চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম
\ এক \
মিসওয়াক সম্পর্কে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি তার পান্ডিত্যসুলভ উক্তি করেছেন এভাবে যে, যেদিন থেকে আমরা মিসওয়াকের ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছি, সেদিন থেকেই ডেন্টাল সার্জনের সূত্রপাত হয়েছে।
নবী করীম (সা.) মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। নিচে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো।
১. নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, মিসওয়াকসহ অজুতে যে নামাজ পড়া হয়, তা মিসওয়াকবিহীন নামাজ হতে সত্তর গুণ বেশি। ২. তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, আমি যদি তোমাদের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে মিসওয়াক করাকে তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করে দিতাম। ৩. এক হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) রাতে ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করতেন। রাতে শয়নকালে মিসওয়াক করা ছিল তাঁর নিত্যদিনের মহান অভ্যাস।
এবার মিসওয়াক করার দুনিয়াবি কতিপয় উপকারিতা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। বিশেষত আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান ইসলামী নিদর্শন মিসওয়াককে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করছে, সে সম্পর্কে প্রামাণ্য কিছু বক্তব্য তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
‘ইসলাম আওর জাদীদ সায়েন্স’ গ্রন্থকার ড. মোহাম্মদ তারেক মাহমুদ এক আমেরিকান ইঞ্জিনিয়রের উদৃতিতে লিখেছেন যে, সেই ইঞ্জিনিয়র বলেছেন, আমেরিকার একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার একদা আমাকে বললেন, আপনি শয়নকগালেও মিসওয়াক করবেন। আমি বললামÑ এর কারণ কী? উত্তরে তিনি বললেন, বর্তমান যুগের গবেষণা বলে, মানুষ যা ভক্ষণ করে তার ময়লা কুলির দ্বারা পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার হয় না। তিনি আরো বলেন, সাধারণত মানুষের দাঁত নষ্ট হয় শয়নকালে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরই বা কারণ কী? তিনি বললেন, আপনি প্রত্যক্ষ করে থাকবেন, দিনের বেলায় মানুষ কখনো কথা বলছে, কখনো আহার করছে আবার কখনো পান করছে। তাই দিনের বেলায় মুখের গতিশীলতার কারণে রক্তরস/রক্তমজ্জা রক্তলসিকা তার কাজ করার সুযোগ পায় না। কিন্তু রাতের বেলা যখন মুখ বন্ধ হয়ে যায় তখন তার সুযোগ এসে যায় কাজ করার। এ কারণেই দাঁত রাতের বেলায় অধিক খারাপ হয়। তিনি আরও বললেন, সকালে ‘টুথ পেস্ট’ ব্যবহার করেন আর না করেন, শোয়ার সময় অবশ্যই মিসওয়াক করে ঘুমাবেন।
সুপ্রিয় পাঠক! দেখুন, নবী করীম (সা.) আজ হতে দেড় হাজার বছর আগে যেই মিসওয়াক করার বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়েছেন, দেড় হাজার বছর পরের চিকিৎসা বিজ্ঞান সেটি অকপটে স্বীকার করে যাচ্ছে। কেননা এটাই তো আমাদের রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত।
এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা শুধু অজু অবস্থায় শয়ন করতেন। আর যতবারই অজু করতেন ততবারই তিনি মিসওয়াক করতেন। পারতপক্ষে মিসওয়াক করা ব্যতীত কখনো তিনি অজু করতেন না।
কেউ যদি খাবার শেষে অজু করে এবং মিসওয়াক করে, তাহলে সে দন্ত রোগ থেকে রেহাই পাবে।
নামাজের পূর্বে মিসওয়াকের দুনিয়াবি ফায়েদা
প্রকৃতপক্ষে নামাজ যেহেতু মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের গুণগান করা, তাই নামাজের সময় মুখ পরিষ্কার থাকা অত্যাবশ্যক। যদি আহারের পর মিস্ওয়াক বিহীন অজু করে নামাজ আদায় করা হয়, তাহলে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলো জিহŸায় লেগে নামাজের একাগ্রতায় বিঘœ সৃষ্টি করে। তাছাড়া নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় নামাজি ব্যক্তির মুখ থেকে যদি দুর্গন্ধ বের হয়, তাহলে তার দ্বারা অন্য নামাজিদেরও কষ্ট হয়। তাই মিস্ওয়াক দ্বারা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে নেয়া উচিৎ। আর মিস্ওয়াক করার সময় মুখ এমনভাবে (রায়েস) হিল্লোলিত হয়, যদ্বারা কুরাআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদিতে পাওয়া যায় অনাবিল শান্তি।
নামাজ হলো মহান সৃষ্টিকর্তার সম্মুখে হাজিরা দেয়া আর সেই বিশেষ সময় যদি মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়, তা হলে লজ্জারও কারণ বটে।
সুইজারল্যান্ডের চিকিৎসকের ঘটনা
সুইজারল্যান্ডের জনৈক চিকিৎসক তার নিজের জীবনের একটি ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, একদা আমার দাঁত ও দাঁতের মাড়িতে এমন কঠিন রোগের সৃষ্টি হয়েছিল যার চিকিৎসা তদান্তীন ডাক্তাদের নিকট ছিল দুরূহ ব্যাপার। অগত্যা আমি এই মিস্ওয়াক ব্যবহার শুরু করে দিলাম। কিছু দিন পর গেলাম সেই ডাক্তারকে দাঁত দেখাতে। দাঁত দেখে তো ডাক্তার হতবাক, জিজ্ঞেস করল, আপনি এমন কী ঔষধ ব্যবহার করেছেন, যার ফলে আপনি এত দ্রæত আরোগ্য লাভ করতে পারলেন? বললাম, আমি তো শুধু আপনার দেওয়া ঔষধই ব্যবহার করেছি। ডাক্তার বললেন, কখনো না। আমার ঔষধে এত দ্রæত আরোগ্য লাভ সম্ভব নয়; বরং আপনি চিন্তা করে বলুন। আমি গভীরভাবে চিন্তা করতেই স্মরণ হলো আমি তো মুসলমান, আমি না মিস্ওয়াক ব্যবহার করছি। এরপর যখন ডাক্তারকে মিস্ওয়াক দেখালাম। ডাক্তার খুবই আশ্বস্ত হলেন এবং নতুনভাবে রিসার্চ শুরু করে দিলেন।
মিসওয়াক সম্পর্কে গুরু নানকের বক্তব্য
হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রবক্তা গুরু নানক সম্পর্কে কথিত আছে যে, তিনি সর্বদা হাতে মিসওয়াক রাখতেন এবং মিসওয়াক করতেন। তিনি বলতেন, হয়তো এই লাকড়ি গ্রহণ কর, নতুবা রোগকে বরণ কর। দেখুন, কত সূ² কথা! তিনি বলেছেন, মিস্ওয়াক দ্বারা রোগব্যাধি দূরীভ‚ত হয়। নতুবা অসুস্থ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
হেকিম এসএম ইকবাল ‘জাহান’ নামক পত্রিকায় লিখেন, আমার নিকট একজন রোগী এলো, যার হৃৎপিÐের ঝিল্লিতে জমা হয়েছিল অনেক পুঁজ এর জন্য লোকটি চিকিৎসাও নিচ্ছিল কিন্তু কিছুতেই সে ফল পেল না, অবশেষে অপারেশনের মাধ্যমে পুঁজ বের করা হল, কিছুদিন পর আবার পুঁজ জমা হয়ে গেল। অবশেষে সবদিক থেকে নিরাশ হয়ে সে আমার নিকট চলে এলো। আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পেলাম তার দাঁতের মাড়ির পুঁজই তার হৃৎপিÐে গিয়ে জমা হচ্ছে। আমার এ রোগ নিরূপণ সকল ডাক্তারগণও একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন।
এবার তার চিকিৎসার পালা। প্রথমে তার দাঁত ও মাড়ির চিকিৎসা করা হলো। সেবনের জন্য কিছু ওষুধ আর ব্যবহারের জন্য দেওয়া হলো পীলু বৃক্ষের মিস্ওয়াক। ফলে অতি অল্পদিনের মধ্যেই তার রোগ নিরাময় হলো।
রুচি বৃদ্ধিতে মিসওয়াক
জনৈক ব্যক্তি তার মুখের আস্বাদন শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। অনেক চিকিৎসার পরও কোন ফল হলো না। কেউ তাকে পরামর্শ দিল জিহবায় জোঁক লাগিয়ে দিতে, সে জিহবাতে জোঁক লাগিয়ে ক্ষত করল, কিন্তু তাতেও কোন ফল হলো না। অবশেষে আমি তাকে পরামর্শ দিলাম, আপনি প্রত্যহ পীলু গাছের তাজা মিস্ওয়াক ব্যবহার করবেন। একমাস পর আমাকে আবার জানাবেন। একদিন রোগী বলল, এই এক টাকার মিস্ওয়াক (পীলু) হাজার হাজার টাকার ওষুধের চেয়ে অধিক ফলপ্রদ। এভাবেই ফিরে পেল সে তার মুখের স্বাদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।