চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুহাম্মাদ আবদুর রাজ্জাক
\ দুই \
কুরআনে আল্লাহতায়ালা মানুষের সৃষ্টির রহস্য আলোচনা করেছেন এবং মানব সৃষ্টির সপ্তস্তর বিবৃত করেছেন। প্রথম মৃত্তিকার সারাংশ, দ্বিতীয় বীর্য, তৃতীয় জমাট রক্ত, চতুর্থ মাংসপিÐ, পঞ্চম অস্থি পিঞ্জর, ষষ্ট অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করণ, সপ্তম সৃষ্টির পূর্ণত্ব অর্থাৎ রূহ সঞ্চার করণ।
এভাবে মানব সৃষ্টির সপ্তস্তর বর্ণনা করার কারণ এটাই, যেন মানুষ আল্লাহর শোকর আদায় করে, নাফরমানি না করে। মানুষ চায় সে শ্বেত বর্ণের হোক বা কৃষ্ণ বর্ণের, সৃষ্টির মূলে যেহেতু এক ও অভিন্ন তাই পরস্পরে যেন বৈষম্য সৃষ্টি না করে। একে অন্যকে তুচ্ছ ও হেয় না করে। এভাবে আল্লাহতায়ালা মানুষের মনকে তৈরি করেছেন।
উপর্যুক্ত আয়াতসমূহের শেষ দু’আয়াতে মানুষকে এটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, তোমাদেরকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আবার হিসাব-নিকাশের জন্য তোমাদের পুনুরুত্থান হবে।
সমস্ত সৃষ্টিবস্তুর মধ্যে মানুষ সর্বাধিক সুন্দর মহান আল্লাহ কালামে পাকে ঘোষণা করেছেন, “আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে। অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নিচ থেকে নিচে। (সূরা ত্বীন-৪-৫)
এখানে আল্লাহতায়ালা বুঝাচ্ছেন যে, মানুষের স্বভাবকে যেমন অন্যান্য সৃষ্টি জীবের তুলনায় উত্তম করা হয়েছে ঠিক তেমনি তার দৈহিক অবয়ব এবং আকার-আকৃতিকেও দুনিয়ার সব প্রাণী অপেক্ষা সুন্দরতম করা হয়েছে। ইবনে আরবী বলেন, আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে মানুষ অপেক্ষা সুন্দর কেউ নেই। কেননা আল্লাহ তাকে জ্ঞানী, শক্তিমান, বক্তা, শ্রোতা, দ্রষ্টা, কুশলী এবং প্রজ্ঞাবান করেছেন। এগুলো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতায়ালারই গুণাবলি। মানুষ যে অবয়বে সৃষ্টির সর্বাধিক সুন্দর এটা শ্বেত, কৃষ্ণ সব মানুষের ক্ষেত্রে ঘোষিত হয়েছে। অতএব একে অন্যের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টির কোনো যুক্তিকতা নেই।
আবার আল্লাহতায়ালা যেহেতু সব মানুষকে নিচ থেকে নিচে ফিরিয়ে দেবেন তাহলে অহংকার ও আত্মগর্বেরও কিছুই নেই। এভাবে মানব মনকে তৈরি করার উদ্দেশ্যে এসব আয়াত বর্ণিত হয়েছে।
পবিত্র কালামে পাকে সূরা নিসার ১নং আয়াতে আল্লাহতায়ালার অমোঘ ঘোষণা, “হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় করো। যার নামে তোমরা একে অন্যের কাছে অধিকার দাবি করো এবং আত্মীয়-জ্ঞাতীদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদে ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।”
উপর্যুক্ত আয়াতে যেমনিভাবে আল্লাহর অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধাচারণের পরিণাম সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। তেমনিভাবে দুনিয়ার সমগ্র মানুষকে একই পিতার সন্তান হিসেবে গণ্য করে তোমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব-বন্ধুত্ব ও সহানুভ‚তির অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। পৃথিবীর সব মানুষ যেহেতু একই পিতার সন্তান। তাহলে বর্ণ যেটাই হোক সকলে ভাই ভাই।
ইসলামে বহু দল উপদল থাকা সত্তে¡ও বহু মত ও মতান্ধতা থাকা সত্তে¡ও মুসলমানদের জীবনাচারে এহেন বিদ্বেষ ও বৈষম্য কখনো দানা বাঁধতে পারেনি। কারণ ইসলাম এ ব্যাপারে কৌশলী পন্থা অবলম্বন করেছে। ইসলামের শিক্ষা হলো সব মানুষ আল্লাহর পরিবারভুক্ত। মানুষের মাঝে ভাষাগত ও বর্ণগত পার্থক্য আল্লাহর অসীম কুদরতের নিদর্শন মাত্র। আল্লাহতায়ালা বলেন, “আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশমÐলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সূরা রূম-২২)
অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, “তুমি কী দেখনা! আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টিপাত করেন আর আমি তা দ্বারা বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উদগত করি। আর পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে বিচিত্র বর্ণের পথ, শুভ্র, লাল ও নিকষ কালো। এভাবে রঙ-বেরঙের মানুষ, কীটপতঙ্গ ও জন্তু। (সূরা ফাতির-২৭-২৮)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।