চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুহাম্মাদ আবদুর রাজ্জাক
\ এক \
২১ মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্যবিরোধী দিবস। ১৯৬০ সালের এই দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার সারপেবিলে তৎকালীন ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল পার্টির জারি করা বর্ণভিত্তিক আলাদা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে শান্তিপূর্ণ মিছিল হয় সেখানে পুলিশ গুলি বর্ষণ করে এবং ৫৯ জন প্রাণ হারায়। সব ধরনের বর্ণবৈষম্য বিলোপের প্রচেষ্টা জোরদার করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ ১৯৬৬ সালের এই দিনকে আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্যবিরোধী দিবস হিসেবে পালনের সূচনা করে। ১৯৬০ সালের সেই ঘটনার অর্ধশতেরও বেশি বছর পর এখনো বিশ্বজুড়ে ভীষণভাবে রয়েছে বর্ণবৈষম্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগে আধুনিক সভ্যতার বহু অর্জন রয়েছে। রয়েছে এর অন্ধকার দিকও। আলো ঝলমল সভ্যতায় ও রয়েছে আঁধার কালো অসভ্য ও বর্বর দিক। উন্নতির উচ্চ শিখরে উন্নীত পশ্চিমা বিশ্ব বহু ক্ষেত্রে বহু প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের জীবনে আলোর পরিবর্তে আঁধার ঘনীভ‚ত হয়েছে বেশি। ২০১৪ সালের ৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মিশরীতে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ভ্যারেন উইলসের গুলিতে নিহত হন কলেজ ছাত্র ব্রাউন (১৮)। হত্যাকাÐটি ঘটিয়েছে সেন্ট লুইসের কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত ফার্গুসর শহরে। এই ঘটনায় সেখানে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর ঐ ঘটনার রায়ে আদালত জানান, উইলসকে অভিযুক্ত করার মতো কোনো আলামত জুরি বোর্ডের সদস্যরা পাননি। রায়ের পর হোয়াইট হাউসে তাৎক্ষণিক বিবৃতি দিয়েছেন ওবামা। তিনি উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহŸান জানান। যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত বৈষম্যের কথা স্বীকার করে ওবামা বলেন, এ বৈষম্য দূর করতে আমাদের অনেক কিছু করার বাকি আছে। -(দৈনিক কালের কণ্ঠ-২৬-১১-১৪)
২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর কালের কণ্ঠের রিপোর্টে আরো বলা হয়, এ বর্ণবৈষম্য সেখানে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ‘ফার্গুসন’ জীবনের সঙ্গে মিশে আছে বর্ণবিদ্বেষ।
আর ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর ইনকিলাবের রিপোর্টে বলা হয়Ñ জাতিসংঘ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বিচারে কালো মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে মালিক, শ্রমিক বৈষম্য দলগত ও লিঙ্গবৈষম্য থাকলেও ধর্মবিশ্বাস, আঞ্চলিকতা, জাতিগত ও বর্ণবৈষম্যের প্রকটতা নেই। বাংলাদেশে ধর্ম ও বর্ণবৈষম্যের কারণে কেউ কারো ওপর আক্রমণ করেছে এমন নজির নেই।
বিচ্ছিন্ন যে দু’একটি ঘটনা ঘটে তা ধর্ম-বর্ণের কারণে নয় সেটা রাজনৈতিক কারণে। সেটা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। সম্প্রতি মিয়ানমারে মুসলিম হত্যার চিত্র বাংলাদেশের মুসলমানরা দেখেছে। দেখেছে যুবতীদেরকে ধর্ষণের পর আগুণে পুড়িয়ে হত্যার দৃশ্য। বালুচরে নির্বোধ শিশুর আহাঝারিও শোনেছে। কিন্তু সে কারণে কোন বৌদ্ধের গায়ে একটি থাপ্পড়ও পড়েনি, একটি লাথিও কেউ মারেনি। বাংলাদেশে উপজাতিরা বাস করে তাদের সব অধিকার নিয়ে। এর কারণ বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। ইসলামী সভ্যতা ও শিক্ষার ছোয়া কিছুটা হলেও তাদের মাঝে রয়েছে। বাংলাদেশের শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ সব ধরনের মানুষ মিলেমিশে জীবনযাপন করছে। যে সত্যিকারের মানবতাবাদী, সাম্য ও মৈত্রী প্রত্যাশী তাকে বর্ণবৈষম্য প্রতিরোধের জন্য দিবস পালনে সে আবদ্ধ না থেকে দৃষ্টি দিতে হবে ইসলামের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতি।
ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত গুণ এই যে, সে শুধু বড় বড় বুলি আউড়িয়ে বসে থাকেনি। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে মায়া কান্নায় কাঁদেনি। বরং কার্যকরীভাবে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সব ধরনের মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করেছেন। মানুষের মন ও মগজে সব বর্ণের মানুষের মর্যাদার আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
মহান আল্লাহতায়ালা সব মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে কালামে পাকে বলেছেন, “আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্র বিন্দুরূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিÐে পরিণত করেছি। এরপর সে মাংসপিÐ থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি। অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে এক নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।