Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্লাস্টিক পণ্যে বাজার দখল মোহলি সম্প্রদায়ের মানবেতর জীবন

| প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মোহলি সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো যুগযুগ ধরে মানবেতর জীবনযাপন করলেও কেউই তাদের খোঁজ রাখে না। বাঁশের তৈরি গৃহস্থালী সামগ্রী বানিয়ে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা মোহলি সম্প্রদায়ের একমাত্র পেশা। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে তাদের তৈরি বাঁশের পণ্যের ন্যায় একই ধরনের প্লাস্টিক পণ্য বাজার দখল করে নেয়ায় সীমিত হয়ে পড়েছে তাদের রোজগারের পথ। বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে শত বছরের পুরনো বাপ-দাদার হস্তশিল্পের পেশা।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কি.মি. পশ্চিমে সাপমারা ইউনিয়নের সাপমারা মৌজার ফাঁসিতলা-কামদিয়া সড়কের পাশে এ মোহলি পাড়ার অস্থান। সরেজমিন গেলে মোহলি পাড়ার বাসিন্দা প্রায় ৬০ বছর বয়সী বাবু লাল মার্ডি জানান, নিজস্ব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির জাতিসত্ত্বার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বর্তমানে ২৫টি পরিবারের ১৫০ জন জনসংখ্যা অধ্যূষিত মোহলি পাড়ায় এক সময় সাড়ে ৪০০ পরিবার বসবাস করত। চাষাবাদের জমি না থাকায় অভাবের কারণে তারা দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বসবাস করছে। তিনি জানান, বাঁশ দিয়ে কুটিরশিল্পের কাজ করার জন্য তাদের পরিচিতি হয়েছে মোহলি সম্প্রদায়। তাদের পরিবারের ছেলে-মেয়ে সবাই বাঁশ দিয়ে কুটিরশিল্পের কাজ করে। তিনি নিজেও কিশোর বয়স থেকে বাঁশ দিয়ে ডালি, কুলা, টোঁপা, খলই, ঝাঁকা, ডুলি, চালা, চালুন বিভিন্ন গৃহস্থালী পণ্য তৈরি করে আসছেন। যুগযুগ ধরে চলে আসা তাদের পৈত্রিক এ পেশার এক সময় বেশ কদর ছিল। চাষাবাদের জমি না থাকলেও পৈত্রিক পেশায় তাদের দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জুটত। কিন্তু বেশ কয়েক বছর থেকে তাদের পৈত্রিক পেশা হুমকির মুখে পড়েছে প্লাস্টিক পণ্যের বাজার দখল করে নেয়ার কারণে। কারণ হিসেবে বাবু লাল মার্ডি জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাঁশ বাগান উজাড় করে বসতি স্থাপন করায় বাঁশবাগান কমে গেছে। ফলে আমাদের শিল্পের প্রধান উপকরণ বাঁশের দাম বেশি হওয়ায় পণ্যের দামও বেড়ে গেছে। অপর দিকে প্লাস্টিকের পণ্য তুলনামাফিক দাম কম হওয়াসহ অধিক টেকসই হওয়ায় বাজারে বাঁশের তৈরি পণ্যের কদর কমে গেছে। তাছাড়া গ্রামে কোনো বিদ্যুৎ না থাকায় শুধু দিনের আলোর মধ্যেই আমাদের কাজ সীমাবদ্ধ থাকে। বিদ্যুৎ থাকলে রাতের বেলায় অতিরিক্ত সময় কাজ করে পণ্য উৎপাদন ব্যয় কমানো যেতো এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কিছুটা টিকে থাকা যেত। প্রতিযোগিতার বাজারে পৈত্রিক পেশা হুমকির মুখে পড়ায় নতুন প্রজন্মকে লেখাপড়া শেখানো হচ্ছে যাতে তারা সরকারি-বেসরকারি চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। বর্তমানে এ সম্প্রদায়ের চার ছেলে এবং চার মেয়ে স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যায়নরত, দুই মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তিন মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে চলতি বছর। বাকি শিশু-কিশোররা সাপমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাড়ে চার কি.মি. দূরে গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের ফুলপুকুরিয়ায় মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে পড়ালেখা করে।
বাবু লাল মার্ডি পুত্র শ্রী রতন মার্ডি জানান, তিনিসহ তিনজন বিগত ১৬ সালে স্নাতক পাস করলেও কোনো চাকরি তারা পাচ্ছেন না। আবার বাপ-দাদার পৈত্রিক পেশার সাথেও তাল মেলাতে পারছে না। ফলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও জীবিকার সন্ধান করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়ছে এ সম্প্রদায়ের শিক্ষিত বেকার যুবকরা। মোহলি পাড়ার বয়ষ্করা জানালেন, আগে তারা নানা প্রতিক‚লতার মধ্যেও একটু একটু টাকা জমাতেন ছেলে-মেয়েদের বিয়ের জন্য। কিন্তু বর্তমানে তাদের ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা করায় আর কোনো টাকা জমাতে পারেন না। যে যত সামান্য আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন তার ওপর আবার ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হয়। ফলে পুঁজি সঙ্কটে পড়েছে বাঁশ দিয়ে কুটিরশিল্পের কাজ করা মোহলি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। বৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কে রতন মার্ডি জানান, সাধারণত মোহলি সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়। তবে এ সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো বাল্য বিয়ে হয় না। মোহলি পাড়ার বাসীন্দারা দাবি করেন, তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সরকার আর্থিক অনুদানসহ স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে তাদের শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের যোগ্যতানুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্লাস্টিক

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ