Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

আতঙ্কে আম চাষিরা

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ছাড়াই সংগ্রহের সময় নির্ধারণ

| প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


হাসান সোহেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফিরে : ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে যাতে অপরিপক্ব আম পাকানো এবং বাজারজাত করতে না পারে সে জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তটি সার্বিকভাবে ভালো হলেও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেক কৃষক। কারণ সময়ের আগে আম পাকলেও তারা বাজারজাত করতে পারবে না। তাই আগেভাগে যে আম পাকবে সেই বাগান নিয়ে চাষিদের মধ্যে এক ধরনের দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। গত বছরও কৃষকরা এ সমস্যায় পড়েছিল। সময় বেঁধে দেয়ার কারণে একসঙ্গে বাজারে আমের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় আম চাষিরাও ন্যায্য দাম পাননি। এরকম পরিস্থিতিতে এবারও আতঙ্কে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম উৎপাদনকারী কৃষকরা। যদিও পরিপক্ব আম পাড়ার বিষয়ে শিথিলতা রাখা হবে বলে জানিয়েছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাবেক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ইউএসআইডির প্রকল্প কর্মকর্তা সাদিকুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়াগত কারণে আম পরিপক্ব হওয়া ও আম পাকার সময়ের মধ্যে তারতাম্য হয়। যে বছর আবহাওয়া শুষ্ক ও গরম থাকে সে বছর আম নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পেকে যাবে। আবার যে বছর আমের মৌসুমে বৃষ্টি হয় ও আবহওয়া ঠাÐা থাকে সে বছর আম দেরিতে পাকে। আবার যে বাগানে বা আম গাছের যে পাশে সূর্যের তাপ বেশি লাগে সেই পাশের আম দ্রæত পেকে যায়। তাই আম পাকার একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া যুক্তিহীন এবং এটা কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জানা গেছে, গত বছর যে কোনো ধরনের আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ মে থেকে পরবর্তী সময়। গোপালভোগসহ গুটিজাত আম ১ জুন। হিমসাগর/খিরসাপাত এবং লক্ষণভোগ ১০ জুন। ল্যাংড়া ও বোম্বাই, ২৫ জুন। ফজলি, ১ জুলাই। আম্রপলি ও আশ্বিনা আম বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৫ জুলাই। পরবর্তীতে নাবি জাতের ফজলিসহ অন্যান্য আম পর্যায়ক্রমে বাজারে আনার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এই সময় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্ধারণ না করায় অনেক কৃষককেই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
আম চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে আম বাগান। আগামী মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত তিন ভাগে শতাধিক জাতের আম থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর এসব বাগানে। এ সময় চাষিরা মুকুল, গুটি,  ছোট-বড় আমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে জেলার বাইরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাগান বেচাকেনা করেন। কিন্তু গত বছর নির্দিষ্ট সময় আম নামানোর নিয়মে বহু বাগানে আম নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে এবারো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রানীহাটি গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গাছে আম পেকে গেলেও তারা আম পাড়তে পারেনি। আবার একসঙ্গে বাজারে আমের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় আমচাষিরা বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়েছিল। তিনি জানান, একই জাতের আম বিভিন্ন সময়ে পরিপক্বতা আসতে পারে। পাশের বাগান দেখিয়ে তিনি জানান, একই জাতের আম মুকুল অবস্থায় আছে আবার কোনো বাগানে গুটি মাত্র শুরু হয়েছে। আবার কোনো বাগানে গুটি একটু বড়ও হয়েছে। এদিকে আম সারা দেশে কম-বেশি হলেও শুধুমাত্র গুটিকয়েক জেলাতেই সময় বেঁধে দেয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন আম চাষিরা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বারি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিন বলেন, আম পাড়ার সময় বেঁধে দেয়া সঠিক কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি না। ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলেই আম পাড়া যায়। ওই আম কোনো কিছু ব্যবহার না করে ৫-১০ দিন ঘরে রাখা যায়। আম পাড়ার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে  দেয়ার কোনো যুক্তি নেই, কেননা এ অঞ্চলে একই জাতের আম বিভিন্ন সময়ে পরিপক্ব হতে দেখা যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিকর কোনো কিছু ব্যবহার করলে তাকে সচেতনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক তদারকির মাধ্যমে নিবারণ করতে হবে। তবে আমের সময় বেঁধে দেয়ার এ আতঙ্কের মধ্যে উৎপাদন বাড়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মনজুরুল হুদা বলেন, চলতি বছর জেলার ৫টি উপজেলায় ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি এই লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, এবারের আম পাড়ার সময় নির্ধারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দুটা বৈজ্ঞানিক মিটিং করেছি। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। একই জাতের আম বিভিন্ন সময়ে পাকলেও একটি নিরাপদ সময় নির্ধারণ করা হবে। সময় নির্ধারণ করা হলেও পরিপক্ব আম পাড়ার বিষয়ে শিথিলতা রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আম পাড়া নিয়ে কৃষকদের আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত রাখা হবে। ইতোমধ্যে জেলা শহরের বিভিন্ন ইউনিয়নে এ বিষয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আম

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ