চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
হামেদ বিন ফরিদ আহমদ
\ এক \
দোয়া আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের সেতুবন্ধন। বান্দাকে আল্লাহর কাছাকাছি নেয়ার যোগসূত্র। দোয়ার মাধ্যমে বান্দার জীবনে, মরণে, শয়নেস্বপনে অপরিহার্য কঠিন অনুষঙ্গগুলি হাতের মুঠোয় এসে ধরা দেয়। বিপদে, মুসিবতে, দুঃখ-বেদনায় বান্দা পরওয়ারদিগারের শাহী দরবারে হাজিরা দিবে এটাই বান্দার দায়িত্ব। সুখের মুহূর্তে, স্বাচ্ছন্দ্যের সময়েও বান্দা আল্লাহর কাছে চাইবে এটাও বান্দার প্রতি আল্লাহর চাওয়া। আল্লাহর কাছে তাঁর বান্দারা চাইবে আর আল্লাহ তা দিবেন এটা আল্লাহ তা’য়ালার প্রতিশ্রæতি। অঙ্গীকার। ওয়াদা। পবিত্র কালামে এই প্রতিশ্রæতি বিবৃত হয়েছে। ‘বান্দারা! তোমরা আমার কাছে চাও, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। তোমাদের চাওয়াকে পাওয়াতে রূপ দিবো।’ সূরা মুমিন-৫৯
হাদীসে রাসূলে ইরশাদ হয়েছে ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’য়ালা লজ্জাবোধ করেন, বান্দা আল্লাহর দরবারে হাত উত্তোলন করবে,আর তিনি তাকে শূন্যহস্তে ফিরিয়ে দিবেন।’ তিরমিজী-৩৫৫৬
আল্লাহ লজ্জিত হবেনই না কেন!! দুনিয়াতে কাছের মানুষ কিছু চাইলে, না দিতে পারলে মন ছোট হয়ে যায়। অন্তরে দুঃখ জাগে। হৃদয় ব্যথিত হয়। বান্দা হলো আল্লাহ তা’য়ালার সবচেয়ে কাছের। তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তারা তাঁর কাছে কিছু চাইবে আর তিনি না দিবেন এটা কেমনে হতে পারে!! আল্লাহ পবিত্র কালামে বারবার প্রয়োজনের সময় তাঁর কাছে চাওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি তা দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। তার মানে এই নয় যে, আমরা বিপদে পড়লাম। তার কাছে চাওয়ার সাথে সাথেই কিছু মুহূর্ত পরেই, কিংবা পরের দিন সকালেই দোয়া কবুল হয়ে আসবে। আজকাল আমরা এমন ধারণা নিয়ে বসে থাকি। দোয়াকে বিপদের সময়, কঠিন মুহূর্তে প্যানিক বাটনের মত ব্যবহার করি। আর না পেলে আল্লাহর প্রতি কবুল না করার দোষ চাপিয়ে দিই। আল্লাহর অঙ্গীকার পূরণে সন্দিহান হয়ে পড়ি। এই বিষয়ে মুহাদ্দাসিনে কেরাম, মুফাসসিরিনে কেরাম আলোচনা করেছেন। দোয়া কেবল বিপদের সময় প্যানিক বাটনের মত ব্যবহার করলেই চলবে না। দোয়া মানে আবেদন। জগতে আমরা কোন বড় সম্মানী পদমর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির কাছে আবেদন পেশ করার সময় নানা নিয়মকানুন ও আদব মেনে আবেদন দাখিল করতে হয়। দোয়ার মাধ্যমে আমরা আহকামুল হাকিমিন, রাব্বুল আলামীনের কাছে আবেদন দাখিল করি। তাই এক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম-নীতি মেনে আমাদের দোয়া উপস্থাপন করলে আশা করা যায় আমাদের দোয়া ব্যর্থ হবে না। নিস্ফল হয়ে ফেরত আসবে না।
আল্লাহর কাছে দোয়া বা আর্জি পেশ করার কিছু আদাব।
দুনিয়াতে যে কোন কাজ চাই তা ছোট হোক বা বড়, পূরণ করার জন্যে সুনির্ধারিত নিয়ম মেনে এগুতে হয় তবেই সফলতা লাভ করা যায়। কার্যসিদ্ধি হয়। অনিয়মে কার্যসিদ্ধি করতে গেলে বিপদে পড়তে হয়। আশংকায় থাকতে হয় কাজ সম্পাদন যথাযথ হয়েছে কিনা। খুঁতখুঁতো থেকে যায় মনের অন্দরে। তেমনি দোয়াও এমন একটি কাজ যার মাধ্যমে বান্দা মালিকের বরাবরে আর্জি পেশ করবে। তাই এর জন্যও নির্ধারিত নিয়ম, বিধি রয়েছে অনেক। যা মানবতার উৎকৃষ্ট শিক্ষক মহানবী সাঃ উম্মতকে শিখিয়ে দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন পুঙ্খানুপুঙ্খ। এ নিয়ম মেনে দোয়া আপনি করেছেন তো নিশ্চিত থাকতে পারেন আপনার দোয়া কবুল হয়েছে। গৃহীত হয়েছে খোদাতায়ালার পাক দরবারে। যার কিছু নিয়ম নিম্নরূপ :
১/ আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো কাছে না চাওয়া : দোয়া কবুলের জন্যে প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো চাওয়াটা কেবল আল্লাহর কাছেই হওয়া। আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো কাছে হাত না পাতা। যদি এমন হয় মাঝেমাঝে আল্লাহর কাছে চাইলাম আর কোন কোন সময় চাইলাম বান্দার কাছে। মাজারে, বাবার কাছে। খানকায় পীরের দরবারে চাইলাম। তাহলে দোয়া কবুল হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। আল্লাহ বলে দিয়েছেন ঃ ‘দোয়ার অধিকার একমাত্র তাঁরই এবং তাকে ছাড়া যাদেরকে তারা ডাকে, তারা তাদের কোন কাজে আসে না; ওদের দৃষ্টান্ত সেরূপ, যেমন কেউ দু’ হাত পানির দিকে প্রসারিত করে যাতে পানি তার মুখে পৌঁছে যায়। অথচ পানি কোন সময় পৌঁছাবে না। কাফেরদের যত আহবান তার সবই ব্যর্থ, নিষ্ফল।‘ সূরা রা’দ - ১৪
তাই ছোট থেকে ছোট সকল বিষয়ই চাইতে হবে আল্লাহর কাছে। আল্লাহ বলেন ‘আর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত।‘ সূরা নিসা- ৩২
আবূ যর আল-গিফারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় ও সুমহান রবের নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ্ বলেছেন:
‘হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করে দিয়েছি, আর তা তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি; অতএব তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না।
হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে হেদায়াত দিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। সুতরাং আমার কাছে হেদায়াত চাও, আমি তোমাদের হেদায়াত দান করব।
হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে অন্ন দান করেছি, সে ছাড়া তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও, আমি তোমাদের খাদ্য দান করব।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সবাই বিবস্ত্র, সে ব্যতীত যাকে আমি কাপড় পরিয়েছি। সুতরাং আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন গোনাহ্ করছ, আর আমি তোমাদের গোনাহ্ ক্ষমা করে দেই। সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা কখনোই আমার ক্ষতি করার সামর্থ্য রাখ না যে আমার ক্ষতি করবে আর তোমরা কখনোই আমার ভালো করার ক্ষমতা রাখ না যে আমার ভালো করবে।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মোত্তাকী ও পরহেযগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই বৃদ্ধি করবে না।
আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই কমাতে পারবে না।
হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বের ও তোমাদের পরের সকলে, তোমাদের সমস্ত মানুষ ও তোমাদের সমস্ত জিন যদি সবাই একই ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার কাছে চায় এবং আমি সকলের চাওয়া পূরণ করে দেই তবে আমার নিকট যা আছে তাতে সমুদ্রে এক সুঁই রাখলে যতটা কম হয়ে যায় তা ব্যতীত আর কিছু কম হতে পারে না।
হে আমার বান্দাগণ! আমি তোমাদের আমলকে (কাজকে) তোমাদের জন্য গণনা করে রাখি, আর আমি তার পুরোপুরি প্রতিফল দিয়ে দেব। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তম প্রতিফল পাবে তার আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত, আর যে তার বিপরীত পাবে তার শুধু নিজেকেই ধিক্কার দেয়া উচিত।‘[মুসলিম-২৫৭৭]
হযরত আনাস রাযিঃ বর্ণনা করেন, রাসূল সাঃ বলেছেন ‘বান্দা যেন তার সকল প্রয়োজন রবের কাছেই প্রার্থনা করে। এমনকি যদি জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায় তাও যেন তাঁরই কাছে চায়।’ তিরমিজী
২/ অন্যায় ও গর্হিত কিছু না চাওয়া : দোয়া হলো আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নেওয়ার মুখ্যম উপায়। আল্লাহ বলেন ‘তোমরা তাঁকে (আল্লাহকে) খাঁটি আনুগত্যশীল হয়ে ডাক।‘ সূরা আ’রাফ-২৯
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।