Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনা-কলকাতা দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্বোধন

| প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খুলনা ব্যুরো ও বেনাপোল অফিস : দীর্ঘ ৫২ বছর পর খুলনা থেকে কলকাতা গেল যাত্রীবাহী ট্রেন। গতকাল শনিবার মৈত্রী এক্সপ্রেস-২ খুলনা স্টেশন ছেড়েছে সকাল ৮টায়। উদ্বোধন উপলক্ষে পরীক্ষামূলক এ ট্রেনের যাত্রী ছিলেন এমপি, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তারা। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর আবারও চালু হয়েছে খুলনা-কলকাতা রুটের ট্রেন সার্ভিস।
গতকাল (শনিবার) সকালে খুলনা স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে উৎসুক মানুষের ভিড়। উদ্বোধনী এ ট্রেনে করে বেনাপোল পর্যন্ত গেছেন রেলওয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান এমপি, জেলা পরিষদের সদস্য চৌধুরী রায়হান ফরিদ, স্থানীয় আ’লীগ নেতা জেডএ মাহমুদ ডন, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা শ্যামল সিংহ রায়সহ খুলনার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও রেলওয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা যাত্রী হিসেবে ছিলেন ট্রেনটিতে।
প্রথম যাত্রা হিসেবে ফুল ও রঙিন কাপড় দিয়ে সাজানো হয় ট্রেনটি। সাদার মাঝে লাল সবুজ রেখা টানা ছিল বগিগুলোতে। পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া ট্রেনটিতে ইঞ্জিনবাদে ৫টি বগি জোড়া হয়েছে।
খুলনা রেলের স্টেশন কর্মকর্তা কাজি আমিরুল ইসলাম বলেন, খুলনা-যশোর-বেনাপোল-পেট্রাপোল-বনগাঁ হয়ে কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছায় ট্রেনটি। পথে দুপুর সোয়া দুইটায় বেনাপোল স্থল বন্দরে খুলনা-কলকাতার মধ্যে পরীক্ষামূলক আন্তঃদেশীয় ট্রেনটি নয়াদিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক ও  প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দও যাত্রীদের স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীদের উদ্বোধনের পরপরই মৈত্রী ট্রেনটি কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন পুলিশের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেনাপোল রেলস্টেশনে ভিডিও কনফারেন্স স্থলে উপস্থিত ছিলেন, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান, যশোর জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন, বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার শওকাত হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম, বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সহস্রাধিক নেতা-কর্মীরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বেনাপোল রেলস্টশনে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, দেশের উন্নয়ন করতে হলে আগে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রয়োজন। বিষয়টি মাথায় রেখে জননেত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে চলেছেন। আজ উদ্বোধন হলো বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিতীয় মৈত্রী রেল। এখন এ পথে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক, চিকিৎসা ও ভ্রমণের কাজে যাতায়াতকারীরা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন আরও জোরদার হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, আগামী জুন মাসে বাণিজ্যিক ভাবে এ ট্রেন চলাচল শুরু করবে।
অনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পর বিকেল পৌনে ৫টায় ট্রেনটি কলকাতা পৌঁছা যায়। আজ রোববার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে কলকাতা থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা হবে। এই ট্রেনে খুলনা থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টায় পৌঁছানো যাবে কলকতায়। দুপুরে উদ্বোধনের পর ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে বেনাপোল থেকে কলকাতা যাত্রা শুরু হয় ট্রেনের। পরীক্ষামূলক এ যাত্রায় কোনও সাধারণ যাত্রী ছিল না। কেবল রেল মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ও রেলের পদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন।
খুলনা রেলের যাত্রী চৌধুরী রায়হান ফরিদ বলেন, এই রুটে ট্রেনটি চালু হওয়ায় খুলনাবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় মানুষ এখন নির্বিঘেœ কলকাতায় যেতে পারবেন। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের স¤প্রসারণও ঘটবে।
মনিরুল হুদা নামে অপর একজন বলেন, ট্রেনের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে নববধূর সাজে সাজানো হয়েছে। এটা শুধুমাত্র কোন ট্রেন নয়। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের অধরা স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে।
উদ্বোধনকালে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান বলেন, এটা একটা যুগান্তকারী ঘটনা। দীর্ঘদিন পর খুলনা-কলকাতা রুটে চালু হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। পুরো পরিষেবা নিয়ে চালু হলে মানুষ স্বচ্ছন্দে কলকাতায় গিয়ে ফিরে আসতে পারবে।
সকালে হাজারও উৎসুক মানুষ উপস্থিত থেকে ট্রেনটিকে বিদায় জানান। ১৯৭৪ সালে লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় এ ট্রেন সার্ভিসটি। এর আগে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ও বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। ১৮৬৪ সালের ১ ফেব্রæয়ারি খুলনা-কলকতা রুটে ট্রেন সার্ভিস চালু হয়।
এদিকে গতকাল ঢাকা-খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে সৌহার্দ্য নামে নতুন একটি বাস সার্ভিস চলু হয়েছে।
বিরল-রাধিকাপুর রেল রুটে ৪২টি ভারতীয় ওয়াগনে এলো ডিজেল
দিনাজপুর অফিস জানায়, শনিবার দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দিনাজপুরের বিরল রেল স্টেশন দিয়ে ভারতের ডিজেলবাহী ৪২টি ওয়াগানের শুভ উদ্বোধন করেছেন।
সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারত, নেপাল, ভূটান এবং মায়ানমারের রেলপথে বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনের চুক্তি অনুযায়ী শনিবার একযুগ পর দিনাজপুরের বিরল রেল স্টেশন অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করলো ভারতের রাধিকাপুর রেল স্টেশন দিয়ে ভারতের ৪২টি ওয়াগান। ৪২টি ওয়াগান হাইস্প্রিট ২২০০ মেট্রিক টন জ্বালানি ডিজেল বাংলাদেশের পার্বতীপুরে আসে। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ডুয়েল গেজ রেলপথে আনুষ্ঠানিকভাবে পণ্য পরিবহন শুরু হলো।
শনিবার দুপুর ১টার দিকে দিল্লীতে বসে রাধিকাপুর স্টেশনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ওই রুট যৌথভাবে উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিমানগর তেল রিফাইনারী ডিপো থেকে ৪২টি ওয়াগন নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা করে। ট্রেনটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের দিনাজপুরের পার্বতীপুর তেল ডিপো পর্যন্ত যায়। পরে ট্রেনটি বাংলাদেশের বিরল রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রা বিরতি দিলে কাস্টমস কর্মকর্তারা বহনকারী মালামাল পরীক্ষা করেন।
এর আগে সকাল ৮ টার দিকে জ্বালানি বোঝাই ওয়াগনগুলোকে নিয়ে আসতে বাংলাদেশ থেকে একটি ইঞ্জিন ভারতে প্রবেশ করে। পরে সব ধরনের কার্যক্রম শেষে দুপুরে ট্রেনটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এখন থেকে এই রেলপথে জ্বালানি, পাথরসহ সব ধরনের পণ্য পরিবহনের ফলে সংশ্লিষ্ট দেশের মধ্যে দ্রæত এবং পণ্য পরিবহন খরচ কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারত এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মিটার গেজ রেলপথে নেপাল, ভারত এবং মিয়ানমায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে মধ্যে সীমিত সংখ্যক পণ্যবাহী ট্রেন চলত বিরল রেলপথ দিয়ে। ২০০৬ সালে ভারত রাধিকাপুর পযর্ন্ত ব্রডগেজ রেলপথ স্থাপন করায় রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছিল ওই রুটে।
এর আগে ৮ মার্চ ভারত থেকে ৪২টি ওয়াগনে ২ হাজার ৪৭২ মেট্রিক টন পাথর নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ট্রেন বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
পণ্যবাহি ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রাধিকাপুরের সাথে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন (স্টেশন) ইতিমধ্যে ডুয়েল গেজ রেলপথ সম্প্রসারণ কাজ শেষ করা হয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সাথে আমদানি ও রফতানির কাজ ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণসহ সরকার ২০০২ সালে বিরলসহ ১৩টি শুল্ক স্টেশনকে স্থল বন্দরে রূপান্তর করে।



 

Show all comments
  • আরিফুর রহমান ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৫৯ পিএম says : 1
    ট্রেনটি চালু হওয়ায় খুলনাবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • সিফাত ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১:০০ পিএম says : 0
    এতে আমাদের লাভ হবে না লোকসান হবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • এস, আনোয়ার ৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১০:০৯ পিএম says : 0
    ওই মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে যাদের এক পা সে পাড়ে তারাই কেবল কিছুটা লাভবান হতে পারে। কিন্তু এর হৃদকম্প সৃষ্টিকারী অশনি আওয়াজে শুধু খুলনাবাসি নয় একদিন পুরা দেশবাসির স্বপ্নভঙ্গ হবে। পাচার হবে বগী বগী আসবে কেবল ঘোডার ডিম। বসে এবার ভেবে দেখুন লাভ হলো নাকি লোকশান হলো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ