Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : সেবা নেই আছে মাদকসেবীদের আড্ডা যৌন হয়রানি হচ্ছে নারী রোগীরা

প্রকাশের সময় : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চৗদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা : অ্যাম্বুলেন্স সংকট, মাদকসেবীদের উৎপাত, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ঔষধ কোম্পানী ও প্রাইভেট হাসাপাতল-ক্লিনিকের প্রতিনিধিদের টানা-হেঁচড়া, ডাক্তারদের অনুপস্থিতি, নার্সদের অবৈধ অর্থ দাবীসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। এদিকে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারী স্বাস্থ্য মন্ত্রী মো: নাসিম চৌদ্দগ্রামের একটি জনসভায় নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স দেয়ার ঘোষণা দিলেও তা আজও আসেনি।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ডেন্টাল সার্জন ডা: তাসনিমা শামীম আশরাফীর কক্ষে রোগী অপেক্ষা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তখন একইকক্ষে বসা সহকারী ডেন্টাল আবদুর রাজ্জাককে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন মেডাম বাইরে গেছেন। ৩০ মিনিট পর আবারো এসে দেখা গেছে তিনি তখনও আসেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি প্রতিদিন হাসপাতালে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে আধা ঘন্টা-এক ঘন্টা সময় দিয়েই বাইরে গিয়ে প্রাইভেট কিøনিক বা বাসায় রোগী দেখেন।
এছাড়া হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের প্রচ- ভিড় ও ডাক্তারদের প্রতিটি চেম্বারের সামনে ওঠতি বয়সের ৩/৪জন করে যুবক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক/হাসপাতালের প্রতিনিধি বলে তারা জানায়। রোগীর ভিড়ে ডাক্তারদের চেম্বারের প্রবেশ গিয়ে এসব যুবকদের হাতে অনেক নারী, কিশোরী যৌন হয়রানির শিকার হলেও ভয়ে নীরবে সহ্য করে চলে যাচ্ছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ডাক্তার ও কর্মচারী জানান। তারা আরো জানান, হাসপাতলের ভিতরেই রয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডা ও রেন্ট এ কারের অবৈধ পার্কিং। মাদকসেবীরা ক্লিনিক/হাসপাতালের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ভাল ডাক্তার দেখানো, এক্সরে, প্যাথলজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করানোর কথা বলে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সহজ-সরল মহিলা রোগীদের হাসপাতাল থেকে বাইরে নিয়ে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এছাড়া প্রতিদিন হাসপাতালের ভিতরের পুকুর পাড়ে কার-মাইক্রো ধোয়া ও প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় একাধিক কার-মাইক্রো রাখার কারণে রোগী ও তাদের স্বজনদের চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় বলে তারা অভিযোগ করেন।
এদিকে হাসপাতালের দ্বিতীয়তলায় গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের ব্যবহৃত টয়লেট ও ওয়ার্ডের-ফ্লোরও রয়েছে অপরিষ্কার। কর্তব্যরত নার্সদের সেবার নামে চলে রোগীদের মানসিক নির্যাতন। টাকা ছাড়া সেবা মিলে না তাদের কাছ থেকে।
আছমা নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমার এক ছেলেকে ভর্তি করেছি। তার হাতের ক্যানোলা লাগাইতে নার্সকে চাহিদামতো ১শত টাকা দিতে হয়েছে।
একই অভিযোগ করেন চিওড়া ইউনিয়নের সারপটি গ্রামের ১৬ মাস বয়সি মাহমুদার মা আয়শা, পন্নারা গ্রামের ১৮ মাস বয়সি হাসানের মা সেলিনা বেগম। তারা অভিযোগ করেন, কোন সমস্যা দেখা দিলে নার্সদের বার বার ডাকলেও তারা সঠিক সময়ে আসে না।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডা: মনিরুল ইসলাম চৌধুরী মিলন বলেন, ডা: আশরাফি কোথায় গেছেন তিনি জানেন না। এছাড়া অন্য দুয়েক জন ডাক্তার ছুটিতে রয়েছেন। ক্যানোলা লাগানো বাবদ নার্সদের ১০০ শত টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। ডিউটি চলাকালীন টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই তারপরও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডাক্তারদের অনুপস্থিতি ও নার্সদের বাধ্যতামূলক অর্থ দাবীর বিষয়ে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা: মুজিবুর রহমান বলেন, খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চৌদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ