পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাছ শিকারের উপযুক্ত সময়ে লুটপাট অপহরণ : ভারতীয় ট্রলার বহরে ইলিশসহ হরেক মাছ লোপাট : কোস্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত
শফিউল আলম : চৈত্রের মধ্যভাগের বর্তমান সময়টা সামুদ্রিক হরেক জাতের মাছ শিকারের জন্য ভরা মৌসুম। কেননা এখন বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র উপকূলভাগের আবহাওয়া বর্তমানে শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে। ইলিশ, চিংড়ি, রূপচান্দা, লাক্ষ্যা, কোরাল, সুরমা, মাইট্টা, ছুরি, টুনা, পোয়া, লটিয়াসহ সব প্রজাতির অর্থকরী সামুদ্রিক মাছ শিকারের জন্য এটি সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। বিভিন্ন মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করার জন্যও এখন মোক্ষম সময়। কিন্তু বসন্তের শেষভাগে এসে এ সময়েই বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূল ভাগজুড়ে অস্ত্রধারী নৌদস্যুরা ফের বেপরোয়া সন্ত্রাস, লুটতরাজের থাবা বিস্তার করেছে। প্রায় প্রতিদিনই সমুদ্র উপকূলের কোথাও না কোথাও নিরীহ সাধারণ জেলেদের ট্রলার নৌযানের উপর নৌদস্যুদের আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। আচমকা হামলা চালিয়ে জেলেদের আহত করা, গুম, অপহরণ, মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনিয়ে নিচ্ছে জেলেদের মাছ ও জালসহ মূল্যবান মালামাল। জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে জেলেরা উৎকণ্ঠায় দিন গুজরান করছে। নৌদস্যুদের লুটপাটের পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় ট্রলার বহরে সাগর থেকে ইলিশ, চিংড়িসহ হরেক ধরনের মাছ লোপাট হয়ে যাচ্ছে। নির্বিচারে সেসব চোরা শিকারি ট্রলারে মাছ নিধনের কারণে সাগরে মাছের স্বাভাবিক মজুদ, প্রজনন, বিচরণ, সার্বিক স্থিতিশীলতা (এমএসওয়াই) এবং উৎপাদনশীলতা বিপন্ন হচ্ছে। অনেক সময় ভারতীয় ট্রলার নৌযান ছাড়াও মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন ট্রলার নৌযান অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের পানিসীমা থেকে মাছ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে মাছ শিকারের ভরা মৌসুমে সাগরে নৌদস্যুতা রোধে কোস্টগার্ড নিয়মিত অভিযান ও টহল তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২৬ ও ২৭ মার্চ কোস্টগার্ডের ঝটিকা অভিযানে বঙ্গোপসাগরে অস্ত্রশস্ত্র সমেত ১৩ জন নৌদস্যুকে কোস্টগার্ড পাকড়াও করতে সক্ষম হয়েছে। অভিয়ানে নৌদস্যুদের হাতে অপহৃত ৭ জন জেলেকে উদ্ধার করা হয়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ২৬ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর বঙ্গোপসাগরে কোস্টগার্ড উক্ত সফল অভিযান পরিচালনা করে। কোস্টগার্ডের জাহাজ ‘তাজ উদ্দিন’ যোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে আটককৃত নৌদস্যুদের কাছ থেকে হাতেনাতে ২২ রাউন্ড তাজা গুলি, ৩টি চাপাতি, ১০টি মোবাইল ফোন এবং ৬ হাজার ৪৮৭ টাকা ও একটি ফিশিং নৌযান উদ্ধার করা হয়। সাগর উপকূলের নৌদস্যু-প্রবণ জায়গাগুলোতে কোস্টগার্ডের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে বছরের বর্তমান সময়েই সাগরে মাছ শিকার হয়ে থাকে বেশি। কেননা সামনে এপ্রিল-মে মাসে যখন বঙ্গোপসাগরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সতর্কতা সংকেত দেয়া হবে তখন মাছ শিকার অনেকাংশেই হ্রাস পাবে। জেলেদের তখন সাগরে যাত্রা করাই হবে চরম ঝুঁকি ও বিপদসঙ্কুল। অথচ বর্তমানে সমুদ্র উপকূলে নৌদস্যুদের একের পর এক হামলায় নিরীহ জেলেরা আহত হচ্ছে এবং সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরছে অনেকেই। সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্টে নৌদস্যুদের বিভিন্ন গ্রæপ ট্রলার নৌযান, ইঞ্জিন সমেত জেলেদের অপহরণ করে লাখ লাখ টাকা অংকের মুক্তিপণ আদায় করছে। নৌদস্যুরা আচমকা জেলেদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে মাছ ধরার ট্রলার, ট্রলারের ইঞ্জিন, ডিজেলসহ জ্বালানি তেল, মোবাইল ও রেডিওসেট, মাছ ধরার জাল, সাগরে আহরিত বিভিন্ন জাতের মাছ, নগদ টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী নির্বিচারে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময়ই জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে।
গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারি জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের ‘এলিফেন্ট পয়েন্ট’ টেকনাফ-সেন্টমার্টিন পয়েন্ট থেকে মহেশখালী কুতুবদিয়া চ্যানেল, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, নোয়াখালীর হাতিয়া, রামগতি নিঝুমদ্বীপ পর্যন্ত প্রধান সামুদ্রিক মৎস্য বিচরণ অঞ্চলের অভ্যন্তরে নৌদস্যুরা হামলা, লুটপাট চালাচ্ছে। প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকাগুলোতে সংঘটিত নৌদস্যুদের হামলা, লুটপাট ও অপহরণের অনেক ঘটনা প্রকাশ পায় না। সমুদ্রগামী মৎস্য শিকারি ট্রলার নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠন সূত্র জানায়, সংঘবদ্ধ নৌদসুরা নিরীহ জেলেদের উপর বেশিরভাগই হামলা চালানো হয়েছে জেলে নৌযানযোগে সাধারণ জেলেদের ছদ্মবেশে। উপকূলের কাছাকাছি খাঁড়ির গোপন জায়গায় ওঁৎপেতে থাকা অবস্থান থেকেও তারা হামলা চালায়। কোন কোন জায়গায় একাধিকবারও জেলেরা হামলার শিকার হচ্ছেন। জেলেরা চান জানমালের নিরাপত্তা। সাগর উপকূলে তারা চান পর্যাপ্ত টহল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।