পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : তাবলীগ বিষয়ে দেওবন্দের ঘোষণা নিয়ে তোলপাড় এখন বিশ্বব্যাপী
দিল্লীর সাআদ সাহেবের ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয় তাকে ভুলস্বীকার ও প্রকাশ্যে তওবা করতে হবে মর্মে দাবি উঠেছে সর্বত্র। গতকাল সংবাদপত্রে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তাবলীগ জামাত সুরক্ষা কমিটির সেক্রেটারি মুফতি আনিসুল হক বলেন, বিশ্বের সব দেশে তাবলীগ জামাতের দাযিত্বশীলেরা দিল্লির সাআদ সাহেবের বিভ্রান্তির বক্তব্য ও কর্মপন্থা নিয়ে বিরক্ত। দিল্লি নিজামউদ্দিন মারকাজের সিনিয়র সব মুরব্বী তার অন্যায় আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে দিল্লি ছেড়ে নিজ নিজ অঞ্চলে চলে গেছেন। গত সপ্তাহেও বিদেশী কিছু জামাত দিল্লিতে এলে তার নেতৃত্ব না মানায় অজুহাতে তাদের বিভিন্ন মসজিদে থেকে বের করে দেয়া হয়। কিছু আরব সদস্যকে মুখোশধারী লোকেরা অপহরণের চেষ্ঠা চালায়। মাওলানা সাআদ সাহেবকে বিশ্ব আমির না মানলে তাবলীগী লোকদের হত্যা করা যাবে বলে ফতোয়া দিয়েছেন তিনি। তার লোকেরা তাকে বিশ্বমুসলিমের আমির আখ্যায়িত করে তা অমান্যকারীদের হত্যা করার বৈধতা প্রচার করে পুস্তক রচনার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অশান্তির বীজ বপন করেছেন। এদিকে দারুল উলূম দেওবন্দের সব মুরুব্বী মাওলানা সাআদ সাহেবের চিন্তা, কথা ও কর্মপন্থায় অসংখ্য ভুল ত্রæটি পাওয়ার প্রেক্ষিতে তাকে তাবলীগ বিশ্ব আমির দাবি করা থেকে বিরত হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন। তার কিছু মারাত্মক চিন্তা ও উক্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে ক্ষমাপ্রার্থনা ও প্রকাশ্যে তওবা করতে বলেছেন। মাওলানা সাআদ কিছু বিষয়ে ভুল স্বীকার করলেও তার মৌলিক ভুল ও গুমরাহী থেকে তওবা করছেন না বলে দেওবন্দ সূত্রে জানা গেছে।
দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগের ওয়েবসাইটে একটি সম্মিলিত বিবৃতি/ফতোয়া প্রকাশ করা হয়েছে সাথে সাআদ সাহেবের পক্ষ থেকে গত ৯ জানুয়ারি রুজুনামা আকারে পাঠানো একটি চিঠিও প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠিতে সাআদ সাহেব দেওবন্দের ফতোয়ায় উত্থাপিত ৬টি বিষয়ের ৪টি উল্লেখ করেছেন। ৩টি থেকে নিঃশর্ত রুজু করেছেন। আর ১টির (হজরত মুসা আ. এর শানের খেলাফ বয়ানের ব্যাপারে ক্ষেত্রে নিজস্ব দলিল পেশ করেছেন। যা দেওবন্দের ভুল বলে সাব্যস্ত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এবিষয়ে আবারও রুজু করে ঘোষণা দিতে বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। দেওবন্দের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই সম্মিলিত ফতোয়ায় বলা হয়েছে, “মাওলানা সাআদ সাহেবের কিছু বয়ানের আলোকে তার নিজস্ব ধ্যান ধারণা ও চিন্তা-চেতনার ব্যাপারে দারুলু উলূম দেওবন্দ তাদের সর্বসম্মত অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলো। সেখানে বলা হয়েছিলো, তাহকিকের পর এটা প্রমাণিত হয়েছে যে সাআদ সাহেবের কথায় মারাত্মক ভুল পাওয়া গিয়েছে অপর দিকে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেখানে তিনি জমহুর উম্মত ও এজমায়ে সালফের বাইরে চলে গিয়েছেন।
যেহেতু সেই সম্মিলিত ফতোয়াটি সর্বত্র ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে তাই সেগুলো পুনরায় উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
ইতোপূর্বে মাওলানা সাআদের পক্ষ থেকে একটি রুজুনামার ভুল স্বীকার নামে একটি চিঠি হস্তগত হয়েছিলো কিন্ত তাতে দেওবন্দ আস্বস্ত হতে পারেনি।
কিন্তু যেহেতু মাওলানা সাহেব সে সকল ভুল থেকে রুজু করেছেন এবং আগামীতে তা করবেন না বলে আস্বস্ত করছেন তাই আমরা আশা করবো তিনি আগামীতে এমন সব বিষয় থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকবেন যেগুলোর ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য আলেমগণ প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে না।
“এরই সাথে মাওলানা সাআদ সাহেবেকে বিশেষত এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, হজরত মুসা আ. এর ব্যাপারে তার বয়ানটি মারজুহ তাফসির হিসেবেও মানা যাচ্ছে না বরং সেটা সম্পূর্ণই ভুল ছিলো। শুধু তাই নয় সেটা জলিলুল কদর নবী হজরত মুসা আ. এর মুকাদ্দাস শানেরও খেলাফ।”
সুতরাং এ ব্যাপারে সাআদ সাহেবকে অবশ্যই কোনো রকম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ব্যতীত সেই বয়ান পরিহার করতে হবে। চাই সেটা মুসা নবীর উজালাত (তুর পাহাড়ে দ্রæত আগমন) কে বনি ইসলাইলের গোমরাহ ্হওয়ার বিষয় হোক কিংবা মুসা নবীর দাওয়াতের কাজ ছেড়ে ৪০ দিন ইবাদতে মশুগুল থাকার অভিযোগ হোক (সর্বসুরতেই আপনার বয়ান পরিহার করতে হবে)। এবং এক্ষেত্রে আয়াতের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা জানতে মাওলানা হাবিবুর রহমান আজমি কর্তৃক সঙ্কলিত ওয়া মা আ’জালা আন কওমিকা ইয়া মুসা কি রাজেহ ওয়া মু’তাবার তাফসির অত্যন্ত মনযোগের সাথে অধ্যয়ন করে নেবে না এটি আপনার কাছে পাঠানো হচ্ছে এবং দেওবন্দের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।
এরপর ওই সম্মিলিত সিদ্ধান্তে সাআদ সাহেবকে হজরত মুসা আ. এর শানের খেলাফ বয়ানের ভুল ধরিয়ে বিশুদ্ধ তাফসিরের আলোকে আরো কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং বল াহয়েছে আপনি বলেছেন, আমি যে বয়ান করেছি তা মারজুহ তাফসির বাস্তবতা হলো আপনার বয়ানটি মারজুহ তাফসিরের গÐির ভেতরেও পড়ে না। বরং এটি আগা গোড়াই ভুল ও বাতিল।
“আপনি স্পষ্ট বলেছেন, ‘হজরত মুসা নবী মাত্র ৪০ দিন দাওয়াতের কাজ করেন নি।’
মাওলানা সাহেব তো এখানে স্পষ্টই বলেছেন, যে, হজরত মুসা আ. এর ওপর যে দাওযাত ও তাবলিগের দায়িত্ব অর্পিত ছিলো তা তিনি আদায় করেন নি। অথচ হযরত মুসা আ. স্বীয় ভাই হজরত হারুনকে নিজের নায়েব বা স্থালভিষিক্ত করে গিয়েছিলেন যা নবুওত কুরআনের নস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত এবং নবুয়তি কাজের হজরত মুসা আ. এর অংশীদার ছিলেন। আর কুরআন বলছেন হজরত ্হারুন আ. দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ যথাযথভাবে আঞ্জাম ও দিয়েছেন তো কী করে মাওলানা সাহেব বললেন যে, মুসা আ. দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। এটা শানে রেসালাতের স্পষ্ট অপমান নয় কি? সুতরাং রুজুর আগে মাওলান যে ভুল করেছেন তা স্পষ্ট স্বীকার করতে হবে। অতএব, হজরত মুসা আ. এর ব্যাপারে মাওলানা সাআদ সাহেবের নিজস্ব বয়ানগুলো থেকে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা ছাড়াই স্পষ্ট রুজু করতে হবে এবং সেটার ঘোষণাও করতে হবে।
সম্মিলিত সিদ্ধান্ত /ফতোয়ায় যারা স্বাক্ষর করেছেন
১। মুফতি আবুল কাসেম নোমানি, মুহতামিম, দারুল উলুম দেওবন্দা। ২। মুফতি হাবিুর রহমান খায়রাবাদি, মুফতি আজম, দেওবন্দ, ৩। মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী শায়খুল হাদিস, ৪। আল্লামা কমরুদ্দিন, ৫। মুফতি হাবিুর রহমান আজমি, ৬। আল্লামা নেয়ামাতুল্লাহ আজমি, ৭। মুফতি আবদুল খালেক সান্তলি, ৮। মুফতি আবদুল খালেক মাদরাজি, ৯। মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি, ১০। মুফতি নোমান সিতাপুরী ১১। মুফতি যাইনুল ইসলাম, ১২। আল্লামা মুফতি ইউসুফ তাওলাবী, ১৩। মুফতি আসাদুল্লাহ ১৪। মুফতি সালমান মানসুরপুরী, ১৫। মুফতি মুসআব, ১৬। মুফতি ওকার আলী ১৭। মুফতি ফখরুল ইসলাম, ১৮। মুফতি মাহমুদ হাসান বুলন্দশহর।
বিবৃতিতে মুফতি আনিসুল হক আরো বলেন, মাওলানা সাআদ সাহেবকে তার মারাত্মক ভুল ত্রæটিপূর্ণ ভাবধারা ও বক্তব্যের ফলে তাবলীগের আমির মানা যাবে কিনা, এমন প্রশ্ন তুলে ঢাকার কাকরাইল কর্তৃপক্ষ বিশ্ববরেণ্য আলেমদের কাছে একটি ফতোয়া জিজ্ঞাসা করছে বলে জানা গেছে। অবিলম্বে এ ফতওয়া জবাব নিয়ে কাকরাইল ও বাংলাদেশের তাবলীগ জামাত সঠিক কর্মপন্থায় চলবে বলে আমরা আশা করি। বিতর্কিত ও পথহারা নেতৃত্ব মেনে নিয়ে বাংলাদেশ তাবলীগ জামাত গুমরাহ হয়ে যাক তা আমরা চাইনা। সংশ্লিষ্টদের নিকট আমাদের বিনীত নিবেদন এই যে, নিজেদের হঠকারিতা মূর্খতা ও হীনস্বার্থে তাবলীগ জামাতকে বিতর্কিত করবেন না। তাবলীগ জামাতের এই নেতাকে গিরে বিশ্বব্যাপী যে অস্বস্তি চলছে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনার জন্য চলতি মাসেই রাজধানীতে সারাদেশের সর্বস্তরের আলেম ওলামা ও তাবলীগের পুরনো সাথীদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।