Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’র মিয়ানমার অতিক্রম ভ্যাপসা গরম অব্যাহত

গরমের মাত্রা বাড়তে পারে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে মিয়ানমার অভিমুখী গতিপথ বজায় রেখে অগ্রসর হয়। ঘূর্ণিঝড়টি গত মধ্যরাতে মিয়ানমারের সান্দোওয়ে উপকূলভাগ অতিক্রম শুরু করে।
গত শনিবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নি¤œচাপ ও গভীর নি¤œচাপ ঘনীভূত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে গতকাল (রোববার) ভোররাতে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’য় পরিণত হয়। এদিকে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের দিকে গতিমুখ পরিবর্তন তথা না ঘুরিয়ে মিয়ানমারের দিকে অগ্রসর হয়ে কেটে গেলেও এর বর্ধিত প্রভাব পড়তে পারে দেশের আবহাওয়ামÐলের উপর। আর এতে বৈশাখজুড়ে গরমের মাত্রা ক্রমাগত বেড়ে যেতে পারে। তবে সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে হিমেল ও দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে ওইসব জায়গায় দাবদাহের মাত্রা কমে আসতে পারে। দাবদাহের সাথে এ মাসে বজ্রপাত, বজ্র-ঝড় ও কালবৈশাখীর ঘনঘটা রয়েছে।
চলতি এপ্রিল (চৈত্র-বৈশাখ) মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানানো হয়, দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ২ থেকে ৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি থেকে প্রবল আকারে কালবৈশাখী, বজ্র-ঝড়, বজ্রপাত এবং দেশের অন্যত্র ৪ থেকে ৫ দিন হালকা থেকে মাঝারি আকারে কালবৈশাখী, বজ্রঝড়, বজ্রপাত সংঘটিত হতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তীব্র তাপদাহের সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। তাছাড়া দেশের অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু (তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে.) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দেশে স্বাভাবিক অথবা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গত মার্চ মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২ ভাগ বেশিই বৃষ্টিপাত হয়েছিল।  
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’র প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে সমুদ্র বন্দরসমূহকে ২নং সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের উপকূল অঞ্চলসহ অনেক জায়গায় ভ্যাপসা গরম পড়ছে। তবে কোথাও কোথাও দমকা হাওয়া বয়ে যায়। চট্টগ্রামে দুপুরে হঠাৎ আকাশ কালো করে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রসহ ক্ষণিকের বৃষ্টি নামে। তবে এতেও স্বস্তি আসেনি। কেননা বৃষ্টি থামতেই ফের গরমের তেজ আরও বেড়ে চলে। ঘূর্ণিঝড়টির বর্ধিত প্রভাবে দেশের অনেক জায়গায় আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। অনেক জায়গায় দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’ আরো উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে এটির সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যায় অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে। ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’ আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আরো অগ্রসর হতে পারে। এটি গত মধ্যরাতের দিকে মিয়ানমারের সান্দোওয়ে উপকূলভাগ অতিক্রম করে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২নং দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সমুদ্রে মাছ শিকারি সকল ট্রলার নৌযানকে উপকূলভাগের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।  
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিরাজ করছে। আজ (সোমবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরবর্তী ৫ দিনে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা থাকতে পারে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৩১.৫ ও ২২.২ ডিগ্রি সে., চট্টগ্রামে ৩২ ও ২৫ ডিগ্রি সে.। ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’র প্রভাবে এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় বগুড়ায় ৫৩ মিলিমিটার।



 

Show all comments
  • মোবারক ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ৪:২১ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে সকল বালা মুসিবত থেকে হেফাজত করো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ