Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘটনাস্থলের কাছে বোমা বিস্ফোরণ

সিলেটে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান

প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:২৫ এএম, ২৬ মার্চ, ২০১৭

ক্স    পুলিশসহ নিহত ৩ :  আহত প্রায় অর্ধশত
ক্স    আহত র‌্যাব কর্মকর্তা লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় প্রেরণ
ক্স    আতিয়া মহল থেকে ২১ শিশু ২৭ নারীসহ ৭৮ জনকে উদ্ধার
ক্স    একের পর এক গুলি ও ১২টি বোমার বিস্ফোরণ
ক্স    বিদ্যুৎ গ্যাস ও ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন


খলিলুর রহমান : সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানার কাছেই বোমা বিস্ফোরণে পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত। গত সন্ধ্যা ৭টার দিকে অভিযান চলাকালে জঙ্গি আস্তানা থেকে এক কিলোমিটার দূরে গোটাটির নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুছা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকর মাদরাসার সামনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হয়েছেন। পরে একইস্থানে কিছুক্ষণ পরে আরেকটি অবিস্ফোরিত বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ইন্সপেক্টর আবু ফয়সাল নিহত হন। এছাড়া দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন রশিদ, ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলামসহ আরো প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশসহ কমপক্ষে ৪০ জনকে সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর মধ্যে শিরিন মিয়া, জালালাবাদ থানার পরিদর্শক  (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও দক্ষিণ সুরমা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জনি লাল দের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুরুতর আহতদের মধ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এর আগে ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের অভিযানের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে ব্রিফ করেন সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। তিনি জানান, ওই অভিযানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও ওই ভবনে জিম্মি থাকা ৭৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, তবে অভিযান এখনও শেষ হয়নি। ভবনের ভেতর জঙ্গিরা অবস্থান করছে। তবে কতজন রয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানান, আতিয়া মহলের পাঁচ তলা ভবনে ৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তন্মধ্যে একটিতে রয়েছে জঙ্গিরা। বাকি ২৯টি ফ্ল্যাটে আটকা পড়া ৭৮ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন মহিলা ও ২১ শিশু।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল আটকে পড়াদের অক্ষত উদ্ধার করা। সেই লক্ষ্যে আমরা সফল হয়েছি। এখন সতর্কতার সাথে একটি করে কক্ষ ‘ক্লিয়ার’ করে যাচ্ছি। তবে জঙ্গিরা বিস্ফোরণের মাধ্যমে আমাদের বাধা দিতে চাইছে। তিনি জানান, জঙ্গিরা ১২টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ফ্ল্যাটের ভেতরে বেশ কয়েকজন জঙ্গি রয়েছে। প্যারা-কমান্ডোরা জঙ্গিদের জীবিত ধরার চেষ্টা করছে।
‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান আরো জানান, এ অভিযান কখন শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না। কারণ আতিয়া মহলের ৫তলা বিশিষ্ট ভবনের ৩০টি ফ্লাটে দেড় শতাধিক কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষ, সিঁড়িঘর ও দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে আরডি ফিট করে রেখেছে। ফলে প্যারাকমান্ডারদের সতর্কতার সঙ্গে অপারেশন পরিচালনা করতে হচ্ছে। তাই অভিযানে অনেক সময় লাগছে। অভিযান রাতেও চলবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অভিযানের কমান্ডার ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন সিদ্ধান্ত নেবেন।
জঙ্গি আস্তানায় প্যারা-কমান্ডো
গতকাল সকাল ৮টার দিকে আতিয়া মহলে চারদিকে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোর দলের বেশ কিছু সদস্য। এরপর শুরু হয় তৎপরতা। নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল কায়সার। তাদের সাথে ছিল পুলিশের সোয়াত টিমের সদস্যরা। এছাড়া আস্তানার বাইরে ছিলেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই, ডিবি, এসবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ।
‘অপারেশন টোয়ালাইট’
সেনাবাহিনী ‘অপারেশন টোয়ালাইট’ নাম দিয়ে আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। তবে এর আগে পুলিশে এ অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘স্প্রিং রেইন’।
বুলেট প্রæফ আর্মার ভেহিক্যাল
গতকাল সকাল ৯টার দিকে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের জন্য সেনাবাহিনীর চারটি বুলেট প্রæফ আর্মার ভেহিক্যাল নিয়ে আসা হয়। পরে সেগুলো সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ রোডের শিববাড়ি রাস্তার মুখে রাখা হয়। পরবর্তীতে অভিযানকাজে সেগুলো ব্যবহার করা হয়।
বাসিন্দাদের উদ্ধার
আতিয়া মহলে বসবাসরত ৭৮ বাসিন্দাকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোর বাহিনীর সদস্যরা। বেলা সোয়া ১টার দিকে জালালাবাদ সেনানিবাসের ইনটেলিজেন্স উইংয়ের এক কর্মকর্তা উপস্থিত সংবাদিকদের জানান, ওই ভবনে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে।
এদিকে, আতিয়া মহল ও তার পাশের আতিয়া মহল-২ নামের আরেকটি ভবনের মাঝখানে ফায়ার সার্ভিসের মই দিয়ে সেতু তৈরি করে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওই ভবন থেকে বাসিন্দারে উদ্ধার করতে দেখা গেছে।
গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ
আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানায় একের এক গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। গতকাল বেলা ২টায় দিকে প্রথম দফায় বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বেল ২টা ১৭ মিনিট এবং ২টা ৩১ মিনিটে ফের দু’দফায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এছাড়াও বিকাল ৪টা ৫৬, ৫৭ ও ৫৮ মিনিটের সময় পরপর ৩টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ওদিকে, একের পর এক গুলি ও বিস্ফোরণের কারণে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
যান চলাচল বন্ধ
অভিযানের সময় ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ‘অপারেশন টোয়ালাইট’ শুরু হওয়ার আগে থেকে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করা হয়। বিকাল পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে সাধারণ মানুষরা ভোগন্তি দেখা গেছে।
গ্যাস ও বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন
আতিয়া মহলে অভিযান চালানোর সময় বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ডিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে আতিয়া মহলের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এছাড়াও আতিয়া মহল থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে সাংবাদিকসহ কাউকে অবস্থান করতে দেওয়া হয়নি। গত শুক্রবারও ওই এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
অভিযান দেখতে গিয়ে আহত যুবক
জঙ্গি আস্তানায় চলা অভিযান দেখতে গিয়ে আহত হয়েছেন শিবুল মালাকার (২৭) নামের এক যুবক। গতকাল বিকাল পৌনে ৩টার দিকে তিনি আহত হন। পরবর্তীতে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত শিবুল শিববাড়ির কাছেই পৈতপাড়া এলাকার বসন্ত মালাকারের ছেলে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে আরামবাগ থেকে দুইজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে সিলেটে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা (সিটিটিসি)। পরবর্তীতে সিলেটের পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ ও ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা দক্ষিণ সুরমা শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানাটি ঘিরে রাখে। সকাল ৭টার দিকে ওই আস্তানা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তখন পুলিশ নিশ্চিত হয় সেখানে জঙ্গিদের অবস্থান রয়েছে। পরবর্তীতে দিনভর পুলিশ জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। কিন্তু পুলিশের এমন আহ্বানে তারা সাড়া না দিয়ে উল্টো সোয়াত টিমের সদস্যতের তাড়াতাড়ি পাঠানোর জন্য আহ্বান জানায় জঙ্গিরা। পরে শুক্রবার বিকালে সোয়াত টিমের সদস্যরা সেখানে অবস্থান করে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এক পর্যায়ে রাত ৮টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম সেখানে অবস্থান করেন এবং শনিবার সকালে পুরো অভিযানে নেতৃত্ব দেন তারা।



 

Show all comments
  • রুবায়েত ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১১:২৮ এএম says : 0
    এসব জঙ্গি হামলার পিছনে করা সেটা আগে খুঁজে বের করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Emam Hossain ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১১:৫৩ এএম says : 0
    বছরে তিন মাস আর্মি কে দেশ শাসন করতে দেওয়া দরকার তাহলে জঙ্গি তো দূরের কথা কেও খারাপ কাজ করার কথা মাথাই আনবেনা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ