Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টির অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সংবেদনশীল তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে বেশকিছু হাইপ্রোফাইল বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার পর ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। ডেমোক্র্যাট দলীয় এবং অপর বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নতুন করে গোপন তথ্য ফাঁস ও সাইবার হামলার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তার প্রশাসনের নিরাপত্তা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় আবারও তার ওই নিরাপত্তা পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যখন ফ্লোরিডায় ব্যক্তিগত মার-আ-লাগো ক্লাবে তিনি অতিথিদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় ফোনে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কথা জানানো হয়। মার-আ-লাগো ক্লাবে থাকা ট্রাম্পের এক অতিথি ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে এক সেনা কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ওই সেনা কর্মকর্তার হাতে থাকা একটি কালো ব্যাগে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের গোপন কোড সংরক্ষিত। পরে ওই পোস্টটি ডিলিট করে দেওয়া হয়। কয়েকদিন আগে ট্রাম্পের টুইট অ্যাকাউন্ট যে মোবাইল ফোন থেকে চালানো হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। ধারণা করা হয়, তিনি টুইটার চালাতে একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ফোনে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি পড়েন। অথচ মোবাইল ফোন হ্যাক করাটা এখন অসাধ্য কিছু নয়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের সঙ্গে দেশের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে ফেলছেন। এর আগে গত সপ্তাহে ট্রাম্প আন্তঃসরকার গোপন তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহৃত একটি ব্যাগ অসুরক্ষিতভাবে ফেলে রেখেছিলেন। প্রেসিডেন্টের দফতরে তখন সাংবাদিকরা তার ছবি তুলছিলেন। ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, জাতীয় নিরাপত্তাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। সিনেটের গোয়েন্দা কর্মকাÐ বিষয়ক কমিটির সদস্য জ্যেষ্ঠ সিনেটর রন ওয়াইডেন বলেন, এটা মারাত্মক দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। ট্রাম্প নিজের ক্লাবে যে কাউকে অর্থের বিনিময়ে ছবি তুলতে দিচ্ছেন। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জোনাথন ওয়াকরো বলেন, ট্রাম্প তার ডেস্কের মধ্যে থাকা সবকিছুর ছবি তুলতে দিচ্ছেন। আর এটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাকে মার্কিন গোপন তথ্য ফাঁসে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। মোবাইল নিরাপত্তা কোম্পানি লকআউট-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক মারে বলেন, একবার ভাবুন তো, ট্রাম্প বা তার সহযোগীরা মার-আ-লাগোতে গোপন বৈঠক করছেন, আর তাদের কারো মোবাইল ফোন ও তার মাইক্রোফোনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কোনও সাইবার হামলাকারীর হাতে! নিরাপত্তার প্রশ্নটি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু নয়। প্রায় সব মার্কিন প্রশাসনের ক্ষেত্রেই নিরাপত্তার বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ও তার সহকর্মীরা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন, তা এক বড় প্রশ্ন হিসেবে থেকেছে। তবে ট্রাম্পের বিতর্কিত কর্মকাÐের জন্যই তার ক্ষেত্রে বিষয়টি জোরেশোরে সামনে আসছে। এ প্রসঙ্গে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের সাবেক সহকারি পরিচালক বিল পিকল বলেন, সকল প্রেসিডেন্তের ক্ষেত্রেই এমন ভুল-ত্রুটি ঘটেছে। তবে আমরা হয়ত তাকে বেশি লক্ষ্য করছি। কারণ তিনি অন্যদের থেকে ভিন্ন।
অপর খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাকালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ পদস্থ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার যোগাযোগ ছিল রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে। রাশিয়ার এসব কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পরিচিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক গোয়েন্দা সূত্র এবং আইন প্রয়োগকারী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এমন তথ্য দিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমকে। বলা হয়েছে, রাশিয়ার ওই সব কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের যোগাযোগ ছিল তার মধ্যে অন্যতম জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ ত্যাগ করা মাইকেল ফ্লিন, তৎকালীন নির্বাচনী প্রচারণা বিষয়ক ম্যানেজার পল মানাফোর্ট, সাবেক পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কার্টার পেজ প্রমুখ।
সিএনএন অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাম্পের সহযোগী এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগাযোগের বিষয়টি জানানো হয়েছিল বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ওই সময়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পকে। যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ান কর্মকর্তাদের ওপর নজর রাখে মার্কিন গোয়েন্দারা। তারা রাশিয়ান কর্মকর্তা ও ট্রাম্পের ওইসব উপদেষ্টার ফোনালাপে আড়ি পেতে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দলের প্রচারণা টিমের সদস্য ও বিদেশী সরকারের কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত এমন যোগাযোগ ছিল অস্বাভাবিক। এটা এতটা ঘন ঘন হয়েছে এবং এতে ট্রাম্পের উপদেষ্টারা জড়িত থাকায় বিষয়টি তদন্ত করা উচিত। ওই যোগাযোগ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে ও পরে। তাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ সুবিধা পাওয়ার কথা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাশিয়ানরা অধিক সুবিধা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছে। তবে এ নিয়ে যত কথাই বলা হোক ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা টিমের ম্যানেজার মানাফোর্ট অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার কাছে নিউ ইয়র্ক টাইমস মন্তব্য চাইলে তিনি এমন যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি জানি না এটা দিয়ে কি বোঝানো হচ্ছে। আমি কখনো রাশিয়ার কোনো গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি নি। রাশিয়া সরকার, পুতিন প্রশাসন অথবা এখন যেসব বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে এর কোনো কিছুর সঙ্গেই আমি জড়িত নই। উল্লেখ্য, এসব তথ্য যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা এর আগেই অভিযোগ করেছে নির্বাচনকালে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও এর বিভিন্ন কর্মকর্তার ওপর সাইবার হামলা করেছে রাশিয়া। তার মধ্যে নতুন এসব তথ্য বেরিয়ে আসায় উদ্বেগ জোরালো হচ্ছে। এখন এফবিআই এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যাচাই করে দেখছেন ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের সঙ্গে রাশিয়ার কর্মকর্তাদের ওই যোগাযোগের উদ্দেশ্য কি ছিল। সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, পলিটিকো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাম্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ