পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ছোট যমুনা নদীর বুক চিরে এক সময় বজরা ও পালতোলা বড় বড় নৌকা চলত। কালের পরিক্রমায় সেই নদী এখন আপন স্বকীয়তা হারিয়ে ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। নদীর চারদিকে তাকালে শুধুই সবুজের হাতছানি। দিনের পর দিন পলি জমে গভীরতা কমে যাওয়ায় অতি দ্রুিতই নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। শুকনো নদীতে চাষ হচ্ছে গম, ভুট্টা, সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও মিষ্টি আলুসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। ক্ষীণধারায় বয়ে যাওয়া নদীর দু’ধারে এখন কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা সতেজ ফসল বাতাসে দোল খাচ্ছে।
সরেজমিন উপজেলার ছোট যমুনা নদীর পাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর যে সকল স্থান আগেই শুকিয়ে গেছে সে সকল স্থানে ফসলের চাষ হচ্ছে পুরোদমে। কয়েক বছর আগে নদীতে প্রচুর পরিমাণে বালি ছিল কিন্তু এখন পলি পরে কিছু কিছু স্থানে বালি না থাকায় নদীর মাঝে ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে। তবে ফসল বাঁচানো নিয়ে শংকায় আছেন তারা। নদীর আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৫-৬ বছর আগে নদীর পানি দিয়ে ফসল ফলানো হতো কিন্তু এখন নদীতে পানি না থাকায় পানির অভাবে এই সব জমিতে ধানের চাষ সম্ভব হচ্ছে না।
আত্রাই উপজেলার রাইপুর গ্রামের মোঃ আরশেদ মন্ডল ও আবেদ আলী জানান, আমরা নদীর পানি দিয়ে ধানের চাষ করতাম কিন্তু এখন সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ধান তোলার আগেই নদীর পানি একেবারে শুকিয়ে যাচ্ছে শেষের দিকে আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, এখন নদীর পানি না থাকায় স্যালো মেশিন দ্বারা ধান চাষ করতে হচ্ছে এতে খরচ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে কয়েক গুণ। নদীতে পানি না থাকায় ধানক্ষেতের পানিও খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় ও ক্ষেত্রে জমিতে বেশি পানি দিতে হয়। নদীর আশপাশের গ্রামগুলোতে গ্রীষ্মকালে পানি সংকট দেখা দেয়। নদীর পানি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাওয়ায় পানির গভীরতা অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে এতে করে সকল নলকূপে পানি উঠা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বিপ্রবোয়ালিয়া গ্রামের শিক্ষক মোঃ আলতাফ হোসেন জানান, ৮ বছর আগে বাড়িতে পানির পাম্প বসিয়েছি। প্রথম ২ বছর গ্রীম্মকালে পানি কম উঠত কিন্তু গত বছর চৈত্র মাস থেকেই পানি উঠা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এবার এখন থেকেই একটু করে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তিনি আরো জানান, নদী খনন করে গভীরতা বাড়ালে কিছুটা হলেও এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
উপজেলার রসুলপুর গ্রামের কয়েকজন জেলে বলেন, বছরের বেশিভাগ সময়ই নদীতে পানি না থাকায় আমরা বছরে ৬ মাস মাছ ধরী ৬ মাস মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। যারা কাজ করতে পারে না, তারা অনেকই পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছে। অনেক পরিবার খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন।
এদিকে আত্রাই নদীর তীরবর্তী এলাকার সচেতন মহলের দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে অতি দ্রুত নদী খনন করে এবং নদীর বাঁধ ও সুইচগেট খুলে দিয়ে নদীতে দীর্ঘমেয়াদী পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটবে। তাছাড়া এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম হয়তো জানতেই পারবে না এখানে একটি নদী ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।