Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মুরাদনগর সদরে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশঙ্কা বিএনপির কুমিল্লার চার উপজেলায় নির্বাচনী হাওয়া

| প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লায় আবারো শুরু হয়েছে নির্বাচনী হাওয়া। আর এ হাওয়া লেগেছে গ্রামীণ জনপদের তৃণমূলের রাজনীতিতে। আর মাত্র তিনদিন পর কুমিল্লার মুরাদনগর, তিতাস, হোমনা ও বরুড়া উপজেলার চার ইউনিয়নে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ছোট আকারের নির্বাচন হলেও ভোটার এলাকাগুলো প্রচারণায় সরগরম হয়ে ওঠেছে। বিশেষ করে কুমিল্লার রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি পড়েছে মুরাদনগরের সদর ইউনিয়নের নির্বাচনের দিকে। কেননা গত বছর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শেষধাপে এটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও হাইকোর্টের নির্দেশে পর পর দুইবার নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আইনি জটিলতা শেষ করে প্রায় সাড়ে দশমাস পর অনুষ্ঠিত মুরাদনগর সদর ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের দাপটের কারণে বিএনপির প্রার্থীসহ সাধারণ ভোটারদের মাঝে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত বছর জুনে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী তিতাসের জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের মনির হোসেন ৮ নভেম্বর দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হোন। আর এবছরের ফেব্রæয়ারি মাসে মারা যান হোমনার ভাষানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বিএসসি। মৃত্যুজনিত কারণে ওই দুই ইউনিয়নে শূন্য হওয়া চেয়ারম্যান পদে ও বরুড়ার চিতড্ডা ইউনিয়নের ১নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে বন্ধ হওয়া ভোটকেন্দ্রে কেবল সদস্য পদে এবং হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত থাকা মুরাদনগর সদর ইউনিয়নে সকল পদে আগামী ১৬ এপ্রিল এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিতাস ও হোমনার দুইটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে তফসিল ঘোষণার পর জমে ওঠে নির্বাচনী প্রচারণা। তিতাসের জিয়ারকান্দিতে বিএনপি কোন প্রার্থী না দিলেও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহীর প্রচারণা নির্বাচনী পরিবেশ সরগরম করে তুলেছে। তিতাসের জিয়ারকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে লড়ছেন আলী আশরাফ। আর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত সারোয়ার হোসেন সরকার বিদ্রোহীর ভূমিকায় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। হোমনায় বিএনপি প্রার্থী আবু নাছের ওয়াহেদের সঙ্গে লড়ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ছাদেক সরকারসহ একই দলের দুই বিদ্রোহী কামরুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান।
এদিকে জমজমাট প্রচারণার মধ্যেও গ্রেফতার আতঙ্ক ও ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে মুরাদনগর উপজেলা সদরে। ওই উপজেলার ১৩নম্বর সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শফিকুল ইসলাম। আর বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন মুজিবুর রহমান মোল্লা। তিনি সদর ইউনিয়ন থেকে নির্বাচিত হয়ে টানা ৯বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ দুই প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র থেকে মাসুদ রানা ও ইসলামী শাসনতন্ত্র থেকে মো. ওমর ফারুক চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ রানাকে মুরাদনগর থানা পুলিশ গত ৩ এপ্রিল গ্রেফতার করে। সে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। কুমিল্লার যে চারটি উপজেলায় উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তারমধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের নির্বাচন। মুরাদনগরের ১৩ নম্বর সদর ইউনিয়নের নির্বাচন গত বছরের ৪জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ওই সময়ে সীমানা সংক্রান্ত আইনি জটিলতা কারণে হাইকোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন ১৩ নম্বর সদর ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত রাখে। পরবর্তীতে বিষয়টির ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। তারপর নির্বাচন কমিশন থেকে ৩১ অক্টোবর এ নির্বাচন করার নির্দেশনা আসে। এ নির্দেশনার পর মুরাদনগর সদরের বাসিন্দা কাজী সাইফুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. সেলিমের যৌথবেঞ্চ মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের নির্বাচন পরবর্তী ছয় মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। দুইদফা স্থগিতের প্রায় সাড়ে দশ মাস পর যখন মুরাদনগর সদর ইউনিয়নে নির্বাচনের হাওয়া শুরু হয় তখনই সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গ্রেফতার আতঙ্ক। দলটির স্থানীয় নেতারা বলছেন, বর্তমানে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে কুমিল্লা সিটির মতো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন মুরাদনগর সদরেও সবাই প্রত্যাশা করছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের লোকজন নির্বাচন ঘনিয়ে আসার শেষ মুহূর্তে ভোটার এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে। ভোটারদের কেন্দ্রে না আসতে বাধ্য করা, কেন্দ্র দখল করার পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে তারা। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের লোকজন এলাকায় পেশীশক্তি প্রদর্শনের মহড়া শুরু করেছে। বিএনপি নেতারা সদর ইউনিয়নের সবকটি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের মধ্যদিয়ে নির্বিঘেœ-নিরাপদে ভোট দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টির দাবী করেছেন। অন্যদিকে মুরাদনগর আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচনী

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ