পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : সাংকি কিম ও মায়াংগোক কুন দম্পতির বাড়ি সুদূর কোরিয়ায়। বাংলাদেশের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক ছিলো না। এখানে নেই তাদের কোন আত্মীয় স্বজন। এমনকি বাংলা ভাষাও জানেন না তারা।
তবুও এই বাঙালি জাতিকেই সুশিক্ষিত করতে এগিয়ে এলেন মহানুভব এই দম্পতি। নিজের অর্থ-সম্পদ দিয়ে ভোগ বিলাস না করে তারা শিক্ষার আলো ছড়াতে ছুটে এলেন সীতাকু-ে। এখানে জেলে পল্লীতে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি এখন সমাজসেবার অনন্য নজির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যা প্রেরণা যোগাচ্ছে সবার মাঝে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সীতাকু-ের ভাটিয়ারী জেলেপাড়া এলাকাটি সুদীর্ঘ সময় ধরেই শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে ছিলো। জেলেদের ছেলেরা একটু বড় হলেই বাপ-দাদার পেশা মাছ ধরায় আত্মনিয়োগ করত। আর মেয়েরা মায়ের সাথে গৃহস্থালি শুরু করে অল্প বয়সেই বাল্যবিবাহের স্বীকার হয়ে চলে যেতে শ্বশুর বাড়িতে। ফলে জেলে পল্লীর জীবনযাত্রা ছিলো সুশিক্ষিত অন্যদের সাথে আলাদা। তবে দেরিতে হলেও একসময় এখানে জেলেদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসে কোরিয়ান এনজিও এপিএবি। তারা ভাড়া বাড়িতে এখানে এপিএবি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন কাজ শুরু করেন। কিন্তু সেই বিদ্যালয়ের কোন নিজস্ব জমি বা ভবন ছিলো না। ফলে কোনক্রমে চলছিলো এর কার্যক্রম।
এপিএবি প্রাইমারী স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোরিয়ান নাগরিক ইক মো জং জানান, এখানে বিদ্যালয়ের জন্য নিজস্ব জমি ও ভবনের প্রয়োজন ছিলো। বিষয়টি নিয়ে আমি দেশে সাংকি কিম ও মায়াংগোক কুন দম্পতির সাথে আলোচনা করলে শিক্ষার আলো ছড়ানোর এ সুযোগ কাজে লাগাতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তারা। নিজের পারিবারিক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি দিয়ে সুদূর বাংলাদেশে কিছু দরিদ্র মানুষ সুশিক্ষিত হবে এটা জেনে আর আগ-পিছু না ভেবে বিদ্যালয়ের জমিক্রয় ও ভবন নির্মাণের যাবতীয় অর্থ ব্যায় করতে রাজি হয়ে যান তারা। তারপর আমাদের মাধ্যমে তারা সীতাকু-ের ভাটিয়ারী এইচ আকবর আলী সড়কে জেলেপাড়ায় ৬০ লাখ টাকায় জমি কিনে সেই জমিতে ৮৩ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করেন সুদৃশ্য তিনতলা বিদ্যালয় ভবন। অত্যাধুনিক এ বিদ্যালয়ের চেয়ার-টেবিল, ব্ল্যাক বোর্ড, লাইটিং, ফ্যান থেকে শুরু করে কনফারেন্স রুম, শিক্ষকদের কক্ষ, এমনকি শিক্ষকদের বসবাসের জন্যও কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে শিক্ষা বিস্তারে কোন অসুবিধা না হয় সে লক্ষে যা যা প্রয়োজন সবই করেছেন তারা। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম ভূইয়া। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার (সীতাকু- সার্কেল) মো. রেজাউর রহমান রেজা, কিম দম্পতি, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মিয়া। বক্তব্য রাখেন স্কুলের সুপার ভাইজার সীমান্ত সানু বিশ^াস, স্কুলের প্রধান শিক্ষক অঞ্জু রানী দাশ, সুজন ভট্টাচার্য প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে সাংকি কিম ও মায়াংগোক কুন কোরিয়ান ভাষাতে বলেন, আমরা নিজেদের সম্পদ এখানে দরিদ্র জেলেদের সন্তানদের সুশিক্ষিত করার কাজে লাগাতে পেরে খুবই আনন্দিত। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ইউএনও নাজমুল ইসলাম ভূইয়া ও বিশেষ অতিথি এএসপি রেজাউর রহমান রেজা তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের কিছু জেলের শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে সুদূর কোরিয়া থেকে এখানে এসে কাজ করায় কিম দম্পতিকে অনেক ধন্যবাদ জানান এবং তাদের এই অবদানের কথা মনে রেখে সবাইকে সুশিক্ষিত হবার লক্ষে পড়াশুনা করে যেতে পরামর্শ দেন তারা। অনুষ্ঠানের আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনেও অংশ নেন বিদেশীরা। তারা আপন জাতীয় সঙ্গীতের মতই সবার সাথে তাল মিলিয়ে গেয়ে উঠেন ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। যা মুগ্ধ করেছে উপস্থিত সবাইকে। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, স্কুলের সুপার ভাইজার সীমান্ত সানু বিশ^াস, স্কুলের প্রধান শিক্ষক অঞ্জু রানী দাশ, সুজন ভট্টাচার্যসহ আরো কয়েকজন শুভাকাঙ্খী ও কোরিয়ান নাগরিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।