পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : ‘‘সামনে বৈশাখী উৎসব। ওই দিন সবাই মিলে একটু আনন্দ-ফুর্তি করবো। আপনিও থাকবেন আমাদের সাথে।’’ এমন ‘মিষ্টি কথা’র ফোনালাপের মাধ্যমেই উৎসবকেন্দ্রিক নীরব চাঁদাবাজি চলছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। যারা উৎসবে থাকার দাওয়াত দিচ্ছেন তারা প্রভাবশালী, ক্ষমতাসীন দল বা অঙ্গসংগঠনের নেতা। জাতীয় দিবস ও উৎসব সামনে রেখে রাজনৈতিক পরিচয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে অতি গোপনে চলছে এ চাঁদাবাজি। ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, গত মাসে স্বাধীনতা দিবসসহ কয়েকটা দিবস পেরিয়ে এখন বৈশাখী উৎসবকে সামনে রেখে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। ‘মিষ্টি কথার’ এমন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হলেও অনেকেই মুখ খোলার সাহস পান না। ভুক্তভোগীদের আশঙ্কা, মুখ খুললে প্রতিকার মেলা তো দূরে থাক, উল্টো নানা ঝামেলা এসে পড়বে কাঁধে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর ড. এএসএম আমান উল্যাহ বলেন, শুধু রাজধানীতে নয়, সারাদেশেই এখন নীরব চাঁদাবাজি চলছে- যা অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকার এবং সরকারের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীও এই চাঁদাবাজি সম্পর্কে জানে। কিন্তু তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তিনি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন। এদিকে, উৎসবের নামে নীরব চাঁদাবাজির বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করে। এরপর তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
রাজধানীতে এক সময় কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙ্গিয়ে টেলিফোনে হত্যার হুমকী দিয়ে চাঁদাবাজি চলতো। এখন ধরণ পাল্টে গেছে। র্যাব-পুলিশের অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দাপট আর নেই। অনেকে মারা পড়েছে, কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছে। তাদের সহযোগীদের তৎপরতাও আর নেই বললে চলে। পুরান ঢাকার ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী জানান, কুখ্যাত সব সন্ত্রাসীর সেই রাজ্যটা দখলে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা। এরা বিভিন্ন ইস্যুতে সারা বছরই চাঁদাবাজি করে। জাতীয় দিবস বা কোনো উৎসব এলে এই চাঁদাবাজি বেড়ে যায়। উৎসবের দোহাই দিয়ে ভদ্রভাবে চাঁদা দাবি করে বলে ব্যবসায়ীরা উভয় সঙ্কটে পড়ে যায়। এর বাইরে নতুন দোকান, বাড়ি, ফ্ল্যাট, এপার্টমেন্ট, পজিশন কিনলে চাঁদা গুনতেই হবে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের বাজার, দোকান ও টেম্পু, হিউম্যান হলারসহ টাউন সার্ভিসের চাঁদা তো আছেই। চাঁদাবাজির নতুন সেক্টর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নগরীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন কোটি কোটি টাকার খেলা। ভালো স্কুলে ভর্তি বাণিজ্য থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। আবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতির পদ দখল করে আছে সরকারদলীয় নেতা-সমর্থকরা। তাদের লাখ লাখ টাকা অবৈধ আয়ের উৎসকে পুঁজি করে চাঁদাবাজি করছে কমিটির বাইরে থাকা প্রভাবশালীরা। এতে করে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরান ঢাকার আতঙ্ক এখন ভয়ঙ্কর কোনো সন্ত্রাসী নয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই এখন মিষ্টি কথার ঝুলি দিয়ে চাঁদাবাজি করছে। উৎসবকেন্দ্রিক চাঁদা দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। একজন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জানান, গত মাসে দুইবার মোটা অংকের চাঁদা দিয়েছেন তিনি। সামনে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আবার তাকে ফোন করা হয়েছে কয়েক বার। কারা ফোন করেছে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী বলেন, ছাত্রলীগ নেতারা। একজন ফোন করে বৈশাখী উৎসবে তাদের সাথে শামিল হতে বলেছে। আপাতত হাতে টাকা নাই বলায় তারা দুদিন সময় দিয়েছিল। এখন আবার বারবার ফোন করছে। ওদের ভয়ে এখন ফোন রিসিভ করা ছেড়ে দিয়েছেন জানিয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, যে কোনো সময় তারা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে হাজির হবে। তখন আর কোনো উপায় থাকবে না।
পুলিশকে কেনো জানাচ্ছেন না জানতে চাইলে নাম গোপন করা ওই ব্যবসায়ী বলেন, পুলিশকে এর আগে দু’একজন যে জানায় নি তা নয়, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না। বরং পুলিশ চাঁদাবাজদের পক্ষ নেয়। একই সাথে তারা অভিযোগকারীকে টার্গেট করে রাখে। সুযোগ পেলে তার বড় ধরনের ক্ষতি করে ছাড়বে। সে কারণে এখন সহসা কেউ আর ঝুঁকি নিতে চায় না। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুরান ঢাকায় চাঁদাবাজিতে লিপ্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় নেতা। এরা টেলিফোনে নানা উৎসবের নামে শান্তিপূর্ণভাবে চাঁদা দাবি করে। জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার ডিউটি অফিসার বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ অভিযোগ না করলে পুলিশের কি করার আছে। উৎসব ছাড়াও পুরান ঢাকার সূত্রাপুর ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় বাহাদুরশাহ পার্ক ঘিরে মূল সড়কের ওপর গড়ে ওঠা বিশাল বাসস্ট্যান্ড, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গেট আটকে ও ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল গেটের সামনে রাস্তার ওপর লেগুনা স্ট্যান্ডও পরিবহন চাঁদাবাজির বড় ক্ষেত্র। জানা গেছে, ল²ীবাজার, বাংলাবাজার, নর্থব্রæক হল রোড থেকে পাটুয়াটুলী হয়ে শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, ইসলামপুর ও রায়সাহেব বাজারের জনসন রোড থেকে শুরু করে ধোলাইখাল পর্যন্ত নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা উৎসবকেন্দ্রিক চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে এখন বৈশাখী আতঙ্ক। এছাড়া নিয়মিত চাঁদাবাজিতো আছেই। যাত্রাবাড়ীতে স্থানীয় এমপির সাথে সখ্যতা করে চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করেছেন বাচ্চু খন্দকার। যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা রোডে চলাচলকারী টেম্পু ও হিউম্যান হলার থেকে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা তুলে এক সময়ের ঠেলাগাড়ি চালক বাচ্চু এখন কোটিপতি। নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য বাচ্চুর বিশাল বাহিনী রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই বিপদ নেমে আসে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী বলেন, বাচ্চু এখন এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার খুব কাছের মানুষ। অথচ সবাই জানে এক সময় সে বিএনপি নেতা মীর্জা আব্বাসের প্রিয়ভাজন ছিল। ফ্রিডম পার্টি থেকে আসা বাচ্চু কিভাবে আওয়ামী লীগের নেতা হয় সে প্রশ্ন অনেকেরই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় ওরা হলো দলের ভিতর ‘কাউয়া’।
অন্যদিকে, রাজধানীর গাবতলী থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত ঢাকা শহর রক্ষাবাঁধের উপর দিয়ে চলা বাস, ট্রাক, টেম্পুসহ বিভিন্ন যানবাহনে চাঁদাবাজি করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধের ১৬টি পয়েন্টে নেতা-সন্ত্রাসীরা মিলে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করছে। গাবতলী থেকে মিটফোর্ডের বাবুবাজার পর্যন্ত প্রায় ১২ কিঃমিঃ পথ ডিএমপি’র ৮টি থানার অধীনে থাকায় সংশ্লিষ্ট থানা-ফাঁড়ি পুলিশ ও সরকারি দলের কতিপয় প্রভাবশালী নেতার লোকজন এবং চিহ্নিত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছেন পরিবহন মালিক-চালক ও শ্রমিকরা। জানা গেছে, লালবাগের নবাবগঞ্জ সেকশন টু মিটফোর্ডের বাবুবাজার রুটে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি লেগুনা চলাচল করে। এসব লেগুনা থেকে ৪ থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং নেতারা মিলে গড়ে প্রতিদিন ১৫হাজার টাকার চাঁদা তুলছেন। ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নামে লেগুনা থেকে প্রতিদিন ১ হাজার টাকা হারে মাসে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন। ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নামে প্রতিদিন ৪ হাজার টাকা হারে মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়। এছাড়া ইসলামবাগের কথিত যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর মোল্লাও এসব লেগুনা থেকে নিয়মিত মোটা অংকের চাঁদা তোলেন। এছাড়া বংশাল ও কোতয়ালী থানাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার দু’ফাঁড়ির নামে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার টাকা হারে মাসে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা তোলে প্রভাবশালীরা। বুড়িগঙ্গা ব্রিজের নিচে অবৈধ ফুটপাথের দোকান থেকে গড়ে প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকা হারে মাসে ৯ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে।
সূত্র জানায়, ব্রাদার্স পরিবহন থেকে কথিত আ’লীগ নেতা পিচ্চি ৪শ’ টাকা, যানযাবিল পরিবহন থেকে লাবলু ৪শ’ টাকা, মানিক শাহ্ ২ হাজার টাকা, তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক আলাউদ্দিন ব্রাদার্স পরিবহন থেকে ৪শ’ টাকা ও কাউন্সিলরের জন্য ৩টি পরিবহন থেকে লাইনম্যান আব্দুল কাদের প্রতিদিন ২ হাজার টাকা হারে মাসে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন। ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নামে লেগুনা থেকে গড়ে প্রতিদিন ৩শ’ টাকা হারে চাঁদা তোলেন। এছাড়া লালবাগ থানা ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আ’লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীর নামে প্রতিদিন ৯ হাজার টাকা করে চাঁদা তোলে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। নবাবগঞ্জ পার্কের বিপরীতে বেড়িবাঁধে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা চোরাই মোবাইল মার্কেটের শতাধিক দোকান থেকে এবং মঙ্গলবার বেড়িবাঁধের হলি-ডে মার্কেটের ৫২৫টি দোকান থেকে গড়ে প্রতিদিন ৯৬ হাজার টাকার চাঁদা তোলেন একই চক্রের সদস্যরা। নবাবগঞ্জ সেকশন থেকে খোলামোড়া, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজার রুটে ও নবাবগঞ্জ সেকশন পুলিশ ফাঁড়ি থেকে গুলিস্তান রুটে ৫ শতাধিক যাত্রী পরিবহন থেকে কামরাঙ্গীরচরের প্রভাবশালী এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর, হাজারিবাগের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, আদাবরের এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তাদের ক্যাডার বাহিনী যাত্রী পরিবহন থেকে গড়ে প্রতিদিন ১ লাখ টাকা চাঁদা তোলে। এসব চাঁদার বাইরে গত মাসে স্বাধীনতা দিবস উৎযাপনের নাম করে গাড়ির মালিকদের কাছে থেকে দ্বিগুণ চাঁদা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একজন ভুক্তভোগী মালিক বলেন, সামনে পহেলা বৈশাখ। এজন্য বাড়তি টাকা গুনতে হবে-এটা সবাই জানে। কিন্তু উপায় তো নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এ এসএম আমান উল্যাহ বলেন, অনুষ্ঠানের নামে সারাদেশেই নীরব চাঁদাবাজি চলছে এটা সত্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ছাত্র সংগঠনের নেতারা এই কাজটি করছে। এটাকে বন্ধ করতে হলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নামপরিচয় গোপন রেখে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে চাঁদা দাবির বিষয়টি অবহিত করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাঁদা দাবির বিষয়টি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অজানাই থেকে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।