Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যোগ দিল সেনাবাহিনী

সিলেটে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের প্রস্তুতি

প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:৩৪ এএম, ২৫ মার্চ, ২০১৭

খলিলুর রহমান :সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমা থানার শিববাড়ি এলাকায় সন্দেহজনক জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে প্রস্তুতি সম্পন্ন। রাত ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আস্তানাটি ঘিরে রেখেছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াত। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী।

পুলিশ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে ‘আতিয়া মহল’ নামের পাঁচতলা বাড়িটি ঘিরে রাখে। বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে ধারণা পুলিশের। ঢাকা থেকে সোয়াতের একটি দল গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে সড়কপথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। সন্দেহজনক ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের প্রস্তুতিতে সোয়াতের পাশাপাশি সেনাবাহিনী যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ কমিশনার মো. গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের (জঙ্গি) আত্মসমর্পণ করাতে। এ জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিত আমাদের অনুকূলে রয়েছে।’
এদিকে ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানে উপস্থিত হয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার নাজমুন আরা খানমসহ প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর ‘আতিয়া মহল’ ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরে আসে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ওই এলাকার বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া আতিয়া মহলের বিপরীত দিকে ‘আতিয়া মহল-২’ নামের ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া অন্তত ৭০ জন বাসীন্দাকে। সন্ধ্যার দিকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়। এর আগে তাদের স্থানীয় জহির-তাহির মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ে রাখা হয়েছিল।


পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে আরামবাগে এক ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য মতে সিলেটে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা (সিটিটিসি)। পরবর্তীতে সিলেটের পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
এদিকে, শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ ও ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা দক্ষিণ সুরমা শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানাটি ঘিরে রাখে। সকাল ৭টার দিকে ওই আস্তানা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তখন পুলিশ নিশ্চিত হয় সেখানে জঙ্গিদের অবস্থান রয়েছে। পরবর্তীতে ওই আস্তানার আশপাশের সকল বাসিন্দারে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। কিছুক্ষণ পর পর পুলিশ জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। কিন্তু পুলিশের এমন আহ্বানে তারা সাড়া না দিয়ে উল্টো সোয়াত টিমের সদস্যতের তাড়াতাড়ি পাঠানোর জন্য আহ্বান জানায়।
জঙ্গি আস্তানার নাম আতিয়া মহল
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা ভবনের নাম আতিয়া মহল। ওই বাড়িতে দুটি ভবন রয়েছে। এগুলো মধ্যে মোট ৩০টি ফ্লাট রয়েছে। একটি ভবনের নিচ তলায় একটি ফ্লাটে জঙ্গিরা অবস্থান করে। পরবর্তীতে শুক্রবার দুপুরের মধ্যে বাকিদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।
প্রাণ কোম্পানীর এসআর পরিচয়ে বাসা ভাড়া
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়িতে আতিয়া মহলে প্রাণ কোম্পানীর সেলস রিপ্রেজেন্টিটিভ পরিচয়ে ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। শুক্রবার উপস্থিত সাংবাদিকেদের কাছে বাড়ির মালিক উস্তার আলী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, প্রায় তিন মাস আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে কাওছার ও মর্জিনা নামে দু’জন বাসা ভাড়া নেয়। কাওছার প্রাণ কোম্পানীর সেলস রিপ্রেজেন্টিটিভ হিসেবে কর্মরত। এমন পরিচয়ে ফ্লাটটি ভাড়া নেয়। তবে তাদের আচরণে সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়েনি বলে জানান বাড়িওলা।
গ্রেনেড বিস্ফোরণ
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলের চারতলা বিশিষ্ট একটি ভবনের নিচ তলায় একটি ফ্লাটে জঙ্গিরা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাদের অবস্থান জানান দিয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রুকন উদ্দিন বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে জঙ্গিরা বিস্ফোরণ ঘটায়। আমাদের ধারণা দুটি শক্তিশালী গ্রেনেট বিস্ফোরণ ঘটনা হয়েছে। এরপর তারা নিশ্চিত হন সেখানে জঙ্গিরা রয়েছেন।
আস্তানায় চার জঙ্গি
ঘিরে রাখা জঙ্গি আস্তানায় চারজন রয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী বলে ধারণা করছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. রুকন উদ্দিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ভেতরে চারজন জঙ্গি রয়েছে। নব্য জেএমবির শীর্ষনেতা মুসা ও নারী জঙ্গি মর্জিনা সহযোগীদের নিয়ে অবস্থান নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সন্ধান মিলল যেভাবে
সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে আরামবাগে এক জঙ্গি আস্তানা থেকে দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দেয়া তথ্যমতে সিলেটের জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা (সিটিটিসি)। পরবর্তীতে সিলেট পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রুকন উদ্দিন জানান, চট্টগামের গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরাই সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানার খবর দেয়। পরে প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যর সাহায্যে বাড়িটি চিহ্নিত করা হয় এবং সিলেট পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
থেমে থেমে গুলির আওয়াজ
পুলিশ জানিয়েছে, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা ওই ভবনে ভেতরে জঙ্গিদের আত্মসর্পণের জন্য আহ্বান জানানো হয়। শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একাধিকবার পুলিশের তাদের আত্মসর্পণের আহ্বান জানায়। কিন্তু এতে তারা কোন সাড়া দেয়নি। পুলিশের দাবি, জঙ্গিরা সকাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এছাড়াও থেমে থেমে গুলিও শব্দও শোনা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে ভেতর থেকে পুলিশের উদ্দেশে এক জঙ্গি বলে, ‘তাড়াতাড়ি সোয়াত পাঠান। দেরি করছেন কেন? আমাদের সময় কম।’
আশপাশে গ্যাস-বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়িতে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অভিযান চালানো হয়েছে। পাশাপাশি আতিয়া ভিলাতেও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল বলে জানা গেছে।
সিলেটে সোয়াত টিম
শুক্রবার বিকাল ৩টা ৫২ মিনিটের সময় কালো একটি মাইক্রোবাসে করে সোয়াত টিমের সদস্যরা ঢাকা থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়িতে পৌঁছায়। পরে তারা আস্তানায় কিভাবে অভিযান চালাবে সেটা পরিকল্পনা করে। এক পর্যায়ে তারা ওই আস্তানাকে ঘিরে ফেলে। অভিযান শুরুর আগে আশপাশের লোকজনকে সরিয়ে দেয়া হয়।
আনা হয় অ্যাম্বুলেন্স
শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলের একটি ভবনে জঙ্গি আস্তানার পাশে দুটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর চার সদস্যের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ