Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইএসকে হঠাতে যুক্তরাষ্ট্র চায় আরবদের ইরানকে রুখতে আরবরা চায় যুক্তরাষ্ট্রকে

| প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশ্শারক আল-আওসাত : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ড. ওয়ালিদ ফারেস জোর দিয়ে বলেছেন যে ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস, আরেক নাম ইসলামিক স্টেট বা আইএস) কে পরাজিত করতে ওয়াশিংটনের দরকার আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর অংশগ্রহণ। সিরিয়া ও ইরাকেও এ সব দেশের রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করা উচিত। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানকালে লেবাননে জন্মগহণকারী ফারেস ছিলেন তার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপদেষ্টা।  এখনো তিনি প্রশাসনের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন, হয় সরাসরি নয় কংগ্রেসের মাধ্যমে।
মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা বিষয়ে আশ্শারক আল আওসাতের সাথে সাক্ষাতকারের সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন যে যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই আরব বিশে^ ইরানের সম্প্রসারণবাদের অবসান ঘটাবে।
তিনি গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সউদী উপ যুবরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে বৈঠকের প্রশংসা করার মাধ্যমে সাক্ষাতকারের সূচনা করেন। তিনি বলেন, এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পর্যায়ে দু’পক্ষের অংশীদারত্বের বিষয় পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। ফারেস ব্যাখ্যা করে বলেন, এ বৈঠকটি সউদী আরবকে ট্রাম্পের কাছে এ অঞ্চলে শুধু সউদী আরব নয়, অন্যান্য মধ্যপন্থী দেশগুলোর সাথেও কৌশলগত অংশীদারত্বের প্রস্তাব দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, এ অংশীদারিত্ব হবে আইএস ও তার মিত্রগণ এবং ইরানের সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ভিত্তি।
তিনি বলেন, এ অংশীদারিত্বের আত্মপ্রকাশ ঘটবে এবং নিরাপত্তা পর্যায়ে সমন্বয় শুরু হবে। কারণ, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর অংশগ্রহণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন। পরে প্রয়োজন রাজনৈতিক পর্যায়ে ভূমিকা যা সিরিয়া ও ইরাক সংকট নিরসনে সহায়তা করবে। বিনিময়ে উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে যারা বিশেষ করে ইয়েমেন ও আশপাশের এলাকায় ইরানি হস্তক্ষেপ প্রত্যক্ষ করছে, তা রুখতে তাদের এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন।
ফারেস আরো বলেন, ইরান এবং ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনে তাদের মিত্ররা এ অংশীদারত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
হেজবুল্লাহ ইসরাইলের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালাবে বলে লেবাননের হেজবল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর হুমকি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এ ধরনের হামলা এ অঞ্চল ও বিশে^ ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তা ছড়াবে এবং তা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী কাজ বলে বিবেচিত হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি হবে এক নজিরবিহীন ঝুঁকি নেয়া, আর তা বিপর্যয়কর ফলাফলের সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, পারমাণবিক হামলার বিরুদ্ধে জবাব হবে হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে, লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে নয়।
ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ধরনের বৈঠক অপরিহার্য এবং তা সিরিয়া সংকটের সমাধান করবে যা সকল বিদেশী সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে আইএস ও আল কায়েদা, হেজবুল্লাহ ও ইরানি বিপ্লবী গার্ড প্রত্যাহারের পর সৃষ্টি হবে।
ফারেস বলেন, সিরিয়ায় রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছার এটাই একমাত্র পথ। এ সব বাহিনী যতদিন সে দেশে থাকবে ততদিন সেখানে আর কারো সেখানে থাকা সম্ভব নয়।
তিনি ব্যাখ্যা কেের বলেন, ওয়াশিংটনের মিত্ররা এ সমাধানে সম্মত হবে, তবে ইরান হবে না। তিনি বলেন, রাশিয়ার স্বার্থে এসব বিদেশী বাহিনী প্রত্যাহার প্রয়োজন।   
তিনি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর মাধ্যমে আইএস পরাজিত হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে মধ্যপন্থী সুন্নী আরব বাহিনীগুলোকে অবশ্যই জঙ্গিদের দখলীকৃত এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, এ সকল এলাকায় আসাদ বাহিনীর উপস্থিতি ভবিষ্যতে সমস্যা ডেকে আনবে যেমনটি হয়েছে ইরাকে।
তিনি বলেন, আইএসের কাছ থেকে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া তদারকিতে আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলো একটি ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের স্থল বাহিনী মোতায়েন করা আবশ্যক নয়, তবে তাদেরকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হতে হবে এবং পরে একটি ব্যাপক রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে।  
ইরান কয়েক মিনিটে ইসরাইলকে ধ্বংস করে দিতে পারে বলে হুমকি এবং হেজবুল্লাহর ইসরাইলি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সব শক্তিগুলো একটি সমস্যার সম্মুখীন। লেবাননে বেশীরভাগ মানুষ হেজবুল্লাহকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা ২০০৫ সালে সিডার বিপ্লব দেখেছি। ২০০৯ সালে দেখেছি ইরানে সিংহভাগ তরুণ এ শাসকদের চায় না, তারা চায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অগ্রগতি। ইরাকেও আমরা একই জিনিস দেখেছি। সেখানে বেশীরভাগ মানুষ মধ্যপন্থী, কিন্তু তারা দমনের শিকার।     
ফারেস বলেন, এ সকল বাহিনী তাদের সমর্থকদের এ বলে বিভ্রান্ত করছে যে তারা ধর্মযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে।  ফিলিস্তিনিরা তাদের সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায়। তারা চায় না ইরান একটি যুদ্ধ শুরু করুক যেখানে তারা অতীতে যা হারিয়েছে তার চেয়েও তাদের বেশী হারাতে হয়।
তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন যে ইরানের বিরোধীরা একটি বিদ্রোহ ঘটাতে সক্ষম হবে যা ২০০৯-এর চেয়েও প্রচÐ হবে।
এদিকে ট্রাম্প ফিলিস্তিন-ইসরাইলি বিরোধ নিরসনে আগ্রহী এ কথা প্রকাশ করে ফারেস বলেন যে ওয়াশিংটনের হাতে সমাধানের ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও মার্কিন নেতারা দশকের পর দশক ধরে শান্তি অর্জন করতে না পারায় ট্রাম্প বিস্মময় প্রকাশ করেছেন।  
মধ্যপন্থী আরব নেতারা ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করত পারেন মনে করেন ট্রাম্প। তিনি এ সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে তার দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
হেজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে এক নতুন যুদ্ধ শুরুর আগে ট্রাম্প তা করতে পারবেন কিনা আশার্ক আল-আওসাতের এক প্রশ্নের জবাবে ফারেস বলেনঃ দলটি প্রচারণার উপর নির্ভরশীল। যদি তারা ব্যর্থ হয় তাহলে তারা ঝুঁকি নেবে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নেয়ার সিদ্ধান্ত নাসরাল্লাহর উপর নয়, ইরানি রাজধানীর উপর নির্ভর করে।
তিনি বলেন, এটা ২০০৬ বা ১৯৯৯ নয়। তারা জানে এটা ২০১৭।  তারা নানা যুদ্ধে জড়িত। তারা যদি ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর মত ভুল করে তখন তার প্রতি আরব জনগণের সমর্থন নিশ্চিত করতে পারবে না। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, এটা হবে সিরিয়া ও লেবাননে তাদের কৌশলগত পরাজয়ের শুরু। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ