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুতের লুকোচুরি জনগণ অতিষ্ঠ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ