Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম

\ শেষ কিস্তি \
টনসিল নিরাময়ে মিসওয়াক
টনসিলের (টনসিলস) রোগীদেরকে মিস্ওয়াক ব্যবহার করিয়ে যথেষ্ট ফল পাওয়া গেছে। এক ব্যক্তি গলায় মাংসগ্রন্থি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে খুব পেরেশান ছিল। তাকে তুত ফলের শরবত ও মিস্ওয়াক ব্যবহার করতে দেওয়া হল। অর্থাৎ তুতের শরবত পান করবে আর তাজা মিস্ওয়াক দ্বারা দাঁত মাজবে এবং মিস্ওয়াক টুকরা টুকরা করে পানিতে জাল দিয়ে গড় গড় করে কুলি করবে। এ পন্থা অবলম্বন করার পর রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করল।
গালের ঘা নিরাময়ে মিস্ওয়াক
গালের ঘা অনেক ক্ষেত্রে গরমের তীব্রতা এবং প্রখরতার কারণে হয়ে থাকে। তন্মধ্যে বিশেষ এক প্রকার ঘা রয়েছে। যার বিষাক্ততা দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তার জন্য তাজা মিস্ওয়াক দ্বারা দাঁত মাজতে হবে এবং তখনকার সৃষ্ট মুখের লালাগুলো মুখের মধ্যে মলতে হবে। এ পদ্ধতিতে অনেক রুগী আরোগ্য লাভ করেছে।
দাঁতের পাইওনিয়া ও মস্তিষ্কের বিপত্তি লাঘবে মিসওয়াক
অপরিচ্ছন্ন, দুর্গন্ধময় পুঁজযুক্ত দাঁত মস্তিষ্ক রোগের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আভ্যন্তরীণ রোগ যেমন উম্মাদনা, মস্তিষ্ক-বিকৃতিসহ আরও অনেক রোগব্যাধিও এর থেকে জন্ম নেয়। জনৈক ব্যক্তির স্ত্রীর মস্তিষ্কে বিপত্তি ঘটে। তারপর পরীক্ষা দ্বারা ধরা পড়ল যে, মস্তিষ্কের পর্দায় পুঁজ জমা হয়েছে এবং রুগীনি দীর্ঘদিন যাবৎ পাইওনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে, সেই পুজঁই এই ধ্বংসাত্মক রোগের সৃষ্টি করেছে।
কান ও দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে মিসওয়াক
যেসব রোগীর কানে ফোলা, পুঁজ, রক্তিমতা, ব্যথা ইত্যাদি রয়েছে এবং ডাক্তারগণ তাদের চিকিৎসা করে ব্যর্থ হয়ে পড়েছেন! তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেল রুগীর মাড়িতে পুঁজ জমা হয়ে পড়েছে। সুতরাং মাড়ির চিকিৎসা করা পর রুগী পূর্ণ সুস্থ হয়ে পড়ে।
মিসওয়াক দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
দন্তরোগের সাথে রয়েছে চক্ষুরোগের গভীর সম্পর্ক। দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে যখন খাবারের ছোট ছোট অংশ জামে থেকে দুর্গন্ধময় হয়ে পড়ে তখন চক্ষুরোগ, দৃষ্টিশক্তি দুর্বল এবং অন্ধত্বের শিকার হয়ে পড়ে। চক্ষুরোগের আরও যত কারণ খুঁজে পাওয়া যায় তন্মধ্যে দাঁতের যতেœর প্রতি অমনোযোগই এর প্রধান কারণ বলে বিবেচিত হয়েছে। আর দাঁত পরিষ্কার করা হলেও তা করা হয় ব্রাশ দ্বারা কি দাঁতের জন্য উপকারী? না ক্ষতিকর তার বর্ণনা পরবর্তীতে আসছে।
পাকস্থলীর রোগ নিরাময়ে মিসওয়াক
অভিজ্ঞ ডাক্তারগণের রিচার্স ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এ কথাই প্রমাণিত হয়েছে যে, পাকস্থলীর ৮০% রোগ দন্তরোগের কারণেই হয়ে থাকে, পাকস্থলীর রোগ বর্তমানে বিশ্বের এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাঁতের মাড়ির ক্ষত নিঃসৃত পুঁজ যখন খাদ্য-পানির সাথে মিলিত হয় অথবা লালার সংমিশ্রণে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে, তখন এই পুঁজ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা সমস্ত খাদ্যসমূহকে সূষিত ও দুর্গন্ধময় করে তোলে। পাকস্থলী ও যকৃতের রোগের চিকিৎসার পূর্বে দাঁতের চিকিৎসার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া উচিত। এভাবেই পাকস্থলী বা পেটের পীড়ার তড়িৎ ও স্থায়ী চিকিৎসা সম্ভব।
সর্দি ও কাশি নিরাময়ে মিস্ওয়াক
স্থায়ী সর্দি-কাশির রোগীর শ্লেষ্মা যদি জমাট বেঁধে থাকে সে ক্ষেত্রে মিস্ওয়াক ব্যবহার করলে ¯েøষ্মা ভিতর থেকে বের হয়ে মস্তিষ্ক হালকা হয়ে যায়। একজন প্যাথলজিস্ট বলেছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমাকে একথা স্পষ্ট করে দিয়েছে, যে মিস্ওয়াক হল সর্দি-কাশির সর্বোচ্চ প্রতিরোধক। এমন কি সর্বদা মিস্ওয়াক ব্যবহার করলে নাক ও গলার অপারেশন করার মত পরিস্থিতি খুব কমই সৃষ্টি হয়ে থাকে।
দাঁতের সুরক্ষায় মিস্ওয়াক
(অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার আলোকে) মুচকি হাসি, হৃদয়ের প্রফুল্লতা ও মুক্তা ঝরানো হাসির জন্য দাঁত এক অমূল্য সম্পদ। এ মুচকি হাসিই এক সময় ঘৃণা ও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং মানুষের মহব্বত-ভালোবাসা ও আশা-আকাক্সক্ষা বিনষ্ট করে দেয়। অর্থাৎ একজন সুদর্শন ও চরিত্রবান ব্যক্তি আভ্যন্তরীণ সুখ-শান্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে যখন মুচকি হাসি দেয়, তখন দাঁত সেখানে এক অতিরিক্ত মাত্রাযোগ করে তা আরো শক্তিশালী করে দেয়। পক্ষান্তরে সেই দাঁতই আবার মানুষের অলসতা ও মুর্খতার স্পষ্ট প্রমাণও বহন করে।
উল্লেখ্য যে, দেশীয় পদ্ধতিতে তেজষ্ক্রিয় উপকরণবিহীন প্রস্তুত দাঁতের মাজনেও কিছু উপকারিতা রয়েছে। তবে পীলু ও নিমের মিস্ওয়াকে যে গুণাগুণ রয়েছে, তা অন্য কোন কিছুতে পাওয়া খুবই দুষ্কর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ