চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুহাম্মাদ আবদুর রাজ্জাক
\ শেষ কিস্তি \
বিদায় হজের ভাষণে রাসূল (সা.) স্পষ্টভাবে বলেন, “শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ, আরব-অনারবদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই”। এ কথা তিনি এখনকার কোন সময়ে বলেননি, বলেছেন চৌদ্দশ’ বছর আগে। যখন আমেরিকা আবিষ্কারও হয়নি। অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহতায়ালা তোমাদের চেহারা-সূরত ও ধন-সম্পদের দিকে তাকান না। কিন্তু তোমাদের কর্ম ও অন্তরের অবস্থা দেখেন। এ বাণীগুলো রাসূল (সা.) নিচকই ‘গুরুজনের বাণী’ হিসেবে উচ্চারণ করেননি।
মুসলমানদের বাস্তব জীবন-কাঠামোকে এ ধাছে গড়ে তোলতে হবে। আজকের পশ্চিমারা যে কালো আফ্রিকানদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে তাদেরি বংশোদ্ভ‚ত হযরত বেলাল (রা.)-কে ইসলামের প্রথম ও প্রধান মুআজ্জিন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জানি না এতে কোন ঐশি ইশারা ছিল কিনা। নবীজী (সা.) অত্যন্ত সতর্কতার সহিত লক্ষ্য রাখতেন, কেউ যেন তাদেরকে মর্যাদায় নিচু মনে না করে।
একবার দরবারে নববীতে হযরত উমর (রা.)-এর যবান থেকে বের হয়ে পড়লো, বেলাল! তুমি কালো এক হাবশী। এ শোনে নবী কারীম (সা.) বললেন, এখনো তোমাদের মধ্যে জাহিলিয়্যাতের অন্ধ আভিজাত্যের গন্ধ রয়ে গেছে। হযরত উমর (রা.) অনুশোচনায় মাটিতে নুয়ে পড়লেন। উঠতে বলা হলে বললেন, বেলাল আমাকে পা দিয়ে তোলে না দেয়া পর্যন্ত আমি উঠবো না। শেষে তিনি সত্যিই বেলালকে বাধ্য করলেন, পা দিয়ে উঠিয়ে দিতে। হযরত উমর (রা.) হযরত বেলাল (রা.)-কে আসতে দেখলে উঠে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, আবু বকর (রা.) আমাদের সরদার ছিলেন এবং তিনি আমাদের নেতা বেলাল (রা.) -কে আযাদ করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম (রা.) একজন অন্ধ সাহাবী ছিলেন। আমাদের নবীজী (সা.) মদীনার বাইরে জিহাদে যেতে তাকে মদীনার নেতা বানিয়ে যেতেন।
অন্ধ সাহাবী আবদুল্লাহ ইবে উম্মে মাকতুম (রা.) একদা নবীজী (সা.) এর দরবারে এসে একটি প্রশ্ন করে সাথে সাথে জবাবের জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। নবীজী (সা.) তখন মক্কার কাফের নেতৃবৃন্দকে উপদেশ দানে ব্যস্ত ছিলেন। মা’মুলি একটি প্রশ্নের তাৎক্ষণিক জবাবের জন্য পীড়াপীড়ি করা নবীজী (সা.)-এর কাছে বিরক্তিকর ঠেকে। তখন আল্লাহতায়ালা কোরআনের আয়াত নাজিল করে এ বিষয়ে নবীজী (সা.)-কে সতর্ক করে দেন।
এরশাদ হচ্ছে, “তিনি ভ্রæকুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কারণ তার কাছে এক অন্ধ আগমন করল। আপনি কী জানেন, সে হয়তো পরিশুদ্ধ হতো অথবা উপদেশ গ্রহণ করতো এবং তার উপকার হতো। (সূরা আবাসা-১-৪)
ইসলামের যাকাত ব্যবস্থা- তাও মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য রোধ করার জন্য। জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার নির্দেশ-তাও ধনী-গরিব, বাদশাহ-গোলাম, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বৈষম্য ঘুচিয়ে আনার জন্য। ইসলামের ঈদ ও কোরবানির প্রথা- এতো সাম্যের-ই জয়ধ্বনী। ইসলামের মতে সব মানষ এক পিতার সন্তান। তাই ভাইয়ে ভাইয়ে বৈষম্য থাকতে পারে না। তবে মর্যাদার মানদÐ নির্ধারণ করা হবে তাকওয়ার ভিত্তিতে। পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ হচ্ছে, “হে মানব! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যিনি সর্বাধিক পরহেজগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোজ্ঞ। সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত-১৩)
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক মাসিক বিকিরণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।