Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অমীমাংসিত সমস্যা নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের কথা বলার বিকল্প নেই

| প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


সাউথ এশিয়া মনিটর : ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন বলেছেন, অমীমাংসিত সমস্যাগুলো নিয়ে পাকিস্তানের সাথে কথা বলার কোনো বিকল্প নেই। কারণ, কথাবার্তা না বলা হবে দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা দেয়া এবং সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের কর্মসূচির কাছে নতিস্বীকার করা।
পূর্ববর্তী মনমোহন সিংয়ের ইউপিএ সরকারের প্রধান পররাষ্ট্রনীতি কৌশলবিদ মেনন বলেন, ভারত-পাকিস্তান সমস্যার অপ্রাসঙ্গিক বিষয় থেকে পাকিস্তান সরে আসছে, সে জন্য ধন্যবাদ। অন্যদিকে ভারতের মোটিভও হ্রাস পাচ্ছে। মেননের উপলব্ধি হচ্ছে যে ট্রাজেডি এই যে ভারতের কাছ পাকিস্তান ক্রমবর্ধমানভাবে এক একক ইস্যু দেশে পরিণত হচ্ছে এবং ইস্যুটি হচ্ছে ‘নিরাপত্তার একশূন্য সমষ্টি’ অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদ।
মেনন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এবং ইসলামাবাদ, বেইজিং, কলম্বো ও তেল আবিবসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজধানীগুলোতে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তার নয়াদিল্লীর বাসভবনে আলাপের সময় তিনি বলেন, আপনি যদি কথা না বলেন তাহলে আপনি আসলে সন্ত্রাসী ও তার মদদদাতাদের তারা যা চায় তাই দিচ্ছেন, কারণ তারা আলোচনা চায় না, তারা সংলাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আপনি কেন তাদের তা করতে দেবেন, তার কারণ দেখি না।
তিনি বলেন, কথাবার্তা বলার অর্থ এই নয় যে সন্ত্রাসীদের সাথে আলোচনার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ আপনি করবেন না। আপনাকে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে হবে, সে জন্য যা করা প্রয়োজন তা করুন।
মেনন বলেন, এটার অর্থও এ নয় যে আপনি আলোচনা বন্ধ করবেন। আপনার যদি কোনো সুযোগ থাকে তবে কথা বলুন। আপনার অনেক কিছু বলার আছে, আপনি চান যুদ্ধবিরতি পুনর্বহাল হোক, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস চলমান থাকলেও আপনি সম্পর্কে অচলাবস্থা চান না, এর এক বড় অংশই হচ্ছে পাকিস্তানি রাষ্ট্র ও পাকিস্তানি রাষ্ট্রের চরদের সমর্থনে। তিনি বলেন, আমাদের এ বিষয়টি উত্থাপন করা ও কথা বলা দরকার।
মেনন মনে করেন, সামরিক শক্তির প্রয়োগ অথবা পাকিস্তানের সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো ধ্বংসে ভারতের আন্তঃসীমান্ত পদক্ষেপের কার্যকারিতা সীমিত। তিনি বলেন, এতে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের মদদদাতা পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা যাদের দ্বারা তা নিয়ন্ত্রিত হয় সেই আইএসআই (ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) বা জিহাদি তানজিম গোষ্ঠির মনোভাবের পরিবর্তন হবে না কিংবা তাতে তাদের অবকাঠামো বা তারা যে পথ অনুসরণ করে ও যা তাদের অনুপ্রাণিত করে তা ধ্বংস হবে না। এ সবের পরিবর্তন ঘটবে না।
জঙ্গিরা যে কোনোভাবে শহীদ হতে চায় এবং তারা মরতে ভীত নয়।
মেনন বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের আমলেও গোপন সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। তবে মনমোহন সিংয়ের সরকার এ বিষয় প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ এ ধরনের পদক্ষেপের ক্ষেত্রে জনমত প্রভাবিত করার বদলে এর ফলাফলের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। তিনি বলেন, দেশে জনমতকে প্রভাবিত করা যদি আপনার সিদ্ধান্ত হয় তাহলে আপনাকে এর পরিণতির দিক দেখতে হবে। তিনি বলেন, এগুলো ফলাফলের ব্যাপারে জনগণের প্রত্যাশা বৃদ্ধি করে এবং তারপর তার তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
যে মুহূর্তে আপনি প্রকাশ করবেন তখন প্রত্যাশিত ফলাফল ঘটবে না বলে ধারণা করা যায়, কারণ তখন দু’পক্ষেরই মুখরক্ষার ব্যাপার হয়ে যায়। উভয়পক্ষই দেখাতে চায় যে তাদের প্রতিরোধ করা যায়নি বা তারা ভীত নয়, বলেন মেনন।
তিনি বলেন, মনমোহন সিং তার সময়ে নেয়া গোপন পদক্ষেপের ব্যাপারে নীরব ছিলেন এবং তা প্রকাশ না করার পক্ষে তার যুক্তি এখনো বৈধ।
মেনন বলেন, ভারতীয় নীতি প্রণেতারা পাকিস্তানের সাথে আচরণের ব্যাপারে অদ্ভুত উভয় সংকটে পড়েন যেন এটা এক পাকিস্তান নয় এবং পাকিস্তানি সমাজের একটি বড় অংশই ভারতের প্রতি বৈরী নয়।
‘চয়েসেস-ইনসাইড দি মেকিং অব ইন্ডিয়াস ফরেন পলিসি’ শীর্ষক সম্প্রতি প্রকাশিত গ্রন্থে বলেছেন, একজন ভারতীয় নীতি প্রণেতাকে কয়েকটি পাকিস্তানের সাথে কাজ করতে হয় যেমন সুশীল সমাজ, পাকিস্তানের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, বেসামরিক রাজনীতিক, সেনাবাহিনী ও আইএসআই এবং ধর্মীয় অধিকার (যারা রাজনৈতিক দল থেকে জিহাদি তানজিমে রূপ নেয়)।  
মেনন বলেন, ভারতের প্রতি সব পাকিস্তানিরই মনোভাব এক নয় এবং প্রত্যেকেই ভারত ও ভারতীয়দের প্রতি ভিন্নভাবে সাড়া দেয় ও পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।  
তিনি বলেন, পাকিস্তান আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে চীনের ঘনিষ্ঠ এবং তাদের সাথে অধিকতর সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ায় ভারত-পাকিন্তান সম্পর্কে তার ছাপ পড়বে ও সম্ভবত তার মাশুল দিতে হবে।



 

Show all comments
  • Md.Nasir Uddin ৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১১:৩১ এএম says : 0
    ঠিক কথা।আসলে গুনী লোক ঠিক কথাই বলে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ