বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মো. শামসুল আলম খান : মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা জাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক সরকারকে (৬০) ভর্তি করা হলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে।
কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছার পরপরই দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলেন। এরপর তার স্বজন ও সহকর্মীরা সিদ্ধান্ত নিলেন লাশ কোনো কাটা-ছেঁড়া নয়। ময়না তদন্ত ছাড়াই শেষ গন্তব্যে নিয়ে যাবেন লাশটি। কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গেও আলাপ হলো। তারা পরামর্শ দিলেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ) ল²ী নারায়ণ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তিনি বেঁকে বসলেন। লিখিত আবেদন ছাড়া লাশ নিয়ে যাওয়া যাবে না। একই সঙ্গে পুলিশের অনুমতিও লাগবে, জানালেন।
পৃথকভাবে মৃতের সহকর্মীরা মোবাইলে কথা বললেন কোতোয়ালী মডেল থানা ও ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম ও রিফাত খান রাজিবের সঙ্গে। তারা জানালেন, মামলা মোকদ্দমা না করলে বিনা ময়না তদন্তেই লাশটি নিয়ে যাওয়া যাবে। স্বজনরা পুলিশের বক্তব্য পৌঁছে দিলেন নার্সকে। লিখিত আবেদনও জানানো হলো। কিন্তু তিনি যে নাছোড়বান্দা! সহকারী পরিচালকের অনুমতি ছাড়া লাশ নেয়া যাবে না বলে গো ধরলেন! অতঃপর ডেকে আনা হলো ওয়ার্ড মাস্টারকে। অনুমতি নিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত হাওয়া হয়ে গেলেন তিনিও।
এবার বাধ্য হয়েই নিহতের এক রাজনৈতিক সহকর্মী মুঠোফোন ধরলেন হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিনকে। তিনি ইতিবাচক সাড়া দেয়ার পর স্বজনরা লাশ নিয়ে ১৯ নং ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে কয়েক কদম এগিয়েছেন। এমন সময়ে বাগড়া বসালো পুলিশ। ওয়্যারলেস হাতে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল হাবিব গজর গজর ভঙ্গিতে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, সহকারী পরিচালক (অর্থ) বারণ করেছেন। পুলিশের লিখিত অনুমতি ছাড়া লাশ বের হবে না। লিখিত আবেদনও দেখানো হলো তাকে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
মরদেহ হাসপাতালে রেখেই অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে প্রশাসনিক ভবনে ছুটতে হলো নিহতের ছোট ভাই খোকনকে। অবশেষে মিললো অনুমতি। কিন্তু ততক্ষণে কেটে গেছে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা। পদে পদে ভোগান্তির যন্ত্রণা সহ্যের পর সেই খোকন বললেন, ‘এই হলো হাসপাতাল। মানুষ যেখানে মরেও শান্তি পায় না।’ দুর্ভোগ-ভোগান্তির এসব ঘটনা প্রবাহ রোববার রাতের।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, হাসপাতালে এমন ভোগান্তি নৈমিত্তিক বিষয়। ময়না তদন্ত করা বা ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে স্বজনহারা মানুষকে প্রতিনিয়তই এমন ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়।
কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত না হলে লাশের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। তখন লাশ সামনে নিয়েই আর্তনাদ আর আহাজারি করেই সময় কাটাতে হয় স্বজনহারাদের।
রফিকুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, এ হাসপাতালের বাইরেই শুধু ফিটফাট। ভেতরে অবস্থা অনেক করুণ। চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতালের পরিচালকের সমন্বয় নেই। তার একরোখা ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে অতিষ্ঠ চিকিৎসকরা। ফলে মানুষের লাশ বাড়ি নিয়ে যেতেও সমস্যার অন্ত নেই। লাশ জিম্মি করে হাসপাতালেরই এক শ্রেণির লোকজন বাণিজ্য করতেই পদে পদে ভোগান্তির সৃষ্টি করেন। আবার নগদ মিললেই কাজ হয় ত্বরিতগতিতে, অভিযোগ ফুলপুরের এক রোগীর স্বজন আহম্মদ হোসেনের।
ভুক্তভোগী আমান উল্লাহ আকন্দ বলেন, হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগেও যন্ত্রণার শেষ নেই। মৃতের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতে উদাসীনতা দেখান ওয়ার্ড মাস্টাররা। অথচ তারা একবার স্বজনহারাদের জায়গায় নিজেকে চিন্তা করলে নিজেরাই শিউরে উঠতেন।
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন ও সহকারী পরিচালক লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।