পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : অপু বিশ্বাস! বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক বিভ‚তিভ‚ষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’র অপু নয়। এ অপু ঢাকাই সিনেমার লাস্যময়ী নায়িকা। পিরিতি করে ধর্মান্তরিত হয়ে গোপনে বিয়ে, অতপর রুপালি পর্দা থেকে হঠাৎ উধাও। গোলগাল হৃষ্টপুষ্ট চেহারার এই নায়িকার ডাগর ডাগর চোখ যেন ফোঁটা পদ্মফুল। ঢাকাই সিনেমার নায়িকা সঙ্কটের যুগে তার আঁখির ভ্রæ দু’টি কৃষ্ণ গোলাপের পাপড়ি যেন দর্শকদের মন কেড়ে নেয়া দিবা শর্বরী। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। শিশু সন্তান কোলে। টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে বার বার রুমালে চোখ মুঁছছেন। চলচ্চিত্র জগৎ থেকে দীর্ঘদিন আড়ালে থাকার পর সন্তান নিয়ে সবার সামনে হাজির হন ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় নায়িকা এই অপু বিশ্বাস। সন্তানের পিতৃ পরিচয় দাবি করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আরেক জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানকে বিয়ে করার কথা জানান দেশবাসীকে। এ যেন ঢাকার সিনেমা পাড়ায়
বোমা ফাটানোর কাহিনী। সোমবার বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ টুয়েন্টিফোরে দেয়া লাইভ সাক্ষাৎকারে অপু নিজের বিয়ের কাহিনী তুলে ধরে বললেনÑ আমি হিন্দু ধর্মের মেয়ে হলেও বিয়ের আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমি এখন মুসলমান; আমার নাম এখন অপু ইসলাম খান। কাবিননামায়ও এই নাম লেখা হয়েছে। কাবিননামায় ধর্ম লেখা হয় ইসলাম। ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল ইসলাম ধর্মের রীতি অনুসারেই গুলশানে শাকিবের বাসায় বিয়ে হয় আমাদের। সেখানে সাকিবের মা ও আমার মা’সহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শাকিবের আনা কাজি আমাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি করান।
শোবিজের ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনায় রেখে এতদিন বিয়ের খবর গোপন রেখেছি। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ কলকাতার একটি ক্লিনিকে আমার সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম আব্রাহাম খান জয়। অপু জানান, বিয়ে ও সন্তান এসব বিষয় এতদিন শাকিব আমাকে গোপন রাখতে বলেছেন। আবেগের সুরে বলেন, আমার সঙ্গে শাকিবের বিয়ে হয়েছে। আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। একজন মুসলমান নারী হিসেবে স্বামী যা আদেশ করেছেন তা পালন করেছি। শাকিবের কথাতে আমি বিয়ের কথা গোপন করেছি। তার ক্যারিয়ারের কথা ভেবে আমি সব ছাড় দিয়ে গিয়েছি। আমার নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভুলে গেলাম। আমি ১০ মাস আড়ালে গেছি। আমাকে নিয়ে অনেক বিদ্রæপ মন্তব্য হয়েছে, আমি গায়ে লাগাই নাই। আমার স্বামী শাকিবকে ঠিক রাখতে হবে। অথচ প্রতিনিয়ত সে ঠকাইয়া গেছে। আমাকে বিয়ে করেছে, বলেছে লুকায়া রাখ। আমি প্রত্যেকটা মুহূর্ত লুকায়া রাখছি। প্রতি মুহূর্তে সাপোর্ট করে গেছি। আমি প্রেগন্যান্ট হয়েছি। আমার প্রেমের ছবি বসগিরি। সেই ছবি বাদ দিয়ে আমি এক মুহূর্ত চিন্তা না করে চলে গিয়েছি। আমি ঢাকায় এসেছি আজকে পাঁচ মাস হয়ে গেছে। কেউ বলতে পারবে না যে আমি কারও সঙ্গে এভাবে কথা বলেছি। কিন্তু কেন শাকিব আমাকে ছোট করল? আমি নিজে অনেক সাফার করছি। ওর মা আছে, ওর বোন আছে। তারাও তো মেয়ে মানুষ। তাদেরও সন্তান আছে। তাদের জিজ্ঞেস করুন, তারা স্বামী সন্তান নিয়ে এভাবে সাফার করে কি না? আমার অন্যায় কি এটা যে আমি সিনেমার নায়িকা। আমি শাকিবকে অনেক সাপোর্ট করেছি, এটা কি আমার অন্যায়? আমি চাইছি যে শাকিবের ক্যারিয়ার ভালো হোক; কিন্তু আমাকে ছোট করে নয়। ঘর-সংসার করার জন্যই আমার ক্যারিয়ার আমি চিন্তা করিনি। অপু বলেন, আমার ওকে নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। যেহেতু আমাদের সন্তান। তাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে চাই। আমি অন্যায়কারী, একটা সন্তান তো অন্যায়কারী না। তার জন্য তার মর্যাদা আমি মা হয়ে দিতে চাই। এসব কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন অপু। সে সঙ্গে আরো বলেন, বিয়ের খবর গোপন রাখলেও অপুর বাসায় গিয়ে সন্তানকে আদর করেন শাকিব খান। শাকিবের পরিবারের সদস্যরাও অপুর বাসায় গিয়ে সন্তানকে দেখে আসেন, এটা সেটা কিনে দেন। তাছাড়া শাকিব খান সন্তানের সব ব্যয়ভার বহন করেন বলে জানান অপু। উল্লেখ দীর্ঘদিন থেকে সাকিব খান চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে বিয়ে করার কথা অস্বীকার করে আসছিলেন। এ নিয়ে মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখি হয়। বিয়ের খবরকে শাকিব ‘গছিপ’ হিসেবে চালিয়ে দেন। স্বামী শাকিব স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ায় দীর্ঘদিন পর্দার আড়ালে ছিলেন অপু। দীর্ঘদিন তিনি ভারতে অবস্থান করেন; সেখানেই সন্তান জন্ম দেন। সংবাদ সম্মেলন করেও অপু এসব কথা তুলে ধরেন।
দীর্ঘ দিন থেকে বিয়ের কথা অস্বীকারের পর গতকাল চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে বিয়ে করার কথা স্বীকার করেছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। তিনি স্বীকার করেন ছেলে আব্রাহাম খান জয় তারই সন্তান। তবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে অপু বিশ্বাস হাজির হয়ে সরাসরি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে আর সন্তানের কথা বলায় নাখোশ হয়েছেন তিনি। সোমবার অপু বিশ্বাস যখন সরাসরি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শাকিবের সঙ্গে তার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা জানাচ্ছিলেন; তখন রাজধানীর একটি হোটেলে শরীরচর্চায় ব্যস্ত ছিলেন বর্তমান ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের বিয়ের কথা স্বীকার করেন। তবে অপুর আচরণে ক্ষুব্ধ শাকিব জানালেন, সন্তানের দায়িত্ব নেব। অপুর দায়িত্ব নেব না। অপু বিশ্বাস আমাকে অসম্মান করেছেন। শাকিবের দাবি, হঠাৎ বিয়ে এবং সন্তানের খবর প্রচার করা তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্য একটি চক্রান্ত। বিয়ের কথা এতদিন গোপন রাখার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে শাকিব বলেন, ব্যক্তিগত জীবন সামনে আনতে চাইনি। এখন সে (অপু বিশ্বাস) এনেছে। তার সব চাহিদা পূরণ করেছি। যখন বলেছে টাকা দিয়েছি। পিতা হিসেবে আব্রাহামের দায়িত্ব আমি নিয়ে যাব। সে আমার সন্তান। সারা জীবন তার দায়িত্ব আমি নিয়ে যাব। কিন্তু অপুর দায়িত্ব নেব না।
সাংবাদিকদের অপু বিশ্বাস জানান, সিনেমায় অভিনয় করতে করতে বন্ধুত্ব। চিত্রনায়ক শাকিবের সঙ্গে সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছে। এই অপু আর শাকিবের বিয়ের কাহিনী নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হলে সিনেমা পাড়া থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যান অপু বিশ্বাস। দীর্ঘ ১০ মাস লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে ফেরেন অপু বিশ্বাস। অপু জানান, এই দীর্ঘ সময় তিনি ভারত, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককে ছিলেন। কলকাতার একটি হাসপাতালে তার ছেলের জন্ম হয়। তিনি টিভিতে এসব কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, শাকিবকে অনেক ছাড় দিয়েছেন। ধৈর্য ধরতে ধরতে শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছেন। তাই সত্য দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, শাকিব স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি সম্মান করেননি। বারবার আমাকে ছোট করেছে। সব স্ত্রীর মতোই আমিও সম্মান চেয়েছি, পাইনি। বারবার ছোট হয়েছি। ফেসবুকে যে স্টাট্যাস দিয়েছে তাতে আহত হয়েছি।
বিয়ের প্রসঙ্গ দেশবাসীকে জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেন অপু বিশ্বাস। তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার কারণ বর্ণনা করে বলেন, অন্তঃসত্ত¡া হওয়ার পর শাকিব বলেছিল তাকে লুকিয়ে থাকতে। এক সময়তো আমাকে সবকিছু প্রকাশ করতে হবে। ছেলের সামাজিক পরিচিতির প্রয়োজন। তার জন্মবার্ষিকী পালন করতে হবে। আমাকেও কাজে ফিরতে হবে। আমার কিছু নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে। সে জন্যই প্রকৃত চিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরছি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অপু বলেন, শাকিব আমাকে টাকা দিয়েছে। সে সে আমার স্বামী তাই টাকা তো দিবেই। সে তার বাবা-মাকে নিয়মিতি টাকা দেয়। আমাকে দেবে না কেন? ‘শাকিব সন্তানের দায়িত্ব নেবে আপনার নয়’ এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, সে সন্তানের দায়িত্ব নিতে চেয়েছে, তাতে আমার সন্তান পিতৃ পরিচয় পেয়েছে সামাজিকভাবে; এতে আমি খুশি। আমার দায়িত্ব নেয়া না নেয়ার কোনো বিষয় নয়। আমি স্বাধীন মানুষ। তাই আমি নিজেকে টেক কেয়ার নিজেই করতে পারব। তবে শাকিব আমার দায়িত্ব নেবে না এমন কথা বলায় দুঃখ পাইনি। কারণ সে হয়তো অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। হঠাৎ এসব প্রচার হওয়ায় সে এ মন্তব্য করেছে।
ঢাকাই সিনেমার নায়ক শাকিব খানের জন্ম ১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চ। তার প্রকৃত নাম মাসুদ রানা। ঢাকা বিভাগের মাদারীপুর জেলা একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া শাকিবের বাবার নাম আব্দুর রব মায়ের নাম নূরজাহান। তার বাবা একজন সরকারি দফতরের কর্মচারী। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছায়াছবির মাধ্যমে তিনি সিনেমা জগতে আসেন। বর্তমানে তিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। প্রচারণা রয়েছে তাকে ছাড়া ঢাকাই সিনেমা কার্যত অচল। নায়িকা অপু বিশ্বাসের জন্ম বগুড়া জেলার সদর থানার সাতমাথা এলাকায়। তার পুরো নাম অবস্তি বিশ্বাস অপু। বাবা উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এবং মা শেফালী বিশ্বাসের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সবার ছোট অপু। তিনি ২০০৪ সালে আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’ ছবির মাধ্যমে রুপালি জগতে প্রবেশ করেন। ২০০৬ সালে এফআই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে প্রধান নায়িকা হয়ে শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেন। সেখানেই প্রেম অতপর ----।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।