Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ট্রাম্পের মুসলিম নিষিদ্ধকরণ বিপজ্জনক

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক: প্রথমত, সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের পুনঃবসতিস্থাপন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতকরণ এবং মুসলিম প্রধান সাতটি দেশের নাগরিকদের সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নিষ্ঠুরতার বিষয়টি বিবেচনা করা যাক। এই নিষেধাজ্ঞার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওইসব পরিবার ক্ষত-বিক্ষত ও দুর্ভোগে পতিত হয়, যারা নিজেদের দেশে হত্যাযজ্ঞ এবং স্বৈরতন্ত্র থেকে রক্ষা পেতে অনন্য আশাবাদী হয়ে এই দেশে পৌঁছেছে বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ ছিল। এই গোঁড়ামিপূর্ণ, কাপুরুষোচিত, আত্ম-পরাজয়মূলক নীতির প্রথম শিকার হয়েছিল হাস্যকর ‘প্রকেটটিং দি নেশন ফ্রম ফরেন টেরোরিস্ট এনট্রি ইনটু দি ইউনাইটেড স্টেটস’ শিরোনামের নির্বাহী আদেশটি কার্যকর করার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, আমেরিকান বিমানবন্দরগুলোতে আটকা পড়া লোকজন। ওই ব্রুকলিনের ফেডারেল বিচারপতি জরুরিভিত্তিতে স্থগিতাদেশ দিয়ে রায় দেন, বিমানবন্দরগুলোতে আটকা পড়া লোকজনকে তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না। তবে নির্বাহী আদেশটির অন্য সব বিষয়ের ভবিষ্যতই অমীমাংসিত থেকে গেছে। এটাকে অবশ্যই ওইসব উদ্বাস্তুর জন্য ভাগ্যের নির্মম খেলা হিসেবে অনুভব করতে হবে, যাদেরকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির দেয়ালে বছরের পর বছর ধরে কঠিন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার শিকার হতে হবে। এই নিষেধাজ্ঞা ভিসা পেয়ে আমেরিকায় জীবনযাপন করতে আসা লাখ লাখ অভিবাসীর জীবন ও সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার বাধাগ্রস্ত করবে। নিষেধাজ্ঞাটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন নগরীতে গণবিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে হোয়াইট হাউজ নীতিটির প্রয়োগসীমা সামান্য কমিয়ে এনে বৈধ স্থায়ী অধিবাসীদের রেহাই দেয়।
দম বন্ধ করা এবং কর্কশ ভাষায় ঘোষণা করা নির্দেশটি হলুকাস্ট রিমেমব্রান্স ডে-এ ইস্যু করাটা আমেরিকার নিজের মূল্যবোধের প্রতি গভীরতম শিক্ষার প্রতি প্রেসিডেন্টের নির্মমতা ও উদাসীনতাই প্রতিফলিত করেছে। আদেশটির পেছনে কোনো ধরনের যৌক্তিকতা নেই। এতে যুক্তি হিসেবে ১১ সেপ্টেম্বর হামলার কথা বলা হয়েছে, অথচ ছিনতাইকারীদের সবাই যেসব দেশের নাগরিক সেই সব দেশ এবং সেই সাথে, কাকতালীয়ভাবে সম্ভবত নয়, যেসব দেশের সাথে ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসা আছে- সে সব দেশকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নথিটিতে কোনো ধর্মের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি। কিন্তু তবুও মুসলমানদের বাদ দিয়ে অন্যান্য ধর্মের লোকজনকে গ্রহণ করার সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ করে দেওয়াটা সুস্পষ্টভাবে অসাংবিধানিক কাজ। নির্দেশটির ভাষা যে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে তা হলো- মি. ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময় আবেগ সৃষ্টিকারী ‘বিদেশী-ভীতি’ ও ‘ইসলাম-ভীতি’ তার প্রেসিডেন্ট মেয়াদেও বহাল থাকবে। বিষয়টা ছিল অ-আমেরিকান, কিন্তু এখন সেটাই আমেরিকান নীতি। ‘যুক্তরাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে, এই দেশে যারা প্রবেশ করে, তারা এর প্রতি এবং এর প্রতিষ্ঠার নীতিমালার প্রতি বৈরী মনোভাব ধারণ করতে পারবে না,’ বলে যে নির্দেশটি জারি করা হয়েছে, তা দিয়ে এই বিভ্রান্তিপূর্ণ ধারণা প্রচার করা হয়েছে যে, সব মুসলিমকেই হুমকি বিবেচনা করা হবে। (এতে নারীদের প্রতি সহিংস কর্মকা- পরিচালনাকারী লোকজন এবং বর্ণ, জেন্ডার ও যৌনতা-সংক্রান্ত আইনভঙ্গের কারণে শাস্তি পাওয়া লোকজনকে রেহাই দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। যৌন হয়রানির কথা গর্বভরে প্রচারকারী এক প্রেসিডেন্ট এবং সমকামীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যকারী নীতি সমর্থনকারী একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নিজেদের ওই মানদ-ের জন্য ভীত হতে পারেন।)
এই নতুন নীতির ভ্রষ্ঠতার কারণেই আদালত, কংগ্রেস এবং মি. ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীল সদস্যদের উচিত অবিলম্বে এটি বাতিল করার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা। তবে তা করার জন্য এর চেয়েও আরো যে বড় কারন রয়েছে : এটা চরম বিপজ্জনক। চরমপন্থী গ্রুপগুলো এই ধারণাটি জোর গলায় নির্দেশটি প্রচার করে বেড়াবে, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আজ অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্যভাবে, যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নয়, ইসলামকেই টার্গেট করে, এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তারা একটি ভীতিপূর্ণ, বেপরোয়া, যুধ্যমান আমেরিকার চেয়ে বড় কিছু চায় না। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা যদি কিছু করে, সেটা হবে উত্তেজিত ও অনভিজ্ঞ প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আরো বেশি প্রতিক্রিয়া উস্কে দিতে, আমেরিকায় আঘাত হানতে আরো জোর প্রচেষ্টা চালানো। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান মিত্ররা যৌক্তিকভাবেই প্রশ্ন করবে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা যেখানে তাদের ধর্মকে নিন্দা করছে, সেখানে তারা কেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা করবে এবং তার প্রতি কেন শ্রদ্ধাশীল হবে? আমেরিকার সামরিক অভিযান সমর্থনকারী আফগান ও ইরাকিরা তাদের দেশে বোমা ফেলার ব্যাপারে যথেষ্ট সাহসী হলেও, তাদের সবচেয়ে দুর্বল স্বদেশবাসীদের এবং সম্ভবত তাদেরও আশ্রয় দিতে অত্যন্ত ভীত সরকারের জন্য বিপুল ঝুঁকি নেওয়াটা ঠিক হচ্ছে কিনা- তা নতুন করে মূল্যায়ন করতেই পারে। নিউইয়র্ক টাইমস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাম্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ