Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ইলিশ দিয়ে পান্তা খাওয়ার সংস্কৃতি বাঙালির প্রাচীন শিল্প-সাহিত্যে পাওয়া যায় না

| প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : পান্তা ভাতে মরিচ-পেঁয়াজ/গরম ভাতে ভর্তা/সকাল বিকাল খেয়ে জবর/ঘুমান গাঁয়ের কর্তা। এই পংতিগুলো একটি ছড়া কবিতার অংশ। বাঙালির পান্তা খাওয়ার সংস্কৃতি সংক্রান্ত এ কবিতাংশ নির্দেশ করে পান্তা ভাত ও মরিচ-পেঁয়াজের মধ্যে একটি রসায়ন রয়েছে। বাঙালিরা মরিচ-পেঁয়াজ দিয়ে পান্তা খেতে ভালবাসে। আর ভর্তা দিয়ে খায় গরম ভাত। এটি একটি লোক সংস্কৃতি, প্রকাশিত হয়েছে একটি ছড়া কবিতার মাধ্যমে। কিন্তু ইলিশ দিয়ে পান্তা খাওয়ার কোন সংস্কৃতি বাঙালির শিল্প-সাহিত্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। ইলিশ ভাজা দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া বাঙালির জন্য একটি অপ-সংস্কৃতি। কেউ কেউ পয়লা বৈশাখে এই পান্তা-ইলিশ খাওয়াকে একটি অভদ্র সংস্কৃতি বলে আখ্যায়িত করেছে। এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন নরসিংদীর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, নরসিংদী সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম মোস্তফা মিয়াসহ অনেক বাঙালি পন্ডিতগণ। তারা বলেছেন, প্রাচীন বাংলার শিল্প সাহিত্যে যেমন পান্তা-ইলিশ সম্পর্কিত কোন গান, কবিতা, লোকগাঁথা, লোকসংগীত, প্রবন্ধ, নিবন্ধ পাওয়া যায় না। তেমনই আধুনিক বাংলার শিল্প সাহিত্যেও পান্তা ইলিশ সম্পর্কিত কোন লোক সংস্কৃতির কোন নিদর্শন পাওয়া যায় না। এছাড়া বিশ্ব বিখ্যাত বাঙালি জ্যোতির্বিদ খনার বচনেও পান্তা-ইলিশ সম্পর্কিত কোন লোক সংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে বলে জানা যায়নি। কোন জনশ্রæতিমূলক প্রবচনও পাওয়া যায় না পান্তা-ইলিশ সম্পর্কে। বাংলা অভিধানে পাওয়া যায় ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ ধরনের একটি প্রবচন। এই প্রবচনটিতেও ইংগিত করা হয়েছে পান্তা ভাতের সাথে নুনের বা লবনের একটি রসায়নের কথা। এ প্রবচনটিতে লবন দিয়ে বাঙালি পান্তা ভাত খাওয়ার ইংগিত রয়েছে। আশ্বিন, কার্তিক মাসে বড় পূর্ণিমা এলে নদ-নদীতে প্রচুর সংখ্যক ইলিশ মাছ পাওয়া যেতো। সে সময় মাছ কিছু সস্তা হলে সাধারণ বাঙালিরা বছরে ২/১টি ইলিশ মাছ খাওয়ার সুযোগ পেতো। একটি দেশের লোক-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হচ্ছে সে দেশের শিল্প-সাহিত্য। বাঙালি শিল্প সাহিত্যের প্রাচীন মধ্য ও আধুনিককালের কোথাও লোক-সংস্কৃতি হিসেবে ইলিশ-পান্তার কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না।
একটি পরিসংখ্যন থেকে জানা গেছে, স্বাধীনতাত্তোর কালের ১৯৭২ সালে দেশে ২ লক্ষ ২৬ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। এরপর সেটা বেড়ে পৌনে ৩ লাখ টন পর্যন্ত ইলিশ উৎপাদিত হতো। পদ্মার উজানে ফারাক্কা বাধ নির্মাণের পর বাংলাদেশের ইলিশ সম্পদ আরো কমে যায়। বাঁধের কারণে পদ্মায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় সমুদ্র থেকে পদ্মায় ইলিশ মাছের আনাগোনা অনেক কমে গেছে। সাম্প্রতিককালে দেশের মৎস গবেষণা ইন্সটিটিউট ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমুহের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ডিমওয়ালা ইলিশ নিধন ও জাটকা নিধন কমে আসার কারণে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। এই পরিমাণ ইলিশ সাধারণ বাঙালির জন্য খুবই কম হলেও বাঙালির মনে আশার সঞ্চার হয়েছে যে, ভবিষ্যতে দেশে ইলিশের উৎপাদন আরো বাড়বে। বাংলাদেশের এই বর্ধিষ্ণু এ ইলিশ সম্পদ ধ্বংস করার জন্য একটি অতি বাঙালি মহল বাংলাদেশি বাঙালিদের ঘাড়ে ইলিশ পান্তার কথিত লোক-সংস্কৃতি চাপিয়ে দিয়েছে। এদের উদ্দেশ হলো বাংলাদেশের রূপালি সম্পদ ইলিশকে ধ্বংস করা। ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মার সু-স্বাদু ইলিশ অর্ধেক প্রায় কমে গেছে। বাকীটুকু শেষ করার জন্যই এই পান্তা-ইলিশ নামক অপ-সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইলিশ

২০ নভেম্বর, ২০২২
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ