Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তাবলীগ জামাত আলেমদের নেতৃত্বে চলবে

আল্লামা আহমদ শফীর উপস্থিতিতে ওযাহাতি জোড়ের সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

তাবলিগ জামাতের চলমান সংকট থেকে উত্তরণ এবং মাওলানা সাদের কতিপয় ভ্রান্ত উক্তি স্পষ্ট করার জন্য গতকাল হাটাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমাদ শফি দা.বা. এবং লাখো উলামায়ে কেরাম ও তাবলীগ সাথীদের উপস্থিতিতে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোড সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত ওযাহাতি জোড়ে গৃহীত সিদ্ধান্তে এ কথা বলা হয়।
জামিয়া রাহমানিয়ার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হকের পরিচালনায় ওযাহাতি জোড়ে প্রধান অতিথি ছিলেন হাটহাজারি মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফি দা. বা.। উদ্বোধন করেন মালিবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল শাইখুল হাদীস আল্লামা আশরাফ আলী দা.বা.। সিদ্ধান্তের পূর্বে ওযাহাতি জোড়ে আরো বক্তব্য রাখেন আল্লামা আনওয়ার শাহ (কিশোরগঞ্জ), আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি ওয়াক্কাস, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মুফতি রুহুল আমিন (গওহরডাঙ্গা), মাওলানা সাজিদুর রহমান (বি-বাড়িয়া), মাওলানা তৈয়ব (জিরি মাদরাসা), মুফতি আব্দুল মালেক, মুফতি মনসুরুল হক, মাওলানা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী (ময়মনসিংহ), মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপর), মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা আব্দুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা রফিকুর রহমান (খুলনা), মাওলানা ঈসমাইল নূরপূরী (নরসিংদী), মাওলানা আবু তাহের নদভী (পটিয়া), মাওলানা আনোয়ারুল হক (যাত্রাবাড়ি মাদরাসা)সহ অর্ধশতাধিক উলামায়ে কেরাম ও তাবলীগের সাথী। জোড় উপলক্ষ্যে শুক্রবার রাত থেকে সারা দেশ থেকে উলামায়ে কেরাম ও তাবলীগের সাথীরা মোহাম্মদপুর ও আশপাশ এলাকায় আসতে শুরু করেন। গতকাল শনিবার সকাল আট টার পূর্বেই ঈদগাহ ময়দান পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ঈদগাহ মাঠের আশেপাশে বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয় ও মাইকে বয়ান শুনেন।
বক্তাগণ বলেন, শতাব্দিব্যাপী দীর্ঘ সময়ে তাবলীগী কাজে কখনোই কোনো বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু‘ মাওলানা সাদ সাহেবের ওপর জিম্মাদারি আসলে তিনি উম্মতের বৃহত্তর স্বার্থের বিপরীতে ক্ষুদ্র চিন্তা-ভাবনার দ্বারা তাড়িত হয়ে এমন কিছু কথা ও কাজ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিলেন যার কারণে তাবলিগের মূল দৃষ্টিভঙ্গিই আজ ধূলিস্যাত হতে বসেছে। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সাথীদের চিন্তার মাঝে মারাত্মক বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মাওলানা সাদের বিভ্রান্তি কর বক্তব্য স্পষ্ট করণে এ জোড়ের প্রয়োজন ছিল। কারণ মাওলানা সাদ তার বিভিন্ন বয়ানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী বহু বিষয় এনেছেন। যেগুলোর মধ্যে দ্বীনের অপব্যাখ্যা, মনগড়া তাফসির, ভুল মাসআলা বর্ণনা, নবীগণের শানে বেআদবিপূর্ণ উক্তি, দ্বীনের অন্যান্য শাখাসমূহকে হেয়প্রতিপন্ন করা বা বাতিল সাব্যস্ত করার মতো গুরুতর বিষয়াদি অন্তভর্‚ক্ত রয়েছে।
ওজাহাতি জোড়ে ৬ টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, ১. জমহুর উলামায়ে কেরাম একমত হয়েছেন, তিনটি মৌলিক কারণে (ক) কোরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা, (খ) তাবলিগের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তাবলিগ ব্যতীত দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয়প্রতিপন্ন করা, (গ) পূর্ববর্তী তিন হজরতজি (হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ রহ. ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ.) এর উসুল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ। ২. মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ. এর রেখে যাওয়া শুরায়ী নেযামকে উপক্ষো করে নিজেই নিজেকে আমীর দাবি করেছেন; যা শরিয়ত বিরোধী। তাই তার কোনোরূপ সিদ্ধান্ত-ফায়সালা বা নির্দেশ কাকরাইল তথা বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করা যাবে না। ৩. দারুল উলুম দেওবন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনো ফেরকা গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কোনো জামাত বা ব্যক্তিকে নেযামুদ্দিনে পাঠানো বা যাওয়া মুনাসিব হবে না। অনুরূপভাবে নেযামুদ্দিন থেকে আগত কোনো জামাতকে বাংলাদেশের কোনো জেলায়/থানায়/ইউনিয়নে কাজ করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। ৪. হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ রহ. ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ. এর বাতানো পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ সারা দুনিয়াতে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের তাবলিগের কাজ পূর্ববর্তী এই তিন হজরতের পদ্ধতিতে এবং উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কাকরাইল, টঙ্গী ময়দান এবং জেলা মারকাযসহ সকল মারকায এই নীতিতেই পরিচালিত হবে। ৫. কাকরাইল মসজিদের যে সমস্ত শুরা সদস্য আমরণ মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের ভ্রান্ত আকিদা অনুসরণের হলফনামা করেছেন যা শরিয়ত পরিপন্থি তারা শুরার সদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। অতএব, তাদেরকে তাবলিগের কাজে শুরা ও ফায়সাল না রাখার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
৬. ২০১৮-এর টঙ্গী ইজতেমায় সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে আগামী ২০১৯-এর টঙ্গী ইজতেমার জন্য নির্ধারিত তারিখ প্রথম পর্ব ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্ব ২৫, ২৬, ২৭ জানুয়ারি এর সাথে আজকের মজমা ঐকমত্য পোষণ করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তাবলীগ

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ