Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভিনব প্রতারণার চেষ্টা রিমান্ডের আসামির মিথ্যা স্ট্রোকের কথা বলে মোটা অংকের টাকা দাবি

| প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : রেখা সুলতানা নামে একটি হত্যামামলার রিমান্ডের আসামির ব্রেইনস্ট্রোকের চিকিৎসার নামে মোটা অংকের টাকা আদায়ের অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে একদল প্রতারকের। ব্যর্থ হয়েছে আসামির স্বামী ও আত্মীয়-স্বজনকে জিম্মি করার অপচেষ্টাও। ভুয়া জেল সুপার ও ভুয়া ডাক্তার সেজে প্রতারক চক্রটি গত ১৯ মার্চ রাতে এই প্রতারণামূলক কান্ডটি ঘটিয়েছে। হত্যামামলাটি হচ্ছে নরসিংদীর চাঞ্চল্যকর সুজন হত্যামামলা। আর আসামি হাজীপুর ইউপি মেম্বার রেখা সুলতানা। গত শনিবার আসামি রেখা সুলতানার স্বামী আবুল কাশেম এই মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ সিআইডি পুলিশের নিকট দাখিল করেছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ইউপি মেম্বার রেখা সুলতানা, সুজন হত্যামামলার ১ নং আসামি হিসেবে সম্প্রতি আদালতে আত্মসমর্পণ করে। এরপর সিআইডি পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন জানায়। রিমান্ডের শুনানী শেষে গত ১৯ মার্চ বিজ্ঞ আদালত রেখা সুলতানার ১দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সে দিন রাতেই একদল প্রতারক নিজেরা জেল সুপার ও জেলখানার ডাক্তার সেজে হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সেক্রেটারী আলতাফ হোসেন ও তার সঙ্গী তাইজুল ইসলামের নিকট মোবাইল ফোনে জানায় যে, রিমান্ডের কথা শুনে আসামি রেখা সুলতানার ব্রেইনস্টোক করেছে। তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। তাকে জরুরী চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়া হয়েছে। রেখা সুলতানাকে বাঁচাতে হলে তার চিকিৎসার জন্য এ মুহূর্তে ১লাখ ২০হাজার টাকা প্রেরণ করতে হবে। নতুবা তাকে বাঁচানো যাবে না। প্রতারক চক্রের এই ফোন পেয়ে আলতাফ হোসেন ও তাইজুল ইসলাম আসামি রেখা সুলতানার স্বামী আবুল কাশেমের নিকট ফোন করে জানায় যে, আপনার স্ত্রী রেখা বেগম জেলখানায় ব্রেনইস্ট্রোক করেছে। অতি দ্রুত তার চিকিৎসার জন্য জেল সুপারের সাথে যোগাযোগ করুন। এই বলে তারা ৪টি মোবাইল নাম্বার দেয়। একটি মোবাইল নাম্বার হচ্ছে ০১৭৮২৮৭৬১০৯ (জেল সুপার)। আরেকটি নাম্বার হচ্ছে ০১৭৮২৮৬১৪২৯৪ (ডাক্তার) এবং টাকা পাঠানোর জন্য দুটি বিকাশ নাম্বার দেয়। নাম্বার দুটি হচ্ছে ০১৭১০৭০২৯৬৭, ০১৭৬৫৭২৮৪৩৬। এই ঘটনা জেনে আসামি রেখা সুলতানার স্বামী আবুল কাশেম ও তার আত্মীয়-স্বজন বিচলিত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তারা কথিত ডাক্তারের ০১৭৮২৮৬১৪২৯৪ নাম্বারে ফোন করে। সেখান থেকে কথিত ডাক্তার জানায় যে, এই মুহূর্তে তাকে দুটি ইনজেকশন পুষ করতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে ৬০হাজার টাকা লাগবে। আর বাকি ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকায় যেতে হবে। এই কথা শুনে রেখা সুলতানার স্বামী আবুল কাশেম জরুরী ভিত্তিতে উলেখিত বিকাশ নাম্বারে ৬০ হাজার টাকা পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু ঘটনাক্রমে রেখা সুলতানার একজন আত্মীয় ঘটনাটি তাদের আইনজীবিকে জানানোর কথা বলে। সাথে সাথেই আবুল কাশেম আইনজীবির মোবাইলে ঘটনাটি জানালে, আইনজীবি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিয়ে নরসিংদী জেল সুপারের সাথে কথা বলেন। জেল সুপার প্রত্যুত্তরে জানান যে, ঘটনাটি একেবারেই মিথ্যা এবং সাজানো। আসামি রেখা সুলতানা জেলখানার ভিতরেই আছেন এবং সুস্থ্য আছেন। তার কোন ব্রেইনস্ট্রোক করেনি। এ অবস্থায় স্বামী আবুল কাশেমসহ সকলে সম্বিৎ ফিরে পায়। কিছুক্ষণ পর কথিত ডাক্তার পূনরায় মোবাইল ফোনে তাদেরকে টাকা পাঠানোর তাগিদ দিলে রেখা সুলতানার স্বামী আবুল কাশেম প্রতারক ডাক্তারকে জানায় ‘যে আপনি কে। ‘আপনি মিথ্যা কথা বলছেন, রেখা সুলতানা জেলখানার ভিতরে সুস্থ আছে।’ এ কথা বলার সাথে সাথেই ডাক্তার নামের প্রতারক জানায়, ‘তোরা যখন সব জেনে ফেলেছিস, এখন টাকাগুলো পাঠিয়ে দে, নতুবা তোকেও মামলায় জড়ানো হবে।’
অভিযোগে আবুল কাশেম আরো জানায় যে, সুজন হত্যামামলা রুজু হওয়ার ৩ দিন পূর্বে সে এবং তার স্ত্রী রেখা সুলতান হাজীপুরের জনৈক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির সাথে দেখা করতে যায়। সেখানে সেই জনপ্রতিনিধি তখন তাদের নিকট ২লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাদেরকে মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয়। পরে সুজন হত্যা মামলা রুজু হবার পর পর দেখা যায় যে, সত্যি সত্যিই সুজন হত্যা মামলায় তার স্ত্রী ইউপি মেম্বার রেখা সুলতানাকে ১নং আসামি করে সুজন হত্যামামলা দায়ের করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দাবি


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ