চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মাহফুজ আল মাদানী : ইসলাম শান্তির ধর্ম। অশান্তি সৃষ্টি করে এমন কোন বস্তু বা কাজকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। তেমনি নেশা করাকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। ইসলামের প্রাথমিক যুগে নেশা করা হারাম ছিল না। তবে তা ক্রমান্বয়ে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। প্রথমত মদকে একটি নেয়ামত ও আকর্ষণীয় পানীয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘আর খেজুর ও আঙ্গুর গাছের ফল থেকে তোমরা গ্রহণ কর মাদক এবং ভাল খাদ্য। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্য মহান উপদেশ রয়েছে’ -(সুরা আন নহল ঃ ৬৭)। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধারাবাহিকতায় মদ বা নেশাকে হারাম করে দেয়া হয়েছে।
প্রথমে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। হে নবী! আপনি বলে দিন, এতদুভয়ের মাঝে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে। তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়’ -(সুরা আল বাক্বারা ঃ ২১৯)। এর পরবর্তীতে অবতীর্ণ হয় ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা মাতাল অবস্থায় নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না। যতক্ষণ না তোমরা বুঝতে সক্ষম হও যা তোমরা বলছ’ -(সুরা আন নিসা ঃ ৪৩)।
পরিশেষে মদ হারামের অমোঘ ঘোষণা নিয়ে নাজিল হয় ‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, স্থাপনকৃত মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তীর অপবিত্র ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা ইহা হতে দূরে থাক। যেন তোমরা সফলকাম হতে পার’ -(সুরা আল মায়িদা ঃ ৯০)। এভাবেই মহান রাব্বুল আলামীন মদ বা নেশাজাতীয় জিনিসগুলোকে হারাম ঘোষণা করেন।
মদ হারাম ঘোষিত হওয়ার পর আর একবারের জন্যও বৈধ ঘোষণা করা হয়নি। কারণ, এটা অশ্লীল ও শয়তানের কাজ। আর শয়তানের কাজ কখনো মন্দ ছাড়া ভাল হয় না। হাদীস শরীফে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী, ‘তুমি মদ্যপান করবে না। কেননা, ইহা সব মন্দের চাবিকাঠি’ -(ইবনে মাজাহ)।
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, ‘হজরত মু’আজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দশটি বিষয়ে উপদেশ দান করেছেন, (তন্মধ্যে একটি হল) কখনো শরাব তথা মদ পান করবে না। কেননা, তা সকল প্রকার অশ্লীল কর্মের উৎস’ -(আহমদ)। প্রত্যেক নেশা আনয়নকারী বস্তু মদের অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নেশা আনয়নকারী বস্তু মদের শামিল এবং প্রত্যেক নেশা আনয়নকারী বস্তু হারাম। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করবে, অতঃপর তাওবাহ না করে মদ্যপানের অভ্যাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে, সে পরকালে (জান্নাতের) মদ পান করতে পারবে না’ -(মুসলীম)। মদ হচ্ছে সকল গুনাহের মূল। অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, ‘হজরত হুযাইফা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর ভাষণের মধ্যে বলতে শুনেছি, মদ সব গুনাহকে একত্রকারী’ -(রাযীন)। মদ বা নেশা আনয়নকারী বস্তু হারাম। চাই তা কম হোক বা বেশী হোক। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নেশা আনয়নকারী বস্তু হারাম। যা বেশীতে নেশাগ্রস্ত করে তার কম জিনিসও হারাম’ -(ইবনে মাজাহ)।
শুধু মদ্যপানকারী নয়, মদ প্রস্তুতকারী, বহনকারী, বিক্রিকারীসহ অনকের উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী ‘হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদের ক্ষেত্রে দশ ব্যক্তিকে অভিসম্পাত করেছেন। এক. মদ প্রস্তুতকারী, দুই. যার নিমিত্তে মদ তৈরী করা হয়, তিন. মদ পানকারী, চার. মদ বহনকারী, পাঁচ. যার নিকট মদ বহন করে নেয়া হয়, ছয়. মদ পরিবেশন কারী, সাত. মদ বিক্রেতা, আট. মদের মূল্য ভোগকারী ব্যক্তি, নয়. মদ তৈরী করার আসবাব ক্রয়কারী ব্যক্তি, দশ. মদের নিমিত্তে যা ক্রয় করা হয়’ -(তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। এ থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, মদ্যপান বা নেশা করা ব্যক্তি বা দল, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য অমঙ্গল, অকল্যাণকর।
আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীরা নেশা বা নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে আছে এ কথা বলার কোন সুযোগ নেই। অথচ নেশা হচ্ছে সকল অনিষ্টের মূল। যদি ইসলাম তথা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুশাসন মেনে চলা হত তাহলে সমাজে নেমে আসত শান্তির ¯্রােতধারা। আর নেশার কারণে সমাজের মধ্যে চলত না নানাবিধ অপকর্ম। এসব গøানি থেকে দেশ সমাজ জাতিকে মুক্তি দেয়া দরকার।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।